Class 11 Class 11 History জিয়াউদ্দিন বরনী বর্ণিত সুলতানি যুগের নরপতিত্বের আদর্শ কি ছিল ? দিল্লির সুলতানি শাসন কী ধর্মাশ্রয়ী ছিল?

জিয়াউদ্দিন বরনী বর্ণিত সুলতানি যুগের নরপতিত্বের আদর্শ কি ছিল ? দিল্লির সুলতানি শাসন কী ধর্মাশ্রয়ী ছিল?

চতুর্থ অধ্যায়: রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার উপাদান

প্রশ্ন: জিয়াউদ্দিন বরনী বর্ণিত সুলতানি যুগের নরপতিত্বের আদর্শ কি ছিল ? দিল্লির সুলতানি শাসন কী ধর্মাশ্রয়ী ছিল ‘? অথবা: দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি কি ছিল ?

উত্তর:

ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র : যে রাষ্ট্রে ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না এবং পুরােহিত শ্রেণী বা যাজক শ্রেণি রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করে সেই রাষ্ট্রকে ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বা পুরােহিততান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে|

ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য : ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য গুলি হল —

(ক) ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রে অদৃশ্য ঈশ্বর হলেন সব শক্তির উৎস এবং চূড়ান্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ।

(খ) ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রে ঈশ্বরের নির্দেশই হল রাষ্ট্র বা রাজ্যের আইন l

(গ) ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে পুরােহিত শ্রেণী বা যাজক শ্রেণি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন এবং রাষ্ট্রে ঈশ্বরের আইনগুলি কার্যকরী করেন।

(ঘ) ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রে ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের গভীর সম্পর্ক থাকে l রাষ্ট্র ধর্মীয় নেতা বা পুরােহিতকে বাদ দিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বা কোন আইন কার্যকারী করতে পারে না।

দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের সম্পর্কে জিয়াউদ্দিন বরনীর অভিমত : দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে জিয়াউদ্দিন বরনী তাঁর ‘ফতােয়া-ইজাহান্দারি’গ্রন্থে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন সুলতানি রাষ্ট্র একটি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র ছিল না। কারণ—

(ক) ইসলামের আদর্শচ্যুত : বরণি লিখেছেন যে ভারতের মুসলমানরা ইসলামের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত ছিল অর্থাৎ ভারতীয় মুসলমানরা মুসলিম ধর্মের প্রধান আদর্শ গুলি মেনে চলেননি।

(খ) ইসলামের আদর্শ অনুসরণ না করা : দিল্লির সুলতানরা রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বদা ইসলামের আদর্শ অনুসরণ করেননি। সুলতানরা ধর্মের পরিবর্তে বাস্তব পরিস্থিতির ওপরই বেশি গুরুত্ব দিতেন।

(গ) পৃথক পৃথক ধর্ম ও রাষ্ট্রনীতি : দিল্লির সুলতানরা উপলব্ধি করেন যে, তাঁদের স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে ধর্ম ও রাষ্ট্রনীতিকে একত্রিত করা সম্ভব নয় l

বরণির বিপক্ষে যুক্তি : ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড, রামশরণ শর্মা, ড, ঈশ্বরী প্রসাদ প্রমূখ আধুনিক ঐতিহাসিকরা বরণির মতের বিরােধিতা করে বলেছেন দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ছিল একটি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বা পুরােহিততান্ত্রিক রাষ্ট্র, কারণ ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য সুলতানি রাষ্ট্রব্যবস্থায় উপস্থিত ছিল। যেমন – (১) দিল্লির সুলতানরা মুসলিম ধর্মগুরু খলিফার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করত । (২) সুলতানি প্রশাসনে উলেমা শ্রেণির গুরুত্ব ও প্রভাব ছিল সর্বাধিক। (৩) ইসলামি কর ব্যবস্থা অনুযায়ী অ-মুসলিমদের কাছ থেকে সুলতানরা জিজিয়া কর আদায় করতেন।

মূল্যায়ন : সুলতানি রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সীমাহীন স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যা সামরিক বাহিনীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত হত । তাই এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব বিস্তার ছিল সুলতানদের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও যােগ্যতার ওপর। বলবন, আলাউদ্দিন খলজির মত সুলতানরা ছিলেন ধর্ম ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। তারা নিজেদের প্রয়ােজনে শরীয়তের বিধানকে ব্যাখ্যা কবেছেন। আসলে সুলতানি রাষ্ট্র ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলে দাবি করলেও আসলে তা ছিল সামরিক ও অভিজাতদের দ্বারা শাসিত রাষ্ট্র।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!