প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা খেলার জগতে ভারত | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
খেলার জগতে ভারত
🔹ভূমিকা :
২০০৮-এর বেজিং অলিম্পিকের স্লোগান ছিল—‘একটা বিশ্ব, একটাই স্বপ্ন।’ খেলাধুলা আজকের পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক সৌভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্ব-মানবমৈত্রীর এক শক্তিশালী মাধ্যম। আবার প্রতিযোগিতার তীব্রতায়, ব্যক্তিগত এবং দলগত দক্ষতার তীব্রতম স্ফুরণে এই খেলাধুলাই কোনো দেশকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা এনে দেয়। অলিম্পিক হোক বা বিশ্বকাপ—বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের যে মুগ্ধবিস্ময়, যে সহর্ষ উল্লাস, ব্যর্থতার যে অতলান্ত বিষাদ খেলাধুলাকে ঘিরে থাকে তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় শেয়ার বাজারের পতন, সীমান্ত সংঘর্ষ কিংবা রাজনীতির অন্ধগলির উত্তেজনা। আর খেলাধুলার এই প্রশস্ত আঙিনায় ভারতও উপস্থিত স্বমহিমায়।
🔹আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের সাফল্য :
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নজির আছে। তার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রিকেটে কপিলদেবের নেতৃত্বে ভারতের বিশ্বকাপ জয়। খুব কাছাকাছিই থাকবে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়। একদা বিশ্বের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান ছিলেন সুনীল গাভাসকার। কয়েক হাত ঘুরে সেই রেকর্ড এখন আর-এক ভারতীয় শচীন তেন্ডুলকরের হাতে। শচীনই টেস্টে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক। একসময় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের রেকর্ডটিও ছিল আর-এক ভারতীয়, কপিলদেব নিখাঞ্জের ঝুলিতে। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে আই সি সি-র বিচারে শ্রেষ্ঠ মহিলা বোলার নির্বাচিত হয়েছেন বাংলার ঝুলন গোস্বামী। আবার ভারত থেকেই আই সি সি-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন জগমোহন ডালমিয়া—যা ক্রীড়াসংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষতার দৃষ্টান্ত। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারত আবার ক্রিকেটের এক নম্বর দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। ২০১১-তে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ভারত শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করে।
🔹ফুটবলে ভারতের স্থান ও সমস্যাবলি :
ফুটবলে গত শতকের পাঁচের দশকেও ভারত ছিল এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ। কিন্তু, পরবর্তীকালে সেই অবস্থান ধরে রাখা যায়নি। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ভালো খবরও তৈরি হয়েছে। যেমন—ভারত থেকে অতনু ভট্টাচার্য এশিয়ান অলস্টার দলে নির্বাচিত হয়েছেন, সুব্রত ভট্টাচার্য নির্বাচিত হয়েছেন এশিয়ার সেরা কোচ হিসেবে এশিয়া থেকে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ভারতের বাইচুং ভুটিয়া বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলে এসেছেন বিশ্বতারকাদের সঙ্গে। কিন্তু এ সবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বর্তমানে বিশ্বের ফুটবল মানচিত্রে ভারতীয় দল প্রথম একশোটা দেশেরও অনেক পিছনে। এরই মধ্যে ২০০৭-এর নেহেরু কাপ জয় বা এ এফ সি কাপের মূলপর্বে ওঠা ক্ষীণ আলোর ইঙ্গিত দিয়ে যায়।
🔹ভারতের হকির সোনালি যুগ ও পতন :
খেলাধুলার ক্ষেত্রে ভারতকে সবথেকে বেশি গর্বের মুহূর্ত উপহার দিয়েছে হকি। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত অলিম্পিক হকিতে প্রথম সোনা জেতে। তারপর ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অলিম্পিকে হকি থেকে ভারত পেয়েছে আটটি সোনা, একটি রুপো, দুটি ব্রোঞ্জ। কিন্তু ইদানীংকালে হকির সাফল্য অস্তাচলগামী।
🔹ব্যক্তিগত ইভেন্টে ভারতের সাফল্য :
ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও বেশ কিছু স্মরণীয় সাফল্য এই দেশ পেয়েছে। ১৯৭৯ এবং ১৯৮১-তে প্রকাশ পাড়ুকোন ব্যাডমিন্টনে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন। ২০০৭- এ তিরন্দাজিতে দোলা ব্যানার্জি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। দাবায় বিশ্বনাথন আনন্দ শুধু বিশ্বচ্যাম্পিয়নই নন, নিজের একাধিপত্যও প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১৯৫২র অলিম্পিকে কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন কে ডি যাদব। তারপর ব্যক্তিগত ইভেন্টে পদকের জন্য আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হয়েছে ১৯৯৬-র আটলান্টা অলিম্পিকে লিয়েন্ডারের ব্রোঞ্জ জয় পর্যন্ত। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের সিডনি অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে কে. মালেশ্বরীর ব্রোঞ্জ আর ২০০৮-এর এথেন্স অলিম্পিকে শ্যুটিং-এ রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোরের রুপো জয় দেশকে গর্বিত করেছে। তবে ব্যক্তিগত সাফল্যের এই ধারা শীর্ষ ছুঁয়েছে বেজিং অলিম্পিকে। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল বিভাগে অভিনব বিন্দ্রার সোনা জয় ভারতীয় ক্রীড়াজগতে সোনার দিন। এই অলিম্পিকেই কুস্তিতে সুশীল কুমার, বক্সিং-এ বিজেন্দর সিং ব্রোঞ্জ জিতেছেন। ২০১২-র লন্ডন অলিম্পিকে ২টি রুপো এবং ৪টি ব্রোঞ্জসহ ভারতীয় খেলাধুলার ইতিহাসে এ যাবৎ সবথেকে বেশি পদক অর্জিত হয়েছে।
🔹অলিম্পিকে ভারতের হতাশাজনক অবস্থান :
একটি সোনা এবং দুটি ব্রোঞ্জ নিয়ে অহংকার করে বলতে হয়—এটাই আমাদের অলিম্পিকে শ্রেষ্ঠতম পারফরমেন্স। এটা লজ্জার, বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ, বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, প্রকৃতি ও মানবসম্পদে সমৃদ্ধ ভারত অলিম্পিকের পদকতালিকায় পায় ৫০তম স্থান। এশিয়াতে তার স্থান হয় অষ্টম। ফুটবলে এই দেশ সাফ চ্যাম্পিয়নও হতে পারে না। আর চরম লজ্জার বিষয় এই যে, হকিতে আটবারের সোনাজয়ী ভারত অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারে না। একশো কোটির দেশে ব্যক্তিগত ইভেন্টে একটা সোনার জন্য আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হয়েছে দশকের পর দশক। এই লজ্জা লুকোনোর কোনো জায়গা নেই ।
🔹উপসংহার :
এই বিরাট দেশে প্রতিভার কোনো অভাব নেই। কিন্তু অভাব আছে সেই প্রতিভাকে যথাযথভাবে তুলে এনে সঠিকভাবে পরিচর্যার। প্রতিবছর কয়েকশো কোটি টাকা ক্রীড়াখাতে বরাদ্দ হলেও তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। তার ফলে হতাশা আর দীর্ঘনিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে হয় কোটি কোটি ভারতবাসীকে। অপেক্ষা করে থাকতে হয় নিজস্ব প্রতিভায় আর উদ্যমে আবার কবে জ্বলে উঠবেন আর-একজন অভিনব বিন্দ্রা।
আরো পড়ুন
উন্নয়ন বনাম পরিবেশ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশরক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশরক্ষায় অরণ্য – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আমাদের পরিবেশ : সমস্যা ও প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
এই রচনাটিতে যদি পয়েন্টের মাধ্যমে সমস্ত বোঝানো হতো তাহলে সেটি আমাদের জন্য খুব ভালো হতো তাহলে সেটি মুখস্ত কর তাহলে খুব সুবিধা হতো কিন্তু পয়েন্টে নেই তার জন্য আমাদের কঠিন মনে হবে তাই জন্য আমি চাইছি যাতে আপনার পয়েন্ট যোগ করে আমাদের সুবিধা করবেন ধন্যবাদান্তে তুহিন হালদার
পয়েন্ট যোগ করে দেওয়া হয়েছে। কমেন্ট করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