জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) ক-টি অধ্যায়ে বিভক্ত? প্রতিটি অধ্যায়ে মূল আলােচ্য বিষয়গুলি উল্লেখ করাে। অথবা, জাতীয় শিক্ষানীতি 1986-এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:
জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)র অধ্যায়সমূহ
1986 সালের 21 এপ্রিল প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষানীতিটি মােট বারােটি অধ্যায়ে বিভক্ত। জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)র অধ্যাখাভিত্তিক আলােচ্য বিষয় 1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির প্রথম থেকে দ্বাদশ অধ্যায় পর্যন্ত প্রধান আলােচিত বিষয়গুলি সম্পর্কে নীচে উল্লেখ করা হল।
[1] প্রথম অধ্যায়: প্রথম অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘ভূমিকা । এই অংশে শিক্ষানীতি বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার নীতি নির্ধারণের প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। 1968 সালের শিক্ষানীতি ও তার ফলশ্রুতি সম্পর্কে এই অধ্যায়ে। আলােচিত হয়েছে। আলােচনার বিষয়গুলি হল— i. 1968 সালের। শিক্ষানীতির সাফল্য, ii. 1968 সালের শিক্ষানীতি রূপায়ণে ব্যর্থতা, iii. আগামী দিনের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা এবং নতুন শিক্ষানীতি গ্রহণ।
[2] দ্বিতীয় অধ্যায়: দ্বিতীয় অধ্যায়ে শিক্ষার উপাদান ও ভূমিকা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—. i. শিক্ষা হবে সকলের জন্য, ii. শিক্ষা হবে সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের হাতিয়ার, iii. শিক্ষার কাজ হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় সংহতি গড়ে তােলা এবং বিজ্ঞানমনস্ক হতে সাহায্য করা, iv. শিক্ষার্থীদের মনের স্বাধীনতা আনতে এবং সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করতে শিক্ষা সহায়ক হবে, v. শিক্ষা মানবশক্তির বিকাশ ঘটিয়ে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সচেষ্ট হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির মূল ভিত্তি হল শিক্ষাকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য এক বিশেষ বিনিয়ােগ হিসেবে বিবেচনা করা।
[3] তৃতীয় অধ্যায়: তৃতীয় অধ্যায়ে জাতীয় ব্যবস্থায় শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হল একটা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত জাতিধর্মবর্ণ, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সমান সুযােগের কথা বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আলােচিত বিষয়গুলি হল— i. সাধারণ শিক্ষা কাঠামাে, ii. কোর পাঠক্ৰম-সহ জাতীয় পাঠক্রম, iii. ভাষানীতি, iv. উচ্চশিক্ষার সর্বজনীনতা, v. সম্পদের জোগান, vi. মুক্তশিক্ষা ও দূরশিক্ষার বিকাশসাধন, vii. জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা, viii. অসম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব।
[4] চতুর্থ অধ্যায়: চতুর্থ অধ্যায়ে সাম্যের জন্য শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এখানে আলােচ্য বিষয়টি হল তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, নারী, সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের শিক্ষা।
[5] পঞ্চম অধ্যায়: পঞ্চম অধ্যায়ে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। যেমন—
i. শিশুর সামাজিক বিকাশের দিকে লক্ষ রেখে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, সামাজিক, মানসিক, শারীরিক, নৈতিক, প্রাক্ষোভিক উন্নয়ন ইত্যাদি। মৌলিক বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাক-শৈশব শিশুকল্যাণ ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ii. জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে আলােচনায় সর্বজনীন | শিক্ষা, শিশুকেন্দ্রিকতা, বিদ্যালয়ের সুযােগ ও বিধিমুক্ত শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
iii. মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে আলােচনায় মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা, প্রসার এবং গুণগত মানের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। বৃত্তিমুখী কোর্স এমনভাবে করা হবে যাতে করে অষ্টম শ্রেণির পরেই এগুলি গ্রহণ করা যায়।
iv. জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষার প্রসার অপেক্ষা গুণগত মানের ওপর
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেবল যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাই এই | শিক্ষায় ভরতি হওয়ার সুযােগ পাবে৷ ডিগ্রি থেকে চাকরিকে বিচ্ছিন্ন করে নির্বাচনি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থা উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করবে।
[6] ষষ্ঠ অধ্যায় : ষষ্ঠ অধ্যায়ে কারিগরি ও পরিচালনা শিক্ষার ওপর আলােচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নতুন শতাব্দীর অর্থনীতি, সামাজিক। পরিবেশ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানের বিস্ফোরণের সঙ্গে সংগতি রেখে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা পুনর্গঠিত করা প্রয়ােজন।
[7] সপ্তম অধ্যায়: সপ্তম অধ্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থার সক্রিয়করণ সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। শিক্ষার জন্য প্রয়ােজন বিধিবদ্ধ পরিবেশ, আন্তরিকতা, উদ্ভাবন ও সৃষ্টিমূলক কাজে স্বাধীনতা শিক্ষার গুণগত ধারণাগত পর্যায়ে পরিবর্তনের জন্য প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রয়ােজন শৃঙ্খলাবিধানের প্রক্রিয়া চালু করা||
[8] অষ্টম অধ্যায় : অষ্টম অধ্যায়ে বিষয়বস্তু ও শিক্ষা প্রক্রিয়া পুনর্বিন্যাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার মা অন্তর্ভুক্ত হবে ভারতের সংস্কৃতি, মূল্যবােধের শিক্ষা, সঠিক ভাষানীতি, পসহ ও গ্রন্থাগারের সুব্যবস্থা, শিক্ষামাধ্যম হিসেবে শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহার, কর্মঅভিজ্ঞতা, পরিবেশশিক্ষা, গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা এ খেলাধুলাে, যুবসমাজের ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের নির্ভরযােগ্য এবং নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়ন।
[9] নবম অধ্যায়: নবম অধ্যায়ে শিক্ষকগণের প্রতি মর্যাদাদানের কথা বিশেষভাবে আলােচনা করা হয়েছে। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সমগ্র দেশে শিক্ষকদের একই বেতন ও চাকুরির শর্তাবলি স্থির করার। কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির প্রসার এবং গুণমান। বজায় রাখার ক্ষেত্রে NCTE র ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।
[10] দশম অধ্যায়: দশম অধ্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় স্তর এবং রাজ্য স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার উন্নতির দায়িত্ব থাকবে যথাক্রমে CABE এবং SABE-এর ওপর। উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা স্কুল বাের্ড গঠিত হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজকর্মী, বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রয়াসকেও উৎসাহিত করা হবে।
[11] একাদশ অধ্যায়: একাদশ অধ্যায়ে শিক্ষার সার্থক রূপদানের জন্য প্রয়ােজনীয় সম্পদ সংগ্রহ ও পর্যালােচনা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে 1968-এর জাতীয় শিক্ষানীতিতে জাতীয় আয়ের 6 শতাংশ ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে।
[12] দ্বাদশ অধ্যায়: দ্বাদশ অধ্যায় বা শেষ অধ্যায়ে ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মজবুত শিক্ষা কাঠামাে গড়ে তােলাই হবে প্রধান কাজ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।