জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায় কেন বিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃৎ?

জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায় কেন বিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃৎ? ৩+৫ | Class 10

উত্তর: উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ ও বিংশ শতকের সূচনায় বাঙালীর বিজ্ঞান সাধনা ও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে দুইজন বিখ্যাত পথিকৃৎ ছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খ্রি.) ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (১৮৬১-১৯৪৪ খ্রি.)।

জগদীশচন্দ্র বসু : জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে, পদার্থবিদ্যা বি এ; ট্রাইপস ডিগ্রি ও বি এসসি পাশ করেন। 

অধ্যাপনা ও গবেষণা : ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকরূপে যােগদান করেন। (১৮৮৫ খ্রি.)। এই কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি কলেজের মাত্র ২৪ বর্গফুট ঘরেই বিজ্ঞান গবেষণাও করতে থাকেন। তার গবেষণার তিনটি পর্যায় ছিল—প্রথম পর্যায়ে তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ সম্পর্কে গবেষণা করেন ও বেতার যন্ত্র আবিষ্কার করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত গবেষণা করেন এবং তৃতীয় পর্যায়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী সংক্রান্ত গবেষণা করেন। তিনি উদ্ভিদের স্নায়বিক ক্রিয়াকলাপ ও বৃদ্ধি মাপার জন্য ক্রেস্কোগ্রাফ’ নামক একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণের পর জগদীশচন্দ্র বসু। তার বাড়িতেই ছােটো গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করে গবেষণার কাজ শুরু করেন। এর পাশাপাশি তিনি তাঁর নিজের ও দেশের স্বার্থে একটি বৃহৎ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন। শেষপর্যন্ত তার “স্ব অর্থ ও সংগৃহীত ১১ লাখ টাকা অনুদানের অর্থে কলকাতায় এতষ্ঠা করেন বসু বিজ্ঞান মন্দির’ (২৩ নভেম্বর, ১৯১৭)।

প্রফুল্লচন্দ্র রায় : বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রফুল্লচন্দ্র রায়। তিনি তার গ্রামের স্কুল, কলকাতার হেয়ার স্কুল ও মেট্রোপলিটান কলেজে পড়াশুনা করেন এবং ইংল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় বি। এসসি ডিগ্রি ও উচ্চতর গবেষণা শেষ করে (১৮৬৭ খ্রি.) দেশে ফিরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন (১৮৮৯ খ্রি.)।

অধ্যাপনা ও গবেষণা : কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপনার পাশাপাশি

প্রথমত, রসায়ন শাস্ত্রের ওপর গবেষণা শুরু করেন। তিনি ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে মারকুরিয়াস নাইট্রেট’এর রাসায়নিক গঠন, বিভিন্ন ধাতু সংক্রান্ত গবেষণা করেন।

দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণের (১৯১৬ খ্রি.) পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যাপনা শুরু করেন। এখানে স্বর্ণ, প্ল্যাটিনাম, ইরিডিয়াম ও অর্গানিক সালফেটের ওপর গবেষণা করেন এবং এগুলি ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সােসাইটি’-র জার্নালে প্রকাশিত হয়। তার ছাত্রদের মধ্যে প্রিয়দারঞ্জন রায়, জ্ঞানচন্দ্র ঘােষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখার্জি প্রমুখ রসায়নশাস্ত্রে গবেষণায় কৃতিত্ব দেখান।

তৃতীয়ত, প্রফুল্লচন্দ্র রায় ভারতে রাসায়নিক দ্রব্য ও ওষুধ প্রস্তুতের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কাস লিমিটেড’ নামক কারখানা এবং রচনা করেন ভারতের রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস (History of Hindu Chemistry) নামক গ্রন্থ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment