ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করাে

ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করাে

উত্তর :

ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষা

ইংল্যান্ডে 1948 সালের 30 জুন শিক্ষা সংক্রান্ত একটি আইন পাশ করা হয়। এতে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার বাধ্যতামূলক বয়সটি পরিবর্তন করা হয়। এখানে বলা। হয়, মাধ্যমিক শিক্ষা শুরুর বয়স হবে 103 বছর। তবে অনেকেই এই বয়সের ব্যাপারে। একমত হতে পারেননি।

1) ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য :

944 খ্রিস্টাব্দের শিক্ষা আইনে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয় — কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনে শিক্ষকদের এমন সব নিদের্শনা ও প্রশিক্ষণ। দেওয়া প্রয়ােজন যাতে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে নিজেদের সামর্থ্য ও প্রবণতা অনুযায়ী নানা পর্যায়ে তাদের যথাযথ চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়।

বর্তমানে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলাে কর্মমুখী ও জীবন উপযােগী জ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ। এই লক্ষ্যের আলােকে ইংল্যান্ডের জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলাে—

1) শিশুদের সুন্দর জীবন শুরু করার পরিবেশ উপহার।

2) শিশুদের উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তােলা। 

3) শিশুদের জন্য সমান সুযােগ সৃষ্টি করা। 

4) শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তি ও নৈপুণ্যের চরম বিকাশসাধন করা 

5) শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করা।

6) পরবর্তী উচ্চতর শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা।

2) মাধ্যমিক স্তরের বিন্যাস :

1944 সালে বাটলার অ্যাক্টে বলা হয়—12 বছর বয়সের পর থেকে 19 বছর বয়স পর্যন্ত সিনিয়র শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রয়ােজনীয় শিক্ষাকেই বলা হয় মাধ্যমিক শিক্ষা। বিদ্যালয় শিক্ষার স্তরভাগ বিভিন্নভাবে করা হয়। কোথাও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর একত্রিত, আবার কোথাও দু’টি পৃথক। এখানে দুটি স্তর লক্ষ করা যায়।

(i) দ্বিস্তর ব্যবস্থা : প্রথম স্তর 5-11 বছর বয়সি শিশুদের জন্য (ইনফ্যান্ট 5-7, জুনিয়র 7-11), দ্বিতীয় স্তর 11-16 বা 18 বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের জন্য। বিশেষ কিছু বিদ্যালয়ে বুদ্ধিমান শিক্ষার্থীদের চাহিদার উপযােগী পাঠ্যক্রমের ব্যবস্থা করা। 

(ii) ত্রিস্তর ব্যবস্থা : প্রথম স্তর—প্রাকপ্রাথমিক স্তর (5-8/9) বছর। দ্বিতীয় স্তর প্রাথমিক স্তর (8-9 বছর থেকে 12-13 বছর)। তৃতীয় স্তর—মাধ্যমিক স্তর (12-13 বছর থেকে 16-18 বছর)।

3) মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি :

1965 সালের আগে 11+ বছরের ছেলে-মেয়েরা সারা। দেশে প্রচলিত একটি মেধা পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হলে তবেই গ্রামার স্কুলে ভর্তি হতে পারতাে। কিন্তু 1965 সালের পর এই পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। তার পরিবর্তে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা সমাপ্ত করলেই Comprehensive School-এ সমস্ত শিক্ষার্থীকে 11-16 বছরের পাঠক্রমে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হলাে।

4) বিদ্যালয়ের প্রকারভেদ :

ইংল্যান্ডে মাধ্যমিক শিক্ষাদানের জন্য সাধারণত তিন। ধরনের বিদ্যালয় দেখা যায়। যথা—1) গ্রামার স্কুল, 2) টেকনিক্যাল স্কুল, 3) মডার্ন স্কুল। একইসঙ্গে একই বিদ্যালয়ে এই তিনটি ধারার বিদ্যালয় চালু থাকলে সেই বিদ্যালয়কে বলা হয় কমপ্রিহেনসিভ স্কুল। তবে কে, কোন ধারার বিদ্যালয়ে পড়তে পারবে তা ঠিক করার জন্য বিভিন্ন জাতীয় মেধাভিত্তিক ও স্কুল বিষয়ে জ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই বিদ্যালয়ে পড়ার সুযােগ পায়।

পাঠ্যক্রম :

