ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি লেখো | ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষার তুলনাগুলি উল্লেখ করো

ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি লেখো | ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষার তুলনাগুলি উল্লেখ করো

উত্তর : 

ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য : 

ইংল্যান্ডে বিভিন্ন সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য বারবার পরিবর্তিত হয়েছে যদিও কয়েকটি উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত ছিল। সেগুলি হলাে—

  1. শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববােধ সৃষ্টি করা। 
  2. শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তােলা।
  3. শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তি ও নৈপুণ্যের চরম বিকাশসাধন করা। 
  4. শিক্ষার্থীকে শিক্ষামূলক এবং বৃত্তিমূলক নির্দেশদান করা।
  5. কোনাে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবার জন্য সে বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা।
  6. শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত চাহিদা ও সমাজের চাহিদার মধ্যে সুষ্ঠু সামঞ্জস্যবিধান করা।
  7. শিক্ষার্থীদের সকলকে সমান সুযােগদান করা।
  8. শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযােগ করে দেওয়া l

ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষার তুলনা : 

ইংরেজ শাসনকালে ভারতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা ইংরেজ সরকারের ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে। স্বাধীনতার পর ভারতবাসী শিক্ষাকে নিজ এক্তিয়ারভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ইংল্যান্ডে আধুনিক মনােবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাধারার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু ভারতবর্ষ মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক দিক থেকেই ইংল্যান্ডের থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

  1. ইংল্যান্ডের মতাে ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বহুমুখী পরিকল্পনার প্রভাব দেখা যায়। তবে বহুমুখী শিক্ষা পরিকল্পনা ইংল্যান্ডের মতাে ব্যাপক ও এর শ্রেণিবিভাগ সুস্পষ্ট, বিজ্ঞানসম্মত নয়।
  2. পাঠ্যক্রম রচনায় কমিশনগুলি আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ইতিহাস, ভূগােল-এর পরিবর্তে সমাজবিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞানকে শিক্ষাব্যবস্থায় স্থান দেওয়া হয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় থাকা সমস্ত কিছুই UK -এর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে দেখা যায়।
  3. UK-এর মাধ্যমিক শিক্ষাকাল 18 বছর বয়স পর্যন্ত। ভারতে দশম শ্রেণিযুক্ত বিদ্যালয়ে 15-16 বছর বয়স পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা 15 বছরে শেষ হওয়া উচিত বলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাকে 17 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী করার কথা অনেকে বলেছেন।
  4. ইংল্যান্ডে 15 বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামুলক এবং বিনা বেতনে মাধ্যমিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা আছে। ভারতবর্ষে 14 বছর বয়স পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে।
  5. ইংল্যান্ডে মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা, অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, দুরাগত শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা সবকিছুই স্কুলের দায়িত্বে থাকে। এদিক থেকে ভারতবর্ষ অনেক পিছিয়ে।
  6. ভারতবর্ষে মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের দক্ষতা বা শিক্ষণের পরিধি খুবই দুর্বল, ফলে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি তেমন উন্নত নয়। গবেষণাভিত্তিক শিক্ষণ এখানে কল্পনাতীত।
  7. ইংল্যান্ডে দুই ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় দেখা যায়—(i) County School (ii) Volentary County School.
    স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ দ্বারা (L.E.A) এগুলি পরিচালিত। ভারতের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বেসরকারি। সামান্য কিছু স্কুল সরকার দ্বারা পরিচালিত। প্রাদেশিক মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব শিক্ষাবাের্ডের। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠিত কোনাে স্কুল নেই। প্রশাসনিক দিক থেকে এই ত্রিধারা বিভক্ত শাসন ব্যবস্থা স্কুলের পরিচালনার দিক থেকে নানাদিকে অসুবিধার সৃষ্টি করেছে।
  8. ইংল্যান্ডে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডদানের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ভারতবর্ষে মাধ্যমিক ডিগ্রিদানের ব্যবস্থা আছে।
  9. ইংল্যান্ডে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীকে আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তােলা হয়। কিন্তু ভারতবর্ষে এই ব্যবস্থা করা দুরূহ।
  10. ইংল্যান্ডে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহশিক্ষা ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। ভারতবর্ষে ব্যাপক না হলেও এই কার্যাবলির অল্প পরিমাণে প্রচলন রয়েছে।
  11. ভারতবর্ষে মাধ্যমিক শিক্ষার উপযুক্ত ও যথােপযুক্ত বিদ্যালয় নেই। ফলে শিক্ষার সমসুযােগদানের ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ইংল্যান্ডে সকলের মাধ্যমিক শিক্ষালাভের জন্য সমসুযােগের ব্যবস্থা রয়েছে।

উপরিউক্ত আলােচনা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইংল্যান্ডের থেকে ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষা অনেক পিছিয়ে। তবুও বলতে পারি যে বর্তমানে ভারতের মতাে উন্নয়নশীল দেশে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, নৈতিক, সামাজিক ও সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধনই হলাে মাধ্যমিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য। প্রজাতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য উন্নত নাগরিক সৃষ্টি করা, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ তৈরি, উৎপাদনী ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা সৃষ্টি করা এবং সুনেতা তৈরি করা মাধ্যমিক শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ভারতবর্ষের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব গঠনে এবং সমাজের সঙ্গে অভিযােজন ঘটানাের ক্ষেত্রে এবং সমাজ উপযােগী হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment