একটি বটগাছের আত্মকথা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি বটগাছের আত্মকথা

ভূমিকা : আমি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। কত যুগ পরিবর্তনের নীরব দর্শক আমি! তােমাদের জীবনের মতাে সংঘাতময় উত্থান-পতন হয়তাে আমার জীবনে নেই। তবে আমার সহ্যশক্তি আর অভিজ্ঞতায় আমি হয়েছি শান্ত, স্থির ও প্রাজ্ঞ । আমি এক বটগাছ। আজও ঝাপসা মনে পড়ে সেই কবেকার ছােটোবেলাকার কথা। মায়ের বৃন্ত থেকে বােধহয় একটি টিয়াপাখি আমাকে ফেলে দিয়েছিল রাস্তার ধারে বােসপুকুরের এই প্রান্তে। তার কয়েকদিন পরে চোখ মেলে দেখেছিলাম এই সুন্দর পৃথিবীকে। পল্লবিত ছােটো ছােটো শাখারা সুর্যের সামনে দৃপ্তভাবে নিজেকে মেলে ধরতে শিখল। ক্রমে আমি বড় হলাম। আমার ছায়ায় শ্রান্ত মানুষ খুঁজে পেল আশ্রয়। কত পথিক, নাম-না-জানা বুড়াে-বুড়ি আমার কাছে এসে বিশ্রাম নেয়। বেশ ভালাে লাগে।

প্রতিদিনের জীবনযাত্রা : আমার বিশাল ছাতার মতাে নিরাপদ আশ্রয়ে কাকের দল বাসা বানিয়েছে। কাঠবেড়ালি দু-বেলা ছুটোছুটি করে আমার ডালে খুঁজে বের করেছে স্বাচ্ছন্দ্যের কোটর। দূর আকাশ থেকে প্রচণ্ড গরমে পরিশ্রান্ত চিল নেমে এসে আমার ডালে বসে। মাঝেমধ্যেই কোকিল এসে গান শুনিয়ে যায়, আর দেখি কাকের বাসা খুঁজতে গিয়ে আমার পাতার মাঝে নিজেকে কেমন লুকিয়ে রাখে। এ ছাড়া যাওয়া-আসার পথে কত পাখি যে আমার গায়ে বসে একটু জিরিয়ে নেয় তার ইয়ত্তা নেই। যেই বর্ষা নামে, আমি পাতাগুলাে মেলে ধরে শ্রাবণ অরণ্যের ঘ্রাণ পেতে চেষ্টা করি। যদিও আমার ফল মানুষ খায় না, কিন্তু পূজাপার্বণে আমার পাতা সংগ্রহ করতে আসে। প্রথম প্রথম পাতা ছিঁড়লে ব্যথা লাগত, রাগও হত খুবই কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি, মনে ভাবি মানুষের কাজে তাে লাগি। এখন গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে আমার চারপাশে একটা বেদি করে দিয়েছে। সেখানে বর্ষায় মানুষ এসে বসে, গরমে গােল হয়ে বসে আড্ডা দেয়, বেশ লাগে। কত গােরু, ছাগল, মােষ এসে আমার ছায়ায় বসে ঝিমােয়। তবে সবচেয়ে আনন্দ হয় আমার ঝুরিগুলি যখন ছােট্ট কচিকাচাদের খেলার দোলনা হয়। ওদের প্রাণের আনন্দে যেন আমি মেতে উঠি। সকাল থেকে বিকেল এভাবেই মানুষের আনাগােনায় আমার দিন কাটে। কখনও মানুষ বা পশুপাখিদের ভিড়ে আমি পূর্ণ, আবার কখনও শূন্য নির্জনতায় একলা চেয়ে দেখি। বিশেষত যখন মন্থর পায়ে সন্ধ্যা নেমে আসে, চিলের ডানা থেকে মুছে যায় রােদুরের গন্ধ, সেই অন্ধকার ফাঁকা রাস্তার ধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। তখন মিটিমিটি নক্ষত্রের নীল ছায়াপথের আলাে আমাকে রূপকথার গল্প শুনিয়ে যায়।

উপসংহার : আজ আমি বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। কালবৈশাখী ঝড় দেখলে মনে কেমন আশঙ্কা জাগে। বাজের শব্দে চমকে উঠি। ভয় হয় রাস্তা তৈরির প্রয়ােজনে মানুষেরা আমায় কেটে টুকরাে টুকরাে করে ফেলবে না তাে! হয়তাে এরকম কোনাে কারণেই আর কয়েক বছরের মধ্যেই আমায় চলে যেতে হবে। তবু যে কটা দিন আছি, আলাে-অন্ধকার ও আনন্দ-বেদনার দোলনায় দোলানাে এ ধরিত্রীকে বড়াে সুন্দর বলে মনে হয়েছে। সহস্র মানুষ-পশুপাখিকে হাওয়ায়, ছায়ায় আগলে ও পৃথিবীকে প্রাণের মায়ায় আঁকড়ে, সার্থক আমার এ জীবন।

আরো পড়ুন

একটি নদীর আত্মকাহিনি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি ভাঙ্গা ছাতার আত্মকথা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি রাজপথের আত্মকথা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রতিযোগিতার সুফল ও সংকট – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মিড-ডে মিল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

5 thoughts on “একটি বটগাছের আত্মকথা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা”

  1. রাস্তার ধারে বোসপুকুরে *এই* প্রান্তে
    এই কথাটির অর্থ কি

    Reply
    • “বোসপুকুরে” বলতে এখানে বোস বাড়ির পুকুরের কথা বলা হয়েছে।

      Reply
    • রাস্তার ধারে একটি পুকুর আছে ।
      তার নামই বস- পুকুর ।
      তার পাশে গাছটি বেড়ে উঠেছে ।

      Reply

Leave a Comment