গ্রীসে নগররাষ্ট্র বা পলিসগুলির উদ্ভবের কারণগুলি উল্লেখ করো। পলিসগুলির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলােচনা করো।

গ্রীসে নগররাষ্ট্র বা পলিসগুলির উদ্ভবের কারণগুলি উল্লেখ করো। পলিসগুলির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলােচনা করো। (৪+৪=৮ নম্বরের প্রশ্ন)

উত্তর:

গ্রিক পলিসগুলির উদ্ভবের কারণ: খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে চতুর্থ শতকে গ্রিসের ধ্রুপদী যুগে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্রগুলির উদ্ভব হয়। এই নগর-রাষ্ট্রগুলিকে ‘City state’ বা পলিস বলা হয়। | এই পলিসের উদ্ভবের পিছনে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল –

(ক) ভৌগােলিক কারণ: গ্রিসের ভূখণ্ড পাহাড়-পর্বত ও সাগরের দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। যােগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। এর ফলে এক একটি দ্বীপে স্বাধীন ও সার্বভৌম পলিস গড়ে ওঠে। গ্রিসের এই ভৌগােলিক বিছিন্নতা পলিসগুলি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল। 

(খ) অর্থনৈতিক কারণ: পলিসগুলি উদ্ভবের পেছনে অর্থনীতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপলিসের মত বাজার সৃষ্টি, উৎপাদন ক্ষমতার বৃদ্ধি প্রভৃতিও হতে লাগল। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব বাজার অর্থনীতি গড়ে উঠল, যা পরবর্তীতে নগররাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

(গ) শক্তিশালী শাসকের অনুপস্থিতি: ডােরিয়ান বিজয়ের পরবর্তীকালে গ্রীসে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তারই অন্যতম ফসল ছিল পলিসগুলির উদ্ভব। কোন শক্তিশালী শাসক না থাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে জনপদগুলি বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের নিজস্ব শাসন পরিকাঠামাে তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে পলিস বা ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে।

(ঘ) সামরিক কারণ: পলিশ গুলির উদ্ভবের পেছনে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি সামরিক কারণও বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। ডােরীয় আক্রমণে বিধ্বস্ত গৃহবাসী স্থানীয় সুরক্ষিত সামরিক কেন্দ্রের প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করতে থাকে। যা থেকে পাহাড়ের উচু সংরক্ষিত স্থানগুলিতে তারা দুর্গ গড়ে তােলে। যেগুলি পরবর্তীতে জনগণের মিলনকেন্দ্র, ধর্মীয় কেন্দ্র তথা শক্তিশালী সামরিক কেন্দ্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে।

গ্রিক ঐতিহ্য: গ্রিকরা ছিল অত্যন্ত স্বাধীনতাপ্রিয় ও স্বতন্ত্র অস্তিত্বে বিশ্বাসী। তারা স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচার বুঝত না। তাদের মতে স্বাধীনতা হল একটি সম্প্রদায়ের সুনিয়ন্ত্রিত অস্থিত্ব। ছােট ছােট নগররাষ্ট্রকে তারা সমর্থন করত। তাদের মতে ছােট রাষ্ট্র হল স্বাধীনতা প্রতীক। বড়াে রাষ্ট্রকে তারা পছন্দ করত না। তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্র বা পলিসগুলি গড়ে ওঠে।

পলিসের বৈশিষ্ট্য: গ্রীসের নগররাষ্ট্র বা পলিসগুলির বেশ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল :—

(ক) রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: প্রতিটি পলিসের নিজস্ব শাসন পরিকাঠামাে ছিল। সমবেতভাবে তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিত। শাসনকার্যে প্রতিটি নাগরিক অংশগ্রহণ করতে পারতাে। যদিও কোথাও গণতান্ত্রিক শাসন পরিকাঠামাে ছিল আবার কোথাও রাজতান্ত্রিক তথা অভিজাততান্ত্রিক প্রশাসনিক পরিকাঠামাে ছিল। সুতরাং প্রতিটি পলিসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল কেন্দ্রীভূত স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা।

(খ) নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা: অল্প জনসংখ্যা পলিসগুলির আর একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। আয়তন ছােট হওয়ার জন্য জনসংখ্যাও ছিল খুবই কম। অ্যাটিকা, এথেন্স গিরাকিউজের মতাে বড় পলিসের জনসংখ্যা বেশি হলেও অধিকাংশ পলিসের জনসংখ্যা ছিল ৫ হাজারের কম।

(গ) শ্রেণীবৈষম্যমুক্ত সমাজব্যবস্থা: প্রতিটি পলিসে যে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তা ছিল বৈষম্য মুক্ত। সেই অর্থে নারীদের অধিকার যেমন সংকুচিত ছিল তেমনি ধনী-দরিদ্র বৈষম্য প্রকট ছিল। দাসব্যবস্থার অস্তিত্ব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। যদিও রাজা সােলান এই বৈষম্য দূরীকরণে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

(ঘ) অর্থনৈতিক বৈষম্য: পলিসগুলির অন্যতম বৈষম্য ছিল উৎপাদন ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবিকানির্বাহ, কৃষি-শিল্প প্রভৃতিতে। এককথায় প্রতিটি পলিসের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট ছিল। যেমন: স্পার্টার অর্থনীতি কৃষি ও মন্দিরের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু করিন্থ ও মিলেটাসের অর্থনীতি ছিল শিল্প ও বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল।

(ঙ) প্রশাসনিক পরিকাঠামাে: পলিসগুলি উদ্ভবের প্রারম্ভিক পর্বে বংশানুক্রমিক রাজতান্ত্রিক প্রথা থাকলেও পরবর্তীতে এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামাে গড়ে ওঠে। যেখানে সমিতি, পরিষদ ও ম্যাজিস্ট্রেট এর মতাে তিনটি অংশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

(চ) ধর্মীয় ক্রিয়া-কলাপ: গ্রিকপলিসগুলির আর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল নাগরিকদের ধর্মভাবনা ও বিভিন্ন দেবদেবীর আরাধনা। পলিসবাসী ঈশ্বরের অস্তিত্বে ও ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিল। জিউস, অ্যাপােলাে, পডিসনের পাশাপাশি হেরা, এথেনা প্রমুখ দেবীরও তারা আরাধনা করত।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment