Class 12 Class 12 Sociology যজমানী প্রথার সুবিধা অর্থাৎ ইতিবাচক এবং অসুবিধা অর্থাৎ নেতিবাচক দিকগুলি উল্লেখ কর।

যজমানী প্রথার সুবিধা অর্থাৎ ইতিবাচক এবং অসুবিধা অর্থাৎ নেতিবাচক দিকগুলি উল্লেখ কর।

যজমানী প্রথার সুবিধা অর্থাৎ ইতিবাচক এবং অসুবিধা অর্থাৎ নেতিবাচক দিকগুলি উল্লেখ কর। Class 12 | Sociology (ভারতীয় সমাজ) 8 Marks

উত্তর:

যজমানী প্রথার পূর্ণাঙ্গ পর্যালােচনার মধ্য দিয়ে এই প্রথার কতকগুলি ইতিবাচক দিক (সুবিধা) এবং কতকগুলি নেতিবাচক দিক (অসুবিধা) লক্ষ্য করা যায়।

সবা দিতার ইতিবাচক দিক (সুবিধা) :

(১) যজমানী প্রথার মাধ্যমে বৃত্তি নির্ধারণ ঐতিহ্যভিত্তিক এবং বংশ পরম্পরাগত হয়। এই পেশা নির্ধারণ অপরিবর্তনীয় এবং ধারাবাহিক ছিল। কামিনদের সন্তানদের তাই নতুন করে পেশা – অন্বেষণের প্রয়ােজন হত না। তা জন্মসুত্রেই নির্ধারিত হত। সেজন্য কামিনদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কত ছিল অনেকখানি সদৃঢ়। 

(২) যজমান ও কামিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন ছিল বংশপরম্পরাগত তেমনি তা ছিল ব্যক্তিগত। এতে ‘পারস্পরিক পরিচিতি যেমন বেশী সুদৃঢ় হত আবার পারস্পরিক প্রয়ােজনকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হত। এই অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে কেবলই অর্থনৈতিক বা পেশাভিত্তিক বলা যায় না। সামাজিক সম্পর্কও বলা যেতে পারে। এক কথায় যজমানী ব্যবস্থা ছিল পারস্পরিক সহযােগিতার মাধ্যম।


(৩) যজমানী প্রথা তৎকালীন গ্রামসমাজে এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, এর প্রভাবে অন্য কোন প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন গড়ে উঠতে পারে নি, সমাজের ঐক্যও বিনষ্ট করতে পারে নি। 

(8) যজমানী প্রথার মাধ্যমে দ্রব্যের বা সেবার মূল্যমান নির্ধারণে নিরপেক্ষতা বজায় থাকতাে। এর ফলে বিনিময় সংক্রান্ত কোনপ্রকার জটিলতা দেখা দিতে পারে নি। 

(৫) এই প্রথা যেমন অর্থনৈতিক অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করত তেমনি প্রচলিত গ্রামীণ অর্থনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাও পালন করত।

(৬) পারিবারিক স্থায়ী বিনিময়ের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকখানি নিরাপদ হয়ে উঠেছিল। 

নেতিবাচক দিক (অসুবিধা):

(১) পরবর্তীকালে যজমানী প্রথা, শােষনের যন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। কার্লমার্কসও এই নীতির সমর্থন করে বলেছিলেন যজমানী প্রথা ভারতীয় অর্থনীতির সংকীর্ণতাকেই প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়াও অনেকে মনে করেন — যজমানী ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্বল পেশাভিত্তিক জাতিগুলি প্রভুত্বকারী  শ্রেণী দ্বারা শোষিত হয় |

(২) যজমানী ব্যবস্থায় কামিনদেরকে বিশেষ হীন দৃষ্টিকোন থেকে দেখা হত। কামিন কথাটির মধ্যেই যেন এই হীনতার সূত্র নিহীত ছিল। ফলে যজমানী ব্যবস্থার অভ্যন্তরে পেশাগত বা জাতিগত বৈষম্য দেখা দিয়েছিল। উঁচু জাতিগুলি তুলনামূলক নীচু জাতিগুলিকে শােষণ করত। 

(৩) টমাস বিডিম্যান-এর অভিমত অনুযায়ী যজমানরা হল শােষক এবং কামিনরা হল শােষিত। উচ্চবর্ণের ভূস্বামী হিন্দুরা বিধিসম্মতভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বকে কায়েম করার জন্য যজমানী ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। 

(৪) যজমানী প্রথা ভারতীয় অর্থনীতির অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বহির্বাণিজ্য, বাজার-অর্থনীতি প্রভৃতির অভাবে ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থমকে ছিল। 

(৫) যজমানী প্রথায় কামিনদের পেশাগত সচলতার পথ রুদ্ধ ছিল। পেশা ছিল বংশানুক্রমিক ও জাত নির্ধারিত, ফলে কোন ব্যক্তির যােগ্যতা-সামর্থ থাকলেও গণ্ডির বাইরে গিয়ে অন্য পেশা গ্রহণ করতে পারতাে না l

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!