কারক ও অকারক সম্পর্ক | মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ – প্রথম অধ্যায় । আলোচনা

কারক ও অকারক সম্পর্ক

মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ – প্রথম অধ্যায়


* কারক কী ?

কারক হল সম্পর্কের নাম। যেমন জ্যাঠা, মামা, পিসি, মাসি ইত্যাদি। কার সঙ্গে কার সম্পর্ক? ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিশেষ্য (বা বিশেষ্যস্থানীয়) বা সর্বনাম পদের সম্পর্ক। 

কারক শব্দের অর্থ ‘যে করে’। ইংরেজি case(কেয়স) শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ কারক। লাতিন casus(কাসুস) শব্দ থেকে যার উৎপত্তি। casus অর্থে ‘পতন’। ‘পতন’ অর্থে কাজ বা ক্রিয়া বোঝায়’। সংস্কৃতে বলা হয় “ক্রিয়ান্বয়ী কারকম”। অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে অন্বিত সম্পর্কই কারক। ‘কারক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হল- √কৃ+অক্।

বাক্যমধ্যস্থ ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে।

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক-

ঝিলিক আজ পরির জন্য বইমেলা থেকে মাইনের টাকা দিয়ে একটা বই কিনেছে।

প্রশ্নসমাপিকা ক্রিয়ানামপদসম্বন্ধ
কে ?কিনেছেঝিলিককর্তৃ
কী  ? কিনেছেবইকর্ম
কী দিয়েকিনেছেমাইনের টাকাকরণ
কার জন্যকিনেছেপরিরনিমিত্ত
কোথা থেকেকিনেছেবইমেলাঅপাদান
কবে কিনেছেআজঅধিকরণ

** বিভক্তি : যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে শব্দ বা ধাতুকে পদে পরিণত করে যথাক্রমে কারক ও কাল নির্ণয়ে সাহায্য করে, তাকে ‘বিভক্তি’ বলে।

যেমনঃ এ, তে, কে, রে, র, এর, শূন্য। বিভক্তিগুলি ক্রিয়াপদের সাথে নামপদের সম্পর্ক স্থাপন করে।

যেমন: ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ + এ বিভক্তি), মা (মা + শূন্য বিভক্তি), শিশুকে (শিশু + কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ + শূন্য বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।

বিভক্তি দুই প্রকার। যথা:- (১) শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি ও (২) ধাতু বা ক্রিয়া বিভক্তি।

ক) শব্দ-বিভক্তি : শব্দের (নাম) পরে যে-বিভক্তি যুক্ত হয়ে শব্দটিকে নামপদে পরিণত করে, তাকে শব্দ বিভক্তি বলে। যেমনঃ অ/শূণ্য, তে, কে, এ ইত্যাদি।

প্রয়োগ: বনে থাকে বাঘ। বন + ‘এ’ বিভক্তি = বনে(পদ), বাঘ + ‘অ’ (বিভক্তি) = বাঘ (পদ)।

খ) ধাতু বিভক্তি : 

** শূন্যবিভক্তি : যে-বিভক্তি শব্দের পরে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে, অথচ নিজে সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত থাকে, তাকে শূন্য বিভক্তি বলে।

** তির্যক বিভক্তি : যে বিভক্তি একাধিক কারকে ব্যবহৃত হয় তাকে তির্যক বিভক্তি বলে । যেমনঃ এ, তে, কে বিভক্তি।

** এ বিভক্তি তির্যক বিভক্তি কেন ?

এ বিভক্তিটি যে কোনো নামপদকে ক্রিয়াপদের সঙ্গে তির্যকভাবে অন্বিত করতে সমর্থ । তাই এ বিভক্তিকে তির্যক বিভক্তি বলা হয় ।

উদাহরণ :

   গ্রামে লোকে একমনে,

    পূজয়ে দেবতাগণে ,

         খড়গে ছাগে –

       কাটে লোকহিতে।

এখানে অপাদান ছাড়া সব কারকে এ বিভক্তি দেখানো গেল।অপাদানে এ বিভক্তির উদাহরণ হলো- তিলে তেল হয়। মেঘে জল হয় ।

** অনুসর্গ :

ব্যাকরণে বর্ণিত অব্যয় পদের একটি বিভাগ বিশেষ। এই জাতীয় অব্যয় অন্য পদের পরে পৃথকভাবে বসে পদটিকে বাক্যের অন্যান্য অংশের সাথে সম্পর্কিত করে বা বিভক্তির ন্যায় আচরণ করে। এদের অন্যান্য নাম পরসর্গ, কর্মপ্রবচনীয় (post position)।

যে সব অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে বসে বিভক্তির কাজ করে তাকে অনুসর্গ বলে। যেমনঃ দ্বারা, দিয়ে, হইতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, বিনা, মধ্যে, ভিতরে ইত্যাদি ।

প্রকারভেদ :

উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ দুই প্রকার। যথা –

১. নামজাত অনুসর্গ :

ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন অনুসর্গ ছাড়া অন্যান্য অনুসর্গের সাধারণ পরিচয় দেওয়া হয় নামজাত অনুসর্গ বলা হয়। যেমন- জন্য , উপরে, অপেক্ষা, বিনা ইত্যাদি।

২. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ :

কোনো ক্রিয়ামূলের সাথে থেকে উৎপন্ন এমন কিছু শব্দ, যেগুলো অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন–√কর্+ইয়া = করিয়া>করে বা ক’রে , থাকিয়া> থেকে, ধরিয়া > ধরে।

বিভক্তির সংযুক্তির বিচারে অনুসর্গ

অনুসর্গের সাথে বিভক্তি আছে কি নেই তার উপর ভিত্তি করে, অনুসর্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন–

১. বিভক্তিহীন অনুসর্গ :

এই সকল অনুসর্গের সাথে কোনো বিভক্তি থাকে না বা বিভক্তি যুক্ত করা যায় না। যেমন–

দ্বারা, কর্তৃক, নাগাদ ইত্যাদি।

২. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ :

এই সকল অনুসর্গের সাথে বিভক্তি যুক্ত থাকে।

নামজাত অনুসর্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত থাকে। যেমন–

আগ>আগে, উপর>উপরে, কারণ>কারণে

** বিদেশি অনুসর্গ :

বাবদ, বরাবর, দরুণ, বনাম ইত্যাদি ।

বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য :

ক) বিভক্তির নিজস্ব অর্থ নেই। অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে।

খ) বিভক্তি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বসে।অনুসর্গ শব্দের পরে পৃথকভাবে বসে।

** নির্দেশক :

যে সব বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ কোনো কিছুকে নির্দিষ্ট করে বোঝায় বা বচন নির্দিষ্ট করে তাকে নির্দেশক বলে । যেমনঃ টি, টা, খানা, খানি, গুলি,গুলো।

নির্দেশক সাধারণত বিশেষ্য বা বিশেষণের পরে বসে।কখনো কখনো শব্দের আগেও বসে।যেমনঃ খানচারেক লুচি দাও তো।

** অনুসর্গ ও নির্দেশকের মধ্যে পার্থক্য :

অনুসর্গ স্বতন্ত্রভাবে শব্দের পরে বসে।নির্দেশক কখনোই স্বতন্ত্রভাবে শব্দের পরে বসে না।

♦ কারক – বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের সম্পর্ককে কারক বলে।

* কারকের শ্রেণিবিভাগ :

বাংলায় কারক ছয় প্রকার। যথা –

১। কর্তৃকারক 

২। কর্মকারক 

৩। করণকারক 

৪। নিমিত্ত কারক 

৫। অপাদান কারক 

৬। অধিকরণ কারক 

★ কর্তৃকারক ★

কর্তৃকারক কি হলে হয়? মনে রাখতে হবে… যে করে / যে করায়.. সে কর্তা। কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার কর্তৃ সম্বন্ধ বলে ; কর্তার নীচে দাগ থাকলে কর্তৃ কারক হয়।

কর্তা হতে গেলে স্যুটেড ব্যুটেড হতে হবে তা নয়। যে কেউ বা যা কিছু কর্তা হতে পারে। যেমন.. ঘোড়া দাঁড়িয়ে ঘুমায়। প্রজাপতি ফুলে ফুলে মধু খায়। ঘড়িটা কাজ করছেনা। নেট গোলমাল করছে…ঘোড়া,প্রজাপতি, ঘড়ি, নেট… সব কর্তা। মোট কথা, যে করবে সে কর্তা। প্রশ্ন করার বালাই থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

যে করায় মানে? মানেটা হল…অনেক সময় নিজে না করে কর্তা অন্যকে দিয়ে করায়। যেমন, মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছে। মা কর্তা আবার শিশুও কর্তা। যা করে আর যাকে করে ; তা নাকি কর্ম। তাহলে শিশু তো কর্ম হওয়ার কথা। কিন্তু যদি বলি মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে… তাহলে বোধকরি ‘শিশু ‘র কর্তা হতে বাধা রইলো না।

কর্তৃকারক= ক্রিয়াসম্পাদনকারী ( যে / যারা )

উদাহরণ – –

ছাগলে কী না খায় । পাগলে কী না বলে । বুলবুলিতে ধান খেয়েছে।

বিরাট ব্যাট করছে। ছন্দে চলে রেলগাড়ি। নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবিতাটি লিখেছেন। ঘোড়া দাঁড়িয়ে ঘুমায়।

শ্রেণিবিভাগ:

১) প্রযোজক কর্তা — যে কর্তা নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়ে কাজ করায় তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।

উদাহরণ — মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছে।-এখানে ‘মা’ প্রযোজক কর্তা।

বাবা আমাকে দিয়ে আবেদনপত্রটি লেখালেন । { বাবা }

২) প্রযোজ্য কর্তা– অন্যের প্রেরণায় যে কর্তা কাজ করে তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে ।

উদাহরণ– মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছে। এখানে ‘ শিশু’ প্রযোজ্য কর্তা।

৩) ঊহ্য কর্তা — বাক্যের কর্তা যখন ঊহ্য থাকে ।

উদাহরণ– এখানে এসো।[ তুমি বা তোমারা – ঊহ্য কর্তা ]

ঘটনাস্থলে ছিলাম । { আমি বা আমরা ঊহ্য কর্তা }

৪) অনুক্ত কর্তা — কর্মবাচ্য বা ভাববাচ্যের কর্তা প্রধানভাবে উক্ত হয় না বলে তাকে অনুক্ত কর্তা ।

উদাহরণ–

কর্মবাচ্য– আমার দ্বারা সাহিত্যের ইতিহাসের তথ্য মনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না । { আমার দ্বারা }

ভাববাচ্য — আপনার পড়াশুনা কখন ভালো হয় ? { আপনার }

৫) কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা — বাক্যে ক্রিয়ার কর্তা অনুল্লিখিত থাকলে কর্মই যখন কর্তার প্রাধান্যলাভ করে ।

উদাহরণ– ভাঙল সুখের হাট । { হাট }

৬) এক ক্রিয়ার বহু কর্তা — একাধিক কর্তা যখন একটি ক্রিয়া সম্পাদন করে ।

উদাহরণ– পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল । { সুখ, সমৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠা — তিনটি কর্তা }

৭) বহু ক্রিয়ার এক কর্তা — একটি কর্তা যখন একাধিক ক্রিয়া সম্পাদন করে ।

উদাহরণ– চিঠিটি লিখে, খামভর্তি করে রাহুল ঘর থেকে বের হল এবং পোস্ট করে বাড়ি ফিরল । { রাহুল }

৮) ব্যতিহার কর্তা — যখন দুটি কর্তার মাঝে পারস্পরিক ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া বোঝায় তখন তাকে ব্যতিহার কর্তা বলে।

উদাহরণ– পণ্ডিতে পণ্ডিতে তর্ক করে।- এখানে  ‘পণ্ডিতে পণ্ডিতে’ ব্যতিহার কর্তা।

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায় । { এখানে ‘ রাজায় রাজায় ‘ ব্যতিহার কর্তা}

৯) সহযোগী কর্তা — দুটি কর্তার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ক্রিয়া সম্পাদন হলে তাকে সহযোগী কর্তা বলে।

উদাহরণ– বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খায়।

ঘর বাঁধব, তোমায়-আমায় মিলে ।

মনে রেখো : ব্যতিহার কর্তারা প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে ওঠে কিন্তু সহযোগী কর্তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করে।

১০) নিরপেক্ষ কর্তা — একই বাক্যের সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা যদি আলাদা হয়, তবে অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাটি নিরপেক্ষ কর্তা।

উদাহরণ : সূর্য উঠলে পদ্ম ফোটে । এখানে উঠলে অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা  ‘সূর্য’ নিরপেক্ষ কর্তা।

১১) সমধাতুজ কর্তা : সম মানে সমান,  ধাতু মানে ক্রিয়ার মূল অংশ এবং জ মানে জাত বা উৎপন্ন।

কর্তা এবং ক্রিয়া একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হলে তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে।

উদাহরণ– পরিশ্রমের ফল নিশ্চিতভাবেই ফলবে । { ফল }

পড়ুয়ারা পড়ছে।মেলা মানুষকে মিলিয়ে দেয়।

১২) সাধন কর্তা — কোনো উপকরণ যখন বাক্যের কর্তা হয় তখন তাকে সাধন কর্তা বলে।

উদাহরণ– ডায়েরির পুরনো পাতাগুলো স্মৃতিকে জাগায় । { ডায়েরির পুরনো পাতাগুলো }

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।[ঢেঁকি]

১৩) বাক্যাংশ কর্তা — সমাপিকা ক্রিয়াবিহীন পদসমষ্টি যখন বিশেষ্যের মত একটি ভাব প্রকাশ করে, তখন তাকে বাক্যাংশ কর্তা বলে।

উদাহরণ– ‘পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা ‘ ভালো কাজ নয়।

সহজভাবে বাঁচা কখনই এই খাঁচাতে সম্ভব নয় । { সহজভাবে বাঁচা }

১৪) উপবাক্যীয় কর্তা — বাক্যের বিশেষ্যধর্মী উপাদান-বাক্য কর্তৃপদ পেলে তাকে উপবাক্যীয় কর্তা বলে।

উদাহরণ– ‘গোরুতে ঘাস খায়’ কে না জানে।

বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা । { বিপদে মোরে রক্ষা করো } ।

দুই নাম্বার কারক কর্ম। যা করে আর যাকে করে ; তা ই কর্ম। গরু ঘাস খায়। বা গরুকে ঘাস দাও। ঘাস এবং গরুকে ঘাস… এগুলো কর্ম। কেন কর্ম? গরু যা করছে অর্থাৎ ঘাস খাওয়া কাজ করছে।। যাকে করছে মানে? গরুকে করছে। তাই ঘাস, গরুকে,ঘাস কর্ম। প্রাণিবাচক কর্মটা সাধারণত গৌণ কর্ম ; বস্তুবাচক কর্মটা মুখ্য। প্রসঙ্গত, মনে করা যেতে পারে, যে ক্রিয়ার দুটো কর্ম থাকে সেটাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।

☆★ কর্মকারক ☆★

কর্মকারক= কর্তা যা আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করে ।

* বাক্যের ক্রিয়াকে কী/কাকে/ কোন্ টি দিয়ে করা প্রশ্নের উত্তর ই কর্মকারক ।

উদাহরণ– পাখিটিকে খাঁচা থেকে মুক্তি দিলাম । {খাঁচা}

শ্রেণিবিভাগ :

১) মুখ্যকর্ম — যখন কোনো সকর্মিকা ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে ( একটি প্রাণীবাচক, অপরটি বস্তুবাচক ) তখন ঐ বস্তুবাচক কর্মটি হল মুখ্যকর্ম ।

উদাহরণ– বিকাশ আমাকে একটি গোলাপ দিয়েছিল । { গোলাপ }

২) গৌণকর্ম — উপরিউক্ত দুটি কর্মের প্রাণীবাচক কর্মটি হল গৌণকর্ম ।

উদাহরণ– উপরের বাক্যের ‘আমাকে’ ।

৩) উদ্দেশ্য কর্ম — কিছু ক্রিয়া এমন থাকে, যেখানে কর্মের পরিপূরক হিসেবে অন্য পদ ব্যবহৃত হয় । তখন বাক্যের আসল কর্মটি হল উদ্দেশ্য কর্ম ।

উদাহরণ– ভালোলাগাকেই অনেকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করেন । { ভালোলাগাকেই }

৪) বিধেয় কর্ম — যখন ক্রিয়ার কর্মের পরিপূরক হিসেবে অন্য পদ ব্যবহৃত হয়, তখন ঐ পদটিই বিধেয় কর্ম ।

উদাহরণ– আগের বাক্যের ‘ভালোবাসা’ ।

আরেকটি উদাহরণ —

অর্থকেই মানুষ পরমার্থ জ্ঞান করে । { উদ্দেশ্য কর্ম — অর্থ, বিধেয় কর্ম — পরমার্থ }

৫) সমধাতুজ কর্ম — বাক্যের ক্রিয়া যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন, সেই ধাতু-নিষ্পন্ন কোনো বিশেষ্যপদ যদি ঐ ক্রিয়ার কর্ম হয়, তবে তা সমধাতুজ কর্ম ।

উদাহরণ– মেয়েটি দুষ্টুমিভরা হাসি হাসছে ।         { হাসি }

৬) অসমাপিকা ক্রিয়ারূপ কর্ম — যখন কোনো বাক্যের অসমাপিকা ক্রিয়া, ভাবপ্রকাশের অর্থে কর্মভাব পায় ।

উদাহরণ– বাঁচতে চাই, আমরা সবাই । 

{ বাঁচতে }

৭) বাক্যাংশ কর্ম — সমাপিকা ক্রিয়াবিহীন পদসমষ্টি যখন কোনো বাক্যের ক্রিয়ার কর্মভাব প্রকাশ করে, তখন তা বাক্যাংশ কর্ম ।

উদাহরণ– যেকোনো সময় তার নাম ধরে ডাকা আমি খুব পছন্দ করি । { যেকোনো সময় তার নাম ধরে ডাকা }

৮) উপবাক্যীয় কর্ম — জটিল বাক্যের অন্তর্গত অপ্রধান উপাদান-বাক্য যখন প্রধান উপাদান-বাক্যের সকর্মিকা ক্রিয়ার কর্ম হয়, তখন তা উপবাক্যীয় কর্ম ।

উদাহরণ– সকলের মনে রাখা উচিত, সততাই একমাত্র মূলধন । { সততাই একমাত্র মূলধন }

৯) ঊহ্য কর্ম — বাক্যে যখন কর্ম অনুল্লিখিত থাকে ।

উদাহরণ– সুব্রত অনেকক্ষণ থেকেই খোঁজ করেছিল । { কী খোঁজ — অনুল্লিখিত }

১০) অক্ষুণ্ণ কর্ম — কর্তৃবাচ্যের দুটি কর্ম যদি কর্মবাচ্যে অপরিবর্তিত থাকে, তবে তা অক্ষুণ্ণ কর্ম ।

উদাহরণ– তোমাকে সেদিন আমি সত্যিটাই জানিয়েছিলাম । { তোমাকে, সত্যিটাই — অক্ষূণ্ণ কর্ম }

১১) কর্মের বীপ্সা — বাক্যে কর্মের পুনরাবৃত্তিই কর্মের বীপ্সা ।

উদাহরণ– যা যা শুনেছি, এখনও মনে রেখেছি । { যা যা}  জনে জনে ডাকো।

★করণ কারক★

যা দিয়ে করে… তা ই করণ। কলমে লিখি। লেখা কাজটা কলম দিয়ে করা হচ্ছে, তাই কলম করণ। বটিতে আলু কাটি। আলু কাটার কাজটা বটি দিয়ে করা হচ্ছে, তাই বটি করণ। 

করণ কারক– কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে , তা ই করণকারক ।

বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কার দ্বারা’, ‘কীসে’ — প্রশ্ন করলে যা উত্তর পাওয়া যায়,সেটাই করণকারক।

** করণ কারকে দ্বারা, দিয়া, জন্য, নিমিত্ত, করিয়া (করে), কর্তৃক, হইতে (হতে)– অনুসর্গের ব্যবহার হয় ।

উদাহরণ– 

সে ছুরি দিয়ে দড়ি কাটে।    

কী দিয়ে – ছুরি দিয়ে।                       

মেসি ফুটবল খেলে।  

তাস খেলা ছেড়ে ফুটবল খেলা ও লাঠি খেলা শেখো। 

গাধাকে হাজার চাবুক মারো সে গাধায় থাকবে।  ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।নৌকা করে ঘাট পার হলাম আমরা ।

শ্রেণিবিভাগ:

১) সমধাতুজ করণ — বাক্যের ক্রিয়া যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন, করণকারক টিও যদি একই ধাতু-নিষ্পন্ন হয়, তবে তা সমধাতুজ করণ ।

উদাহরণ– তোমার মতো এমন টানে কেউ তো টানে না । { টানে }

বড়ো জ্বালায় জ্বলছি। কী বাঁধনে মোরে বেঁধেছ। ঝাড়ন দিয়ে ঝাড়তে হবে।

২) যন্ত্রাত্মক করণ — কর্তা যে ইন্দ্রিয়গোচর উপায়ের সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তা যন্ত্রাত্মক করণ ।

উদাহরণ–রঙীন চশমায় সবকিছু রঙীন দেখায়।[ চশমায় ]

তাঁরা সকলেই দোয়াত-কালি দিয়েই লিখতেন ।

 { দোয়াত-কালি }

৩) উপায়াত্মক করণ — কর্তার ক্রিয়া সম্পাদনের উপায়টি যদি ইন্দ্রিয়গোচর না হয়, তবে তা উপায়াত্মক করণ ।

উদাহরণ– বক্তৃতার বাহাদুরিতে পেট ভরে না।[ বাহাদুরিতে ]

সর্বনাশী হৃদয় , ভালোবাসায় পূর্ণ । {ভালোবাসায় }

৪) করণের বীপ্সা — করণের পুনরাবৃত্তি ।

উদাহরণ– পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী । [ পূষ্পে পুষ্পে ]

তারায় তারায় গগন পূর্ণ হলো। রোগে রোগে দেহটা জীর্ণ হয়ে গেল।

গানে গানে আজকের রাত্রি ভরিয়ে তোলো । {গানে গানে } ।

♡  উপরোক্ত তিনটে কারকেরই একটা জিনিস কমন থাকে। কী সেটা ?সেটা হল “সমধাতুজ “। সমধাতুজ কর্তা হয়, কর্ম হয়, করণও হয়। সমধাতুজ আবার কী জিনিস? ভাঙলেই বোঝা যাবে।

সম) ধাতু ( জ

সম= সমান বা একই

ধাতু = ক্রিয়ার মূল অংশ

জ = জাত/ জন্মেছে এমন।

অর্থাৎ একই ধাতু থেকে জাত বা জন্মেছে এমন।

যেমন, ঝাড়ুদার ঝাড়নে ঝুল ঝাড়ে… ঝাড়ে ক্রিয়াপদ এবং ঝাড়ুদার কর্তা ; একই ধাতু ঝাড়/ ঝাঁট থেকে উৎপন্ন। একই ধাতু থেকে ক্রিয়া এবং কর্তা উৎপন্ন হলে ; সেই কর্তাকে বলা হয় সমধাতুজ কর্তা। একই রকম ভাবে, একই ধাতু থেকে ক্রিয়া এবং কর্ম উৎপন্ন হলে ; সেই কর্মকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম। যেমন, সে কী হাসি হাসছে। হাসছে ক্রিয়াএবং হাসি কর্ম একই ধাতু হস্ থেকে উৎপন্ন বলে হাসি সমধাতুজ কর্ম।

★ নিমিত্ত কারক ★

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ১৯৮৯ সাল থেকে পাঠ্যসূচিতে সম্প্রদান কারকের পরিবর্তে নিমিত্ত কারক চালু করেছে । এই কারকে নিমিত্ত বা জন্য অর্থটি প্রকাশ পায় ।

** ক্রিয়াপদকে ‘কী জন্য’ বা ‘কার জন্য’  দিয়ে প্রশ্ন করলে, এই কারক টি পাওয়া যায়।

উদাহরণ — 

বেলা যে পড়ে এল জলকে চলো। – জলকে- কী জন্য জল আনার জন্য ।

অন্ধজনে দেহ আলো।

মৃতজনে দেহ প্রাণ।

সকলের তরে সকলে আমরা।

আমি লেখাপড়ার জন্য কলকাতায় এসেছি।

অপাদান কারক — যা থেকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু পতিত/ চলিত / ভীত / গৃহীত / রক্ষিত / উতপন্ন / মুক্ত / অন্তর্হিত / বঞ্চিত / বিরত হয় , তাকে অপাদান কারক বলে ।

★ অপাদান কারক ★

উদাহরণ – – বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা। [বিপদে- মানে বিপদ থেকে ]

রাজকন্যে সোনার থালায় খান। দুধে দই ও ছানা হয়।  টাকায় কী না হয়।

# এই কারককে সাধারণত হইতে, থেকে অনুসর্গ যোগ থাকে ।

শ্রেণিবিভাগ:

১) স্থানবাচক অপাদান– কোনো স্থান থেকে ক্রিয়াটি সম্পাদিত হলে তা স্থানবাচক অপাদান ।

উদাহরণ– বাটি থেকে দই খাও। [ বাটি থেকে ]   ছাদ দিয়ে এখনো কি জল পরে।

গোলাপটি হাত থেকে পড়ে গেল । { হাত থেকে }

২) কালবাচক অপাদান– কোনো সময় থেকে ক্রিয়া সম্পাদন যখন বোঝায়, তখন তা কালবাচক অপাদান ।

উদাহরণ– গতকাল থেকে পরিযায়ী পাখি আসছে। [ গতকাল থেকে ]

  সকাল থেকেই মৌমিতার মন খারাপ হয়ে আছে। { সকাল থেকেই }

৩) অবস্থানবাচক অপাদান– কোনো অবস্থান থেকে ক্রিয়া সম্পাদন বোঝায় এই কারকে ।

উদাহরণ– বাচ্চারা ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে । { ছাদ থেকে }

** স্থানবাচক অপাদানে কর্তার স্থানচ্যুতি ঘটে ।

অবস্থানবাচক অপাদানে কর্তার স্থানচ্যুতি ঘটে না ।

৪) দূরত্ববাচক অপাদান– একটি দূরত্ব থেকে ক্রিয়া সম্পাদন হয় ।

উদাহরণ– গাজিপুর থেকে অরঙ্গাবাদ 4 কিমি দূরে অবস্থিত। [ গাজিপুর থেকে ]

ব্যান্ডেল রাণাঘাট থেকে অনেক দূরে । { রাণাঘাট থেকে }

৫) বিকৃতিবাচক অপাদান– বিকৃতি থেকে বা বিকৃতির মাধ্যমে ক্রিয়াটি সম্পাদিত হয় ।

উদাহরণ– দুধে ক্ষীর হয় । { দুধে }

৬) অসমাপিকা ক্রিয়াবাচক অপাদান–

যখন কোনো অসমাপিকা ক্রিয়া অপাদানের আকারে ক্রিয়া সম্পাদন করে , তখন এই কারক হয় ।

উদাহরণ– হঠাৎ ঝুমা বলতে বিরত হল । { বলতে , বলা থেকে অর্থে } ।

★অধিকরণ কারক★

যে স্থানে বা সময়ে কোনো ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় , ক্রিয়ার সেই আধার টিই তার অধিকরণ কারক ।

উদাহরণ – – সকালে সূর্য ওঠে । কলকাতা আছে কলকাতাতেই।ছেলেটি অঙ্কে কাঁচা।

শ্রেণিবিভাগ:

১) স্থানাধিকরণ কারক– যে স্থানে ক্রিয়া সম্পাদন হয় ।

উদাহরণ– বাড়িতে আমি আর ভাই আছি । { বাড়িতে }

এটি তিন প্রকার —

** একদেশসূচক : 

সমগ্র স্থানের বদলে কোনো বিশেষ অংশে কিছুর অবস্থান বোঝায় ।

উদাহরণ– চোখের কোণে একটু হাসলে তুমি । { কোণে }

** ব্যাপ্তিসূচক :

সমগ্র স্থান ব্যাপিয়া ক্রিয়া সম্পাদন বোঝায় ।

উদাহরণ– শশীর মনে দ্বন্দ্ব ছিল , কুসুমের নয় । { মনে }

** সামীপ্যসূচক :

নৈকট্য বুঝিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন ।

উদাহরণ– দরজায় এত ভিড় কিসের ? { দরজায়, দরজার কাছে বোঝাতে }

২) কালাধিকরণ– যে সময়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয় তাই কালাধিকরণ ।

এটি দুই প্রকার —

** ক্ষণমূলক :

অতি অল্প সময়ের মধ্যে ক্রিয়া সম্পাদন বোঝায় ।

উদাহরণ– আজ সকাল ছটায় ঘুম ভেঙেছিল । { ছটায় }

** ব্যাপ্তিমূলক :

দীর্ঘসময় ব্যাপী ক্রিয়া সম্পাদন বোঝায় ।

উদাহরণ– শীতকালে রাত বড়ো হয় । 

{ শীতকালে }

৩) বিষয়াধিকরণ কারক–

কোনো বিষয় বা ব্যাপার যখন ক্রিয়ার আধার হয়, তখন তা বিষয়াধিকরণ ।

উদাহরণ– মেয়েটি বুদ্ধিতে বৃহস্পতি, রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী । { বুদ্ধিতে, রূপে, গুণে }

৪) অধিকরণের বীপ্সা– ক্রিয়ার আধারের পুনরাবৃত্তি হয় এখানে ।

উদাহরণ– কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি। [ কুঞ্জে কুঞ্জে ]  পাতায় পাতায় রোদ হাসে।গাছে গাছে ফুল ফোটে।     বনে বনে ঝড় ওঠে । মেঘে মেঘে সোনা ও ভাই যায়না মানিক গোনা।  এই বাংলার তৃণে তৃণে ফুলে ফুলে মধুমতী। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে ঘরে বেকারত্ব ।

★অকারক ★

আমরা জেনেছি বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তা-ই হলো কারক ।-এখন দেখার বিষয় বাক্যে যে সব নামপদ ব্যবহৃত হয়,  তার সবকটিই কি ক্রিয়াপদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক যুক্ত থাকে ? যদি না থাকে তাহলে তাদের কী বলবো ? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ অকারক।

যেমন – আমি হাঁসের ডিম খেয়েছি। – এখানে হাঁসের সঙ্গে খেয়েছি ক্রিয়াপদের সরাসরি সম্পর্ক নেই।তাই এটি অকারক।

আবার– ছোটোমাসি আমি একটি গল্প লিখেছি। – এখানে লিখেছি ক্রিয়াপদের সঙ্গে  ‘ছোটোমাসি’ র কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই ।তাই এটি অকারক।

অকারক : বাক্যের মধ্যে এমন কিছু কিছু পদ থাকে, যার সঙ্গে সমাপিকা ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক থাকে না। এগুলিকে অকারক সম্পর্ক বলে।

অকারক পদ দুটি। যথা –  ক) সম্বন্ধ পদ  খ) সম্বোধন পদ।

সম্বন্ধ পদ :

বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে যে পদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না অথচ পরবর্তী বিশেষ্যের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে এই ধরনের র বা এর বিভক্তি যুক্ত পদকে সম্বন্ধ পদ বলে ।

উদাহরণ : খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে। [ খাঁচার ]

সম্বন্ধ  পদের বিভক্তি হলো র বা এর। সম্বন্ধ পদের বিভক্তি চিহ্ন কখনোই লোপ পায় না।

বাংলায় প্রচলিত নানাপ্রকার সম্বন্ধ পদ :

ক) কারক-সম্বন্ধ :  কারক ছটি তাই কারক-সম্বন্ধও ছয় প্রকার :

১) কর্তৃ – সম্বন্ধ :  ভায়ের প্রীতি,  মায়ের স্নেহ , শিক্ষকের উপদেশ , ধনীর দান, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ।

২) কর্ম – সম্বন্ধ :  অতিথির অ্যাপায়ন, বিদ্যার চর্চা,  ঈশ্বরের উপাসনা, চোরের শাস্তি, পরের নিন্দা।

৩) করণ – সম্বন্ধ : চোখের দেখা, চোখের ইশারা,  তুলির টান, হাতের কাজ, তাসের খেলা।

৪) নিমিত্ত – সম্বন্ধ : দেবতার ধন,  ঠাকুরের নৈবেদ্য,  পড়ার ঘর,  খেলার মাঠ,  খাবার জল।

৫) অপাদান – সম্বন্ধ : বাঘের ভয়,  চোখের জল,  মুখের কথা, বাবার ভয়।

৬) অধিকরণ – সম্বন্ধ : বনের হরিণ,  খাঁচার পাখি,  জলের মাছ, গাঁয়ের লোক,  স্বর্গের দেবতা।

খ) অভেদ-সম্বন্ধ : দুঃখের সাগর, প্রেমের তরঙ্গ,  বিদ্যার সাগর, আগুনের পরশমণি।

গ) উপাদান-সম্বন্ধ : সোনার আংটি,  হিরের দুল।

ঘ) গুণ-সম্বন্ধ : দিনের আলো,  রাতের অন্ধকার , বরফের শীতলতা।

ঙ) ক্রম-সম্বন্ধ : ছয়ের পাতা , ষোলোর অধ্যায়।

চ) অসম্ভব-সম্বন্ধ : সোনার পাথরবাটি , সাপের পা , ঘোড়ার ডিম।

ছ) কার্যকারণ-সম্বন্ধ :  সূর্যের তাপ , মেঘের ছায়া,  বিদ্যুতের আলো।

জ) আধার- আধেয়-সম্বন্ধ :  টিনের দুধ, খামের চিঠি , শিশির ওষুধ।

ঝ) বীপ্সা – সম্বন্ধ :  এমন ব্যথার ব্যথী, সুুখের সুখী, দুখের দুখী মিলবে কোথায় বল্ ?

☆ সম্বোধন পদ ☆

‘সম্বোধন’ কথাটির অর্থ বিশেষভাবে ডাকা।যে পদের দ্বারা কাউকে আহ্বান করা বোঝায় তাকে সম্বোধন পদ বলে ।বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্বোধন পদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে কারক নয়, অকারক।

যেমনঃ মা, আমায় মানুষ কর। [মা]  ভাগিনা, এ কী কথা শুনি। ও মেয়ে, শুনে যাও।

সম্বোধন পদে শূন্য বিভক্তি যুক্ত হয় ।

☆ সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদের মধ্যে সাদৃশ্য :

দুটিই অকারক। কেননা ক্রিয়াপদের সঙ্গে পদদুটির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না ।

☆ সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদের মধ্যে পার্থক্য :

ক) পরবর্তী বিশেষ্য পদের সঙ্গে সম্বন্ধ পদের সম্পর্ক থাকে। বাক্যমধ্যস্থ কোনো পদের সঙ্গেই সম্বোধন পদের সম্পর্ক থাকে না ।

খ) বিভক্তি কখনোই লোপ পায় না। চিরকালই শূন্য বিভক্তি।

☆বাংলায় কারক নির্ণয়ের একমাত্র পথ– অর্থ বুঝে কারক নির্ণয় করা।

যেমনঃ

সর্বপাপ হরিল গঙ্গায় (কর্তৃ) 

ভক্তিভরে পূজিনু গঙ্গায় (কর্ম)  

বর্ষায় জেলেরা গঙ্গায়(অপাদান) ইলিশ ধরে 

গঙ্গায় (অধিকরণ) মাঝে মাঝে হাঙর দেখা যায়।

আমরা চোখে (করণ) দেখি।

☆ বিভক্তি প্রধান কারক :

কর্তৃকারক , কর্মকারক,  অধিকরণকারক

☆অনুসর্গ প্রধান কারক :

করণকারক, অপাদানকারক, নিমিত্তকারক

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

2 thoughts on “কারক ও অকারক সম্পর্ক | মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ – প্রথম অধ্যায় । আলোচনা”

Leave a Comment