জানার জন্য শিক্ষা” কাকে বলে? জানার জন্য শিক্ষার তাৎপর্য উল্লেখ করাে। 1+3 অথবা, ‘জানার জন্য শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 4 Marks
উত্তর:-
জানার জন্য শিক্ষা : ‘জানার জন্য শিক্ষা’ বলতে সেই শিখন প্রক্রিয়াকে বােঝায় যা শিক্ষার্থীকে বিশ্বজগতের নানান বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সহায়তা করে। জ্ঞান যেকোনাে মানুষকে বিকাশের পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। শিক্ষার প্রথম উদ্দেশ্যই হল শিক্ষার্থীকে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা। অনেকের মতে, জানতে চাওয়া বা জ্ঞানার্জন মানে কেবল সুসংগঠিত জ্ঞান আহরণই নয়, বরং জ্ঞান আরহণের কৌশল ও পদ্ধতিগুলিকেও সঠিকভাবে আয়ত্ত করা।
আধুনিক শিক্ষাবিদ স্ব-শিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। তাঁরা বলেন যে, প্রতিটি ব্যক্তিকে কীভাবে শিখতে হয়, সে সম্পর্কে জ্ঞাত করা হল জানার জন্য শিক্ষার একটি বিশেষ দিক।
জানার জন্য শিক্ষার তাৎপর্য : ‘জ্ঞান অর্জন’ শিক্ষার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে জ্ঞানার্জনের তাৎপর্য নীচে আলােচনা করা হল—
[1] জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাবিদদের বক্তব্য : সব দেশের মহান শিক্ষাবিদরা সর্বকালের শিক্ষাদর্শন আলােচনা করতে গিয়ে জ্ঞানার্জনের কথা বলেছেন।
প্রাচীনকালের শিক্ষার লক্ষ্য ছিল আত্মােপলদ্ধি। আর এই আত্মােপলদ্ধির জন্য প্রয়ােজন হল জ্ঞান। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর শিক্ষাচিন্তায় ব্যক্তির সম্ভাবনার ওপর অগাধ আস্থার কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্যক্তির মধ্যেই জ্ঞান বিদ্যমান | শিক্ষার কাজ হল সেই জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানাে।
[2] জ্ঞানার্জন ও শিক্ষার অন্যান্য উদ্দেশ্য : প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার অন্যান্য উদ্দেশ্যপূরণে (যেমন-কর্মের জন্য শিক্ষা, একত্রে বেঁচে থাকার শিক্ষা, মানুষ হওয়ার শিক্ষা) আবশ্যিক উপাদান হল জ্ঞান অর্জন বা জ্ঞানলাভ। এর মধ্যে দিয়েই ব্যক্তি কর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন হয়, কর্মে প্রবৃত্ত হয় এবং কর্মের উন্নতিসাধনে সক্ষম হয়। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই ব্যক্তি একত্রে বেঁচে থাকার সুবিধা, সার্থকতা ও প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয় ও তার জন্য ক্রয় হয়।
[3] জ্ঞানার্জন ও অভিযােজন: শিক্ষা হল অভিযােজন | জৈবিক, প্রাকৃতিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক প্রভৃতি বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে অভিযােজনের জন্য প্রয়ােজন পরিবেশ সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞান অর্জন। পরিবেশের উপাদানগুলি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানলে সার্থক অভিযােজন সম্ভব নয়।
[4] জ্ঞানার্জন ও পরিবর্তনশীল বিশ্ব : প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন এবং নতুন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য, মানবজাতির কাছে জ্ঞানার্জনের শিক্ষাগত তাৎপর্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আমরা যদি নতুন বিশ্বের সঙ্গে পরিচিত না হই তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব।
[5] জ্ঞানার্জন ও মানসিক বৈশিষ্ট্য : বিভিন্ন সামাজিক জ্ঞানার্জনের ফলে ব্যক্তির মানসিক প্রক্রিয়াগুলি, যেমন— স্মৃতি, যুক্তি নির্ণয়, বিচারবােধ, সংবেদন, প্রত্যক্ষল, বুদ্ধি ইত্যাদির বিকাশ ও অনুশীলন হয়।
[6] জ্ঞান আহরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি : ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জ্ঞানার্জনের ফলেই সম্ভব হয়। জ্ঞানের অভাবে মানুষ ধর্মান্ধ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অন্ধবিশ্বাসে আক্রান্ত হয়। জ্ঞানই মানুষের সঠিক ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তােলে।
[7] জ্ঞান ও আত্মপ্রত্যয়: জ্ঞান ব্যক্তির আত্মপ্রত্যয় বৃদ্ধি করে আত্মবিশ্বাসী করে তােলে। আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি যে-কোনাে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে দ্বিধাবােধ করে না। যে-কোনাে অবস্থায় মতামত ব্যক্ত করতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
[8] জ্ঞানের প্রসার : জ্ঞান ব্যক্তিকে আরও জ্ঞান অর্জনের প্রেরণা দেয়, জ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করতে উৎসাহ জোগায়।
ওপরের আলােচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, জ্ঞান শিক্ষার অন্যান্য উদ্দেশ্যপূরণ করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন পরিবেশে সার্থক অভিযােজনের ক্ষেত্রে জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক শক্তিগুলির অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞান তাদের বিকাশ ঘটায় এবং পরিবর্তনশীল বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের অবহিত হতে সাহায্য করে ৷ জ্ঞান এই পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকগুলিকে যেমন ব্যবহার করে, তেমনই এর ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে ব্যক্তিকে সচেতন করে তার মােকাবিলায় প্রস্তুত করে ৷
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।