ইনটারনেট এবং আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট এবং আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট এবং আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র

উত্তর:

ইনটারনেট এবং আধুনিক জীবন

ভুমিকা: ইনটারনেট হল ঘরের মধ্যে বসে বিশ্বের জ্ঞান সাম্রাজ্যের সহজ উন্মােচন। মাউসে হাত দিয়ে মানুষের এক লহমায় আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার দীক্ষা। কম্পিউটারের হাত ধরে এই বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা তথ্যের অনন্ত ভাণ্ডারকে যেমন উন্মুক্ত করে দেয়, তেমনই বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধন করে। 

আবিষ্কার: ‘ইনটারকানেকটেড নেটওয়ার্ক’ শব্দ দুটিকে একত্রিত করে ইনটারনেট শব্দটির উৎপত্তি। ইনটারনেট আসলে পরস্পর সংযুক্ত অনেকগুলি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমন্বয়। একটি বিশেষ সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজার-এর সাহায্যে ইনটারনেটের দুনিয়ায় প্রবেশ করা যায়। এই নেটের দুনিয়াকে তৈরি করেছে নানা বিষয়ের অজস্র ওয়েবসাইট। প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট আবার অনেকগুলি ওয়েব পেজের সমন্বয়-বিশেষ। 

ব্যবহারিক দিক: ইনটারনেট ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কম্পিউটারের মাধ্যমে যােগাযােগ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করাই ছিল এর লক্ষ্য। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর সেই নেটওয়ার্কের নাম দিয়েছিল আর্পানেট (Arpanet), যার পুরাে নাম ছিল অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রােজেক্ট আডমিনিস্ট্রেশন নেটওয়ার্ক। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন নেটওয়ার্ক নামে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল—এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থাকে সুপার কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এভাবেই ইনটারনেটের প্রসার ঘটে। 

সুবিধা: ইনটারনেট বিভিন্ন সংস্থা বা তার কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় তৈরিতে সাহায্য করে। ইনটারনেট যােগাযােগের এক শক্তিশালী মাধ্যম। ই-মেল বা বৈদ্যুতিক ডাক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে ইনটারনেটের মাধ্যমেই কোনাে চিঠি বা খবরকে পৃথিবীর দুরতম প্রান্তেও পৌঁছে দেওয়া যায় মুহুর্তের মধ্যে। প্রশাসনিক কাজে ইনটারনেটকে ব্যবহার করে ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ইনটারনেটের সাহায্যেই গড়ে উঠেছে অনলাইন ট্রেডিং, ব্যাঙ্কিং, বিল পেমেন্ট ইত্যাদি নানা ব্যবস্থা। ঘরে বসে সম্ভব হচ্ছে ট্রেন বা প্লেনের টিকিট কাটা বা তাদের সাম্প্রতিকতম তথ্য পাওয়া। রােজ খবরের কাগজ না কিনে ঘরে বসেই পড়ে নেওয়া যায় তাদের ইনটারনেট সংস্করণ, একইভাবে পড়ে নেওয়া যায় পছন্দের বইটিকেও। পছন্দের সিনেমা বা যে-কোনাে গানকে অনায়াসে হাতের মুঠোয় এনে দেয় ইনটারনেট। এইভাবে আলাদিনের প্রদীপের মতােই ইনটারনেট উন্মােচন করে দেয় স্বপ্ন কল্পনার এক অসম্ভবের রাজত্ব। 

অসুবিধা: অজস্র ভালাে দিকের পাশাপাশি ইনটারনেটের কিছু খারাপ দিকও আছে। অজস্র কুরুচিকর সাইট ইনটারনেটের দৌলতে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বয়ঃসন্ধিকালে এগুলি সহজেই কিশাের মনকে আকৃষ্ট করে, যা সমাজে অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করে। একইভাবে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রও সক্রিয় হয়। হ্যাকিং-এর সাহায্যে ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নেওয়া হয়, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ বা সন্ত্রাস ঘটাতে সাহায্য করে। ইনটারনেট একধরনের আসক্তি তৈরি করে, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশােনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

উপসংহার: ইনটারনেটের বিরুদ্ধে যাই বলা হােক না কেন, আধুনিক পৃথিবীতে মনােগত বা মননগত আধুনিকতার শ্রেষ্ঠ প্রেক্ষিত এই ইনটারনেটই রচনা করেছে। সামাজিক শুভবুদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তি-সহ কিছু বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে এই আন্তর্জাতিক সংযােগ ব্যবস্থাটিকে নিষ্কলুষ এবং ত্রুটিমুক্ত করে তােলার দায়িত্ব এই মানববিশ্বকেই নিতে হবে।

আরো পড়ুন

ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মানবধর্ম – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলার উৎসব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment