কর্মের জন্য শিক্ষা বলতে কী বােঝ? এই ধরনের শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ করাে। শিক্ষা কীভাবে এই উদ্দেশ্যসাধনে সহায়তা করে? 1+2+1
অথবা, কর্মসম্পাদনের শিক্ষা কাকে বলে? Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 4 Marks
উত্তর:-
কর্মের জন্য শিক্ষা : জীবনব্যাপী শিক্ষার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল কর্মের শিক্ষা। কর্মের শিক্ষার অর্থ শুধুমাত্র কাজ সম্পন্ন করা নয়, কাজে উৎকর্ষ আনা, কাজে দক্ষ হওয়া এবং নতুন পরিস্থিতিতে দলবদ্ধভাবে কাজ করা। শিক্ষাগ্রহণের সময়ে শিক্ষার্থীকে যদি কৰ্ম অভিজ্ঞতার বা সামাজিক কাজে অংশ নেওয়ার সুযােগ করে দেওয়া যায়, তাহলে কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি হয়। তারা নিজের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ব্যবহারের সুযােগ পায় ও কাজে দক্ষতা অর্জনের পরিবেশ গড়ে ওঠে। কর্মদক্ষতা অর্জন করতে না পারলে কারও পক্ষে ব্যক্তিজীবনে ও সমাজজীবনে সার্থকভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
কর্মের জন্য শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা : কর্মের জন্য শিক্ষা অর্থাৎ, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা নিম্নলিখিত কারণে অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়।
[1] কর্মজগৎ সম্পর্কে ধারণা দান: এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে বর্তমান বিশ্বের কর্মজগৎ এবং তার বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়।
[2] সামাজিক সমস্যাসমাধানে সহায়তা: এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে একদিকে যেমন বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা জানতে এবং বুঝতে সাহায্য করে, অন্যদিকে সেইসব সমস্যাসমাধানে অগ্রসর হতে উদ্বুদ্ধ করে।
[3] দলগতভাবে কাজের অভ্যাস গঠন: এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এর ফলে পারস্পরিক সহযােগিতা, ভ্রাতৃত্ববােধ, ঐক্য প্রভৃতি গুণের বিকাশ ঘটে।
[4] মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা : কর্মের জন্য শিক্ষা মানুষকে উৎপাদনশীল হতে সাহায্য করে। উৎপাদনশীল মানুষই প্রকৃত অর্থে মানবসম্পদ। সুতরাং, এই শিক্ষা মানবসম্পদ বিকাশে সাহায্য করে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির দ্বারা দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
[5] সৃজনশীল গুণের বিকাশে সহায়তা : এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল গুণের বিকাশ ঘটায় |
[6] ব্যক্তিত্বের বিকাশে সহায়তা : এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, যার ফলে তারা যে-কোনাে ধরনের পরিস্থিতির মােকাবিলা করার আত্মবিশ্বাস অর্জন করে।
[7] কৌতুহল বৃদ্ধিতে সহায়তা : এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা ধরনের কৌতুহল সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীরা কৌতুহল নিবারণে সক্রিয় হয়।
[8] বৃত্তি নির্বাচনে সহায়তা : এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনে বৃত্তি নির্বাচনে সহায়তা করে এবং উপার্জনক্ষম করে তােলে।
[9] শ্রমের প্রতি মর্যাদাদান: এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে হাতে-কলমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে শেখায়। ফলে শিক্ষার্থী কাজকে ভালােবাসতে শেখে ও শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
[10] দৈহিক বিকাশে সহায়তা : এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
কর্মের জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যসাধনে সহায়তা : কর্মের জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যসাধনে গৃহীত বিদ্যালয়ের কর্মসূচিগুলি হল—
[1] কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক কর্মসূচি: পাঠক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে এমন কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যা কর্মশিক্ষা ও কর্মদক্ষতা বিকাশে সাহায্য করে।
[2] প্রবণতা ও কর্মভিত্তিক কর্মসূচি : শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের প্রবণতা ও আগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কর্মভিত্তিক কাজ করতে পারে, সেই সুযােগ তৈরি করতে হবে।
[3] তাত্ত্বিক শিক্ষা ও কর্মশিক্ষার সমন্বয়সাধন: তাত্ত্বিক শিক্ষা এবং কর্মশিক্ষা যাতে সমান গুরুত্ব পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
[4] ব্যাবহারিক প্রয়ােজনভিত্তিক কর্মসুচি: শিক্ষার্থীদের এমন সব কাজ করতে উৎসাহ দিতে হবে ব্যাবহারিক জীবনে যার মূল্য আছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।