যুথবদ্ধভাবে বসবাসের জন্য শিখন বলতে কী বােঝ? শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে এই শিখনে সহায়তা করে?

যুথবদ্ধভাবে বসবাসের জন্য শিখন বলতে কী বােঝ? শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে এই শিখনে সহায়তা করে? 1+3 
অথবা, শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য হল একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা’—কীভাবে শিক্ষা দ্বারা এই উদ্দেশ্যপূরণ সম্ভব?
অথবা, একত্রে বসবাসের উদ্দেশ্যে শেখা’—ধারণাটি আলােচনা করাে।    Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 4 Marks

উত্তর:-

যুথবদ্ধভাবে বসবাসের জন্য শিখন : যূথবদ্ধভাবে বসবাস করার শিক্ষা বলতে পরস্পর মিলেমিশে থাকার শিক্ষাকে বােঝানাে হয়। এই শিক্ষা বিশ্বের সমস্ত মানুষকে একসূত্রে বাধার আদর্শে গঠিত। এই শিক্ষা মানুষের মন থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা দূর করে তাকে বিশ্বভ্রাতৃত্বের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা জোগায়। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল সম্প্রদায় ও জাতিগত ক্ষুদ্রতা থেকে ব্যক্তিকে মুক্ত করা এবং পারস্পরিক সহযােগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। 

যুথবদ্ধভাবে বসবাসের শিখনে শিক্ষাব্যবস্থার সহায়তা : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সহ পাঠক্রমিক বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কমিউনিটি সচেতনতা, জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতাবােধ জাগ্রত করতে হবে। এর মাধ্যমে জীবনব্যাপী শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্যরুপে একত্রে বেঁচে থাকার শিক্ষার কার্যকারিতা শিক্ষার্থীরা উপলদ্ধি করবে। ওই ধরনের কিছু কর্মসূচির উল্লেখ করা হল— 

[1] মানবিক গুণাবলির বিকাশ : একত্রে বেঁচে থাকতে হলে সহানুভূতি, পরার্থপরতা, ধৈর্য, গণতান্ত্রিক চেতনা, সহমর্মিতা, ত্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন চারিত্রিক গুণের প্রয়ােজন। বিভিন্ন পাঠক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে এই সমস্ত গুণের বিকাশ ঘটাতে হবে।

[2] সাংগঠনিক কাজের মাধ্যমে গােষ্ঠীমানসিকতার বিকাশ : বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ সংগঠন এবং কার্যকরীকরণে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনাে-না-কোনােভাবে অংশগ্রহণের সুযােগ পায়, সে ব্যাপারে বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে সচেষ্ট হতে হবে | ওই পরিস্থিতিতে শিক্ষাথী দলগত কাজের সুফল এবং ওই ধরনের কাজের রীতিনীতি, শর্ত ইত্যাদি অনুশীলনে রপ্ত হবে | এগলি তাকে সকলকে নিয়ে চলতে সাহায্য করবে। 

[3] সমাজসচেতনতার বিকাশ : বিদ্যালয় এমন সব কর্মসূচি গ্রহণ করবে যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কমিউনিটির যােগাযােগ ঘটানাে সম্ভব। যেমন—পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশদূষণ প্রতিরােধ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ সংগঠন ইত্যাদি। 

[4] বিশ্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতার প্রসার : বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সেখানকার মানুষজন, তাদের জীবনযাত্রা প্রণালী, ইতিহাস, সংস্কৃতি সমস্যা ও প্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা প্রয়ােজন। 

[5] মানবিক ভূগােলের ওপর গুরুত্ব প্রদান: ভূগােল, বিশেষ করে মানবিক ভুগােলের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ব্যাবসাবাণিজ্য, শিল্প ও উৎপাদন, যাতায়াত ও যােগাযােগ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পৃথিবীর দেশগুলি যে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল, সেইসব তথ্য শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। 

[6] আন্তর্জাতিক শান্তিসংস্থাগুলি সম্পর্কে সচেতনতার প্রসার : বিশ্বশান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থাপিত হয়েছে, তাদের পশ্চাৎপট ও কার্যকারিতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে হবে। 

[7] সমমানের শিক্ষালাভের সুযােগ দান: জাতিধর্ম, অঞ্চল, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই সমমানের শিক্ষালাভের সুযােগ করে দিতে হবে |1968 সালের শিক্ষানীতিতে যে ‘কমন স্কুল’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

[8] জাতীয় সংহতির প্রচার : বিদ্যালয়ে বিনােদনমূলক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি, যেমন—আঞ্চলিকতাবাদ, প্রাদেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা, ভাষা-ধর্ম-গােষ্ঠীগত বিভেদ দূর করে জাতীয় সংহতিকে নিশ্চিত করতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment