কোঠারি কমিশন কেন গঠন করা হয় ? এই কমিশনের গঠন সম্পর্কে আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষার কৌশল) | 8 Marks
উত্তর:-
কোঠারি কমিশন গঠনের কারণ
1964 খ্রিস্টাব্দের 14 জুলাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ড. ভি এস। কোঠারির নেতৃত্বে 17 জন সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন নিয়ােগ করা হয়। এই কমিশনটি ‘কোঠারি কমিশন’ নামে অধিক পরিচিত। এই কমিশন গঠনের কারণগুলি ছিল—
[1] পূর্বের কমিশনগুলির সীমাবদ্ধতা: 1948 সালের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। 1952 খ্রি. গঠিত শিক্ষা কমিশনের এক্তিয়ার ছিল শুধু মাধ্যমিক শিক্ষার পর্যালােচনা এবং সুপারিশ করা।
[2] পূর্বের কমিশনের সুপারিশগুলি পূরণে ব্যর্থতা: উপরিউক্ত দুটি কমিশনের সুপারিশসমূহ পুরােপুরিভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে শিক্ষাব্যবস্থার জুটিগুলি থেকেই যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ দূর করার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার 1964 সালের 16 জুলাই ড. ভি. এস. কোঠারির নেতৃত্বে একটি ‘এডুকেশন’ কমিটি নিয়ােগ করে।
কোঠারি কমিশন গঠন
17 জন সদস্য নিয়ে গঠিত কোঠারি কমিশন 1964 খ্রিস্টাব্দের 2 অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করে।
[1] কমিশনের প্রধান লক্ষ্য: কমিশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় স্তরে শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ও সর্বদিকে উন্নতির জন্য সাধারণ ব্যবস্থা ও নীতিসমূহ সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দান অতীতে বিভিন্ন কমিটি এবং কমিশনগুলিতে শিক্ষার নির্দিষ্ট স্তরে এবং নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর পর্যালােচনা করা হয়। এই কমিশনে সামগ্রিকভাবে এবং শিক্ষার সমস্ত দিক পর্যালােচনা করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তবে আইন এবং চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কিত শিক্ষাব্যবস্থা কমিশনের আওতাভুক্ত হবে না বলে স্থির হয়।
[2] শিক্ষার ভূমিকা সম্পর্কে কমিশনের বিশ্বাস: কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, জাতীয় বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হাতিয়ার হল শিক্ষা। সেই কারণেই কমিশন তার রিপাের্টের নামকরণ করে ‘Education and National Development’ (শিক্ষা এবং জাতীয় বিকাশ)।
[3] কমিশনের অন্তর্ভুক্ত সদস্যবৃন্দ: কমিশনে দেশ ও বিদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদগণ সদস্য হিসেবে মনােনীত হন। সদস্যদের মােট সংখ্যা ছিল সতেরাে। শ্রী জে পি নায়েক ছিলেন সদস্য সম্পাদক (মেম্বার সেক্রেটারি) এবং মি. জি এফ ম্যাকডুগাল ছিলেন সহ-সম্পাদক। ভারতীয় সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন ড. কে জি সঈউদ্দীন, ড. ত্রিগুণা সেন, কুমারী এস পানান্ডিকর, অধ্যাপক এম ভি মাথুর, আর এ গােপালাস্বামী প্রমুখ। বিদেশিদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক এইচ এল এলভিন (ইংল্যান্ড), জ টমাস (ফরাসি), রজার রিভেলি (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র), সাদাতােশি ঝােড়া (জাপান) প্রমুখ।
[4] কমিশনের কর্মপদ্ধতি: কমিশন প্রায় 90,000 মহিলা এবং পুরুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। এদের মধ্যে ছিলেন জনজীবনে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ, বৈজ্ঞানিক, শিল্পবিদ, বিভিন্ন বিষয়ের পন্ডিত ব্যক্তিসকল এবং শিক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তিগণ। কমিশন 2,400 মেমােরেন্ডা এবং লিখিত বক্তব্য পেয়েছিল, যেগুলিকে তারা পর্যালােচনা করে। কমিশন বিগত 20 বছরের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর দীর্ঘ 21 মাসব্যাপী কাজ করেছিল। 1964 সালের 2 অক্টোবর (মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন) কমিশনের কাজ শুরু হয় এবং 1966 সালের 29 জুন কমিশনের বিবরণী জমা পড়ে।
[5] কমিশনের আলােচ্য বিষয় এবং টাস্ক ফোর্স গঠন: কমিশনের রিপাের্টে প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর ও শিক্ষার বিভিন্ন দিকের ওপর পূর্ণাঙ্গ আলােচনা করা হয়েছে। আইন ও চিকিৎসাবিদ্যা এই কমিশনের সুপারিশের আওতায় ছিল না। তবে সুপারিশে এর সমস্যাগুলির দিক নির্দেশ করা হয়েছে।
এই কমিশন 12টি টাস্ক ফোর্স গঠন করে। এগুলি হল— i. স্কুল শিক্ষা, ii. উচ্চ শিক্ষা, iii. টেকনিক্যাল শিক্ষা, iv. কৃষি শিক্ষা, v. বয়স্ক শিক্ষা, vi. বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা, vii. শিক্ষক শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা, viii. ছাত্র কল্যাণ, ix. নতুন শিক্ষা কৌশল ও পদ্ধতি, X. জনশক্তি, xi. শিক্ষা প্রশাসন এবং xii. শিক্ষার অর্থনীতি। এ ব্যতীত 7টি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। এগুলি হল— i. নারী শিক্ষা, ii. পশ্চাদপদ সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা, iii. স্কুল বিল্ডিং, iv. বিদ্যালয় ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক, v. স্ট্যাটিসটিক্স, vi. প্রাক্প্রাথমিক শিক্ষা এবং vii. বিদ্যালয়ের পাঠক্রম।
এই টাস্ক ফোর্স ও ওয়ার্কিং গ্রুপগুলি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপাের্ট পেশ করে। সেই রিপাের্ট অনুসারেই কোঠারি কমিশনের সুপারিশসমূহ এডুকেশনাল অ্যান্ড ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।