‘ ফটিক খালাসিদের মতো সুর করিয়া বলিতে লাগিল, এক বাঁও মেলে না, দো বাঁও মেলে-এ-এ না ।—ফটিকের এই উক্তি গল্পে কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আলোচনা করো। MARK 5 | Class 11 Bengali | ছুটি
উত্তর : পল্লিপ্রকৃতির অবাধ ও উন্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা ফটিকের প্রাণপাখি সম্পূর্ণরূপে বাঁধা পড়েছিল পল্লিজীবনের অনাবিল আনন্দের মধ্যে। গ্রামজীবনের মুক্তির আনন্দ ছেড়ে একসময় ফটিক তার মামার সঙ্গে কলকাতার যান্ত্রিক পরিবেশে চলে আসে। মুক্ত পাখি যেন খাঁচায় বন্দি হয়ে যায়। নদীপথে কলকাতায় আসার সময় ফটিক অবাক দৃষ্টিতে দেখেছিল জল মাপার জন্য খালাসিরা সুর করে বলছিল, “এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে –এ–এ না ৷”
কলকাতার বন্দিদশা ফটিকের কাছে আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল মামীর রুষ্ট আচরণে। ফটিক গ্রামে ফিরতে চায়। পল্লির স্বাধীন জীবন তাকে হাতছানি দেয়। ফটিক বুঝতে পারে সে যেন কোথাও ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছে না । কলকাতায় মামার বাড়িতে আসার জন্য যে ফটিক একদিন আনন্দে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল, সেই-ই আবার গ্রামে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই কাউকে কিছু না-জানিয়ে ঝড়জলের রাতে একা বেরিয়ে পড়ে, ‘পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না।’ পুলিশের গাড়ি যখন তাকে আবার মামার বাড়ি পৌঁছে দেয় সে যেন শহরের যান্ত্রিকতার, নিষ্ঠুরতার প্রতি প্রতিবাদ জানাতেই ঘোর প্রলাপে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। মুমূর্ষু অবস্থায় তার প্রলাপের ভাষা হয়ে ওঠে মাঝিদের মুখ থেকে শোনা সেই কথাগুলি, “ফটিক প্রলাপে তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে, বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না।” যে ভবসমুদ্রে ফটিক পাড়ি দিতে চলেছে সে সমুদ্রের জল অতলান্ত, কাছি দিয়ে তার পরিমাপ করা যায় না। তাই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে চির ‘ছুটি’ চায় ফটিক।
Read Also
‘ তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই ।—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
“ তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন । – কে, কার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কী?
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।