তিন ধরনের বিদ্যালয়ে তিন ধরনের পাঠ্যক্রম ছিল। যথা –

(ক) গ্রামার স্কুল : এই বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য, ক্লাসিক্যাল ভাষা, আধুনিক ইউরােপীয় ভাষা, বিশুদ্ধ ও ফলিত গণিত, ইতিহাস, ভূগােল, বিজ্ঞান, ধর্মচর্চা, হস্তশিল্প, গৃহশিল্প, নন্দনতত্ত্ব, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি।।

(খ) টেকনিক্যাল স্কুল : এখানে পাঠ্যক্রমে চিত্র ও অঙ্কন শিল্প, সংগীত, বয়নশিল্প, রন্ধনবিদ্যা, বাস্তুবিদ্যা, ইঞ্জিনিয়ারিং, নৌবিদ্যা, বাণিজ্য শাখা, Nursing, পল্লিবিজ্ঞান, গৃহসজ্জা, ইংরেজি বাদে অন্য যেকোনাে একটি আধুনিক ইউরােপীয় ভাষা।

(গ) মডার্ন স্কুল : এই বিদ্যালয়ে সাধারণ বিষয়সমূহ নিয়ে পাঠক্রম, শিল্প সম্বন্ধীয়। শিক্ষা ও সামাজিক, নান্দনিকবােধ জাগ্রত করার শিক্ষা দেওয়া হয়।

5) পরিচালনা ও সংগঠন :

মালটিল্যাটারাল, কমপ্রিহেনসিভ ও সেকেন্ডারি মডার্ন স্কুলগুলি L.E.A-র দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত। ভলান্টরি স্কুলগুলি অল্প অর্থসাহায্য পায় বলে এগুলি H.M.I-এর তত্ত্বাবধান ও অনুমতিসাপেক্ষ। তবে গ্রামার স্কুল ও পাবলিক স্কুল স্বতন্ত্রভাবে চলার কারণে অনেক বেশি স্বাধীন। কাউন্সিল স্কুলগুলিতে 5-16 বছর পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা দেওয়া হয়। পাবলিক ইন্ডিপেনডেন্ট ও প্রাইভেট প্রিপারেটরি স্কুলগুলিতে বেতন অনেক বেশি। তবে এখানে বেতন বেশি হলেও বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষকদের যােগ্যতা ও অন্যান্য শিক্ষাগত সুযােগসুবিধা অন্যান্য বিদ্যালয় থেকে উন্নততর হয়ে থাকে।

6) পরীক্ষা ব্যবস্থা :

ইংল্যান্ডের পরীক্ষা পদ্ধতি অনেকটা প্রথাগত। রচনামূলক প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়। যেমন—(i) ইংল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হলাে eleven plus examination যা স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে থাকে। এই পরীক্ষার মূল বিষয় হলাে বুদ্ধিমত্তা, কৃতিত্ব, ইংরেজি, পাটিগণিত। (ii) মাধ্যমিক শিক্ষার সাধারণ সনদপত্র : ইংল্যান্ডের এই পরীক্ষা শিক্ষাবাের্ড গ্রহণ করে থাকে। জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন সংক্ষেপে GCE পরীক্ষা বলে। এই পরীক্ষা : (ক) অর্ডিনারি লেভেল (O-Level) : অর্ডিনারি লেভেলের পরীক্ষা 16 বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য যারা 5 বছর পর্যন্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে। তাদেরকে A-Level-এ ভর্তিযােগ্য হিসাবে ফলাফল বিবেচনা করা হয়। (খ) অ্যাডভান্স লেভেলের পরীক্ষা ঐসব শিক্ষার্থীদের জন্য যারা O-Level পাশ করে আরও দুই বছর পড়াশােনা সম্পূর্ণ করেছে, তারা A-Level পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। (গ) সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (CSE) পরীক্ষা তিনটি মােডের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়।

7) শিক্ষাদান পদ্ধতি :

ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে ক্লাস শুরু হয় সকাল ৩টা থেকে, শেষ হয় 2:30 মিনিট অথবা 3 PM এবং প্রতি ক্লাসের সময় 40 থেকে 45 মিনিট। পঠন, লিখন এবং গাণিতিক এই পদ্ধতি অবলম্বন করে এখানে শিক্ষাদান করা হয়।

8) শিক্ষক প্রশিক্ষণ :

শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থী ব্যক্তিগত শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবে। এই পর্যায়ে পেশাগত প্রস্তুতি লাভ করবে এবং জাতীয় পর্যায়ে কিছুদিন বিদ্যালয়ে চাকরি করার পর কর্মরত শিক্ষক হিসাবে প্রশিক্ষণে যােগদান করে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment