জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) এবং রামমূর্তি কমিটি (1990) পর্যালােচনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদের জনার্দন রেডি কমিটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে। 

জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) এবং রামমূর্তি কমিটি (1990), পর্যালােচনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদের জনার্দন রেডি কমিটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে। 
অথবা, 1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির সংশােধিত রুপটি কী ছিল? 
অথবা, 1986 সালের (1992-এ পুনর্বিবেচিত) জাতীয় শিক্ষানীতির নতুন পরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা, POA-1992 বলতে কী বােঝ? এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলাে উল্লেখ করাে।   Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

জর্নাদন রেড্ডি কমিটির সুপারিশ 1986-র জাতীয় শিক্ষানীতির সংশােধিত রূপ/POA-1992 :  জাতীয় শিক্ষানীতির (1986 খ্রি.) মূল্যায়নের জন্য 1990 খ্রিস্টাব্দে রামমূর্তি কমিটি গঠন করা হয়। রামমূর্তি কমিটির সুপারিশ এবং জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশগুলি পর্যালােচনা করার জন্য জনার্দন কমিটির ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। জনার্দন রেড্ডি কমিটি 1992 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনে। পরিবর্তিত শিক্ষানীতিটিই প্রােগ্রাম অব অ্যাকশন, সংক্ষেপে POA নামে পরিচিত। রেডিড কমিটি POA-তে যেসব সুপারিশগুলি করে, তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উল্লেখ করা হল— 

[1] শিক্ষার কাঠামাে: সারা দেশে শিক্ষার কাঠামাে হবে 10+2+3 | 10 বছরের শিক্ষার মধ্যে 5 বছরের শিক্ষা হবে নিম্নপ্রাথমিক, 3 বছরের শিক্ষা হবে উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তর হবে 2 বছরের, উচ্চমাধ্যমিক স্তর হবে 2 বছরের এবং উচ্চশিক্ষা স্তর হবে 3 বছরের। 

[2] প্রাথমিক শিক্ষা: প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি হল— 

i. 14 বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর জন্য সর্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

ii. বিদ্যালয়-ছুট সমস্যাসমাধানের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির মধ্যে বিদ্যালয় ছুটের সংখ্যা 20%-এ কমিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে পিতা-মাতাদের সচেতন করতে হবে ৷ 

iii. প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষার (Minimum Level Learning বা MLL) মান নির্দিষ্ট করতে হবে। 

iv. প্রাথমিক শিক্ষার জন্য জাতীয় স্তরে একই পাঠক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। ওই পাঠক্রমের দায়িত্বে থাকবে NCERT |

V. প্রতি দুটি নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি করে উচ্চগ্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। 

[3] মাধ্যমিক শিক্ষা :

i. উত্তম সাজসরঞ্জাম দিয়ে নবােদয় বিদ্যালয় তৈরি করা না গেলে গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলিকে নবােদয় বিদ্যালয়ে পরিণত করতে হবে। 

ii. প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়ােজনীয় শিক্ষক ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে। 

iii. অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

iv. প্রতিভাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়ােজন।

v. পরীক্ষাপদ্ধতি ও মূল্যায়নকে আরও বেশি নৈর্ব্যক্তিক করতে হবে। 

vi. কোঠারি কমিশনে উল্লিখিত সাধারণ বিদ্যালয় ব্যবস্থাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। 

vii. যারা অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল তাদের জন্য নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

viii. বিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পরিদর্শন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে | 

ix. মাধ্যমিক স্তরের ইতিহাসকে জাতীয় স্তরের প্রেক্ষিতে তুলে ধরতে হবে। 

x. মাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ডের পুনর্গঠন ও তাদের স্বশাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের সুযােগ ঘটে।

xi. মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষার সুযােগ দিতে হবে, যাতে তারা কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে ওঠে এবং উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। 

[4] উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা :

i. জাতীয় পাঠক্রম রচনা এবং তার ভিত্তিতে পাঠদান প্যাকেজের ব্যবস্থা করতে হবে। 

ii. এই শিক্ষাকে সাধারণ বিদ্যালয় ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে হবে | 

[5] উচ্চশিক্ষা :

i. উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামােগত উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। 

ii. স্বয়ংশাসিত কলেজ স্থাপন করতে হবে।  

iii. কলেজের পরিকাঠামাে অনুযায়ী ছাত্র ভরতির সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। 

iv. উন্নতমানের গবেষণার ব্যবস্থা করতে হবে। 

v. মুক্তশিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। 

[6] বৃত্তিগত শিক্ষা : 

i. 1995 সালের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে 10% এবং 2000 সালের মধ্যে 25% ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তিশিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে | 

ii. পরিকল্পিত বৃত্তিমুখী শিক্ষা চালু করা দরকার। সাধারণ শিক্ষার বিদ্যালয়গুলিতে বৃত্তিশিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য উন্নত ব্যবস্থাগ্রহণের চিন্তা করতে হবে ৷ 

iii. বৃত্তিশিক্ষার পর শিক্ষার্থীরা যাতে চাকরি পায় বা স্বনিযুক্ত প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, তার ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন। 

[7] প্ৰথাবহির্ভূত শিক্ষা :

i. বিদ্যালয়-ছুট, কর্মরত শিশু এবং যেসব মেয়েরা প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না, তাদের জন্য প্রথাবহির্ভুত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ii. প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার জন্য উন্নতমানের শিক্ষা-উপকরণ, আগ্রহী ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নির্বাচন, প্রথাবহির্ভুত শিক্ষার শেষে শিক্ষার্থীকে প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা, উভয় শিক্ষাব্যবস্থার সমমান ইত্যাদির প্রতি নজর দিতে হবে। 

iii. প্রথাবিহির্ভূত শিক্ষা প্রসারে পঞ্চায়েত ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

iv. প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। 

বিভিন্ন শিক্ষার স্তর ও বিভিন্ন প্রকৃতির শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সুপারিশগুলি ছাড়াও আরও কতকগুলি সুপারিশ উল্লেখ করা যায়। যেমন—

i. শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাের্ডের ভূমিকার পরিবর্তন। 

ii. সমস্ত স্তরের শিক্ষার পাঠমের আধুনিকীকরণ | 

iii. সমস্ত স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিকতার বিকাশ ঘটানাে।

iv. প্রতিটি রাজ্য সরকার যাতে ‘ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস’ গঠন করে, তার ব্যবস্থা করা। 

ওপরের বিষয়গুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জনার্দন কমিটি 1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে। বাস্তবায়িত করার সুপারিশ করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment