উত্তর – জ্ঞানচক্ষু গল্পের বালক তপনের গল্পটি ছােটো মেসাে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলে তপন প্রথমে আনন্দে বিহুল হয়ে যায় এবং সে মনে করেছিল আজকে তার সব চেয়ে সুখের দিন। কিন্তু পত্রিকায় ছাপানাে গল্পটি পড়ে তপন অবাক হয়ে যায় এবং বুঝতে পারে গল্পটি ছােটো মেসাে সম্পূর্ণ কারেকশান করে বদলে ফেলেছেন। আত্মসম্মানে আহত তপনের কাছে দুঃখের। সে সংকল্প করে— “যদি কখনাে লেখা ছাপতে দেয় তাে তপন নিজে গিয়ে দেবে। নিজের কাঁচা লেখা, ছাপা হয় তােক, না হয় না তােক।” রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক বাংলা ছােটো গল্পের অন্যতম প্রধান লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু গল্পে তপনের ছােটোমেসাের প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে। লেখিকার তুলির আঁচড়ে ছােটোমেশাের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা নিম্নরূপ —
(ক) অধ্যাপক ও লেখক মেসাে : তপনের ছােটোমেসাের গরম ছুটি কাটাতে তপনের মামার বাড়িতে তথা মেসাের শ্বশুরবাড়ি এসে কদিন থেকে গেছেন, তিনি একজন অধ্যাপক ও লেখক। বিভিন্ন নামী-দামী পত্রিকায় তার লেখা বের হয়েছে। এমনকি তিনি কয়েকখানা বইও বের করেছেন।
(খ) লেখক হয়েও সাধারণ : তপনের ছােটোমেসাে লেখক হয়েও সহজ-সরল সাধারণ মানুষ। খবরের কাগজ নিয়ে গল্প করা, তর্ক করা, সেজেগুজে সিনেমা দেখতে যাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়ার তুলে দেওয়া, দাঁড়ি কামানাে, চান করা, ঘুমানাে প্রভৃতি আচরণ তার সহজ সরল জীবনের ইঙ্গিত দেয়।।
(গ) নিরহঙ্কারী লেখক মেসাে : তপনের মেসসা একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হয়েও নিরহঙ্কারী। তিনি কচি-কাচা হবু লেখকদের অবজ্ঞা করেন না বরঞ উৎসাহিত করেন। তপনের প্রতি তাঁর উক্তি এই সত্যতা প্রমাণ করে – “একটু কারেকশান করে ইয়ে করে দিলে ছাপতে দেওয়া চলে।” |
(ঘ) স্ত্রী অনুরক্ত : তপনের মেসাে করুণাশীল ও স্ত্রী অনুরক্ত। তিনি স্ত্রীর ভালােবাসার দাবী স্বীকার করে নিতে কুণ্ঠাবােধ করেন না।
“তা হলে বাপু তুমি ওর গল্পটা ছাপিয়ে দিও / মেসসার উপযুক্ত কাজ হবে সেটা।” “তা দেওয়া যায়। আমি বললে ‘সন্ধ্যাতারা সম্পাদক ‘না’ করতে পারবে না।”
উপরিউক্ত মন্তব্যটি লেখক মেসাের সহৃদয়তার পরিচায়ক।
(ঙ) তপনের ছােটোমেসাে
একজন লেখক সমালােচকও বটে। তপনের গল্প নিয়ে যখন সবাই ঠাট্টা তামাশা করেছে তখন তপনের মেসসার উক্তি তাঁর বিশ্লেষণী ক্ষমতাকে তুলে ধরেন –
“না-না আমি বলছিলাম – তপনের হাত আছে চোখও আছে …. এটা খুব ভালাে। ওর হবে।”
(চ) তপনের মেসাে প্রগলভ নন। তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন। প্রতিশ্রুতি মতাে তিনি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তপনের নামে গল্প ছাপিয়ে তপনকে খুশি করার জন্য সস্ত্রীক ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা হাতে তপনের বাড়িতে হাজির হন।
(ছ) তপনের মেসাে অহংকারী না হলেও প্রশংসালােভী। তিনি তপনকে একশােভাগ প্রশংসা কুড়ােতে দেননি। তাই মৃদু হাসি হেসে গৌরবান্বিত হয়ে বলেন – “একটু আধটু কারেকশান করতে হয়েছে অবশ্য। নেহাত কাঁচা তাে?” | উপরিউক্ত আলােচনার মধ্য দিয়ে তপনের ছােটোমেসাের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। লেখিকা চরিত্র অঙ্কনের সাথে সাথে মেসাের চরিত্রটিকেও ফুটিয়ে তুলছেন।
Read Also
জ্ঞানচক্ষু’ অবলম্বনে তপন চরিত্রটি বিশ্লেষণ করাে।
জ্ঞানচক্ষু গল্পে মেসােমশাইয়ের চরিত্র আলােচনা করাে।
পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে – অলৌকিক ঘটনাটি কী? একে অলৌকিক বলার কারণ কী?
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।