লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই

ভূমিকা : ছাত্রছাত্রীদের কাছে লেখাপড়া’ হল এক বিশেষ সাধনার ব্যাপার। তাদের মন দিয়ে লেখাপড়া করতেই হয়।

অধ্যয়নং তপঃ : লেখাপড়াই শিক্ষার্থীদের ধর্ম। ছাত্রদের ধর্ম হল ‘অধ্যয়নং তপঃ, সাধকরা যেমন তপস্যা করেন ইষ্ট লাভের আশায়, তেমনি ছাত্ররা তাদের অধীত বিদ্যাকে আয়ত্ত করতে তপস্যা করবে, এটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু জিজ্ঞাসা হল, ছাত্রছাত্রীরা কি দিনরাত্রি কেবল পড়াশােনাতেই ডুবে থাকবে? তারা শুধু পড়াশােনার সাধনায় শরীরপাত করবে? এটা কি ঠিক?

শুধুই অধ্যয়ন নয় : আধুনিক শিক্ষাবিদরা কিন্তু এই মত পােষণ করেন না। তাঁরা মনে করেন, লেখাপড়া করে ছাত্ররা জ্ঞান অর্জন করে শরীর তৈরি হয়। সুতরাং লেখাপড়ার ফাকে ফাকে নিয়মিত সাঁতার কাটা যেতে পারে। শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে এগুলি খুবই দরকার।

গল্পের বইয়ের উপকারিতা : আমাদের শরীর গঠনের জন্য যেমন খেলাধুলা আবশ্যিক, তেমনি মানসিক বৃত্তিগুলির উৎকর্ষসাধনের জন্য গল্পের বই হল বিশেষ এবং উৎকৃষ্ট একটি উপাদান। তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে গল্পের বইয়ের বিশেষ আকর্ষণ থাকা খুবই স্বাভাবিক। ওই বয়সে গল্পের বই পড়তে কে না ভালােবাসে? গল্পের বইয়ের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে। জানা যায়, মানুষে মানুষে সম্পর্ক এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়গুলি। চেনা যায় আমাদের স্বদেশকে। জানা যায় কাকে বলে কর্তব্যবােধ। সামাজিক প্রেক্ষিতে ভাই-বােন, মা-বাবা ইত্যাদি আপনজনকে আপন করে গভীরভাবে দেখতে পাওয়া যায় গল্পের বই পাঠ করলে। 

মনের প্রসার : এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, তারাশংকর প্রমুখের গল্পগুলি প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যায়। এই গল্পগুলি আমাদের মনকে কেবল মােহিত করে না, গ্রামবাংলার বৃহত্তর জনসমাজ, গ্রামবাংলার প্রকৃতি, জনপদ, নদীলালিত পল্লিগ্রাম আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরে। আমাদের মনের গভীরে এইসব দৃশ্য বিশেষভাবে আলােড়নের সৃষ্টি করে এবং সূক্ষ্ম মানসিক বৃত্তিগুলিকে জাগিয়ে তােলে এবং সমৃদ্ধ করে। বিভূতিভূষণের চাদের পাহাড় আমাদের তরুণ মনে অ্যাডভেঞ্চারের ক্ষুধা জাগিয়ে উদবােধিত করে। অপরিচয়ের সঙ্গে পরিচয়ের, অজানার সঙ্গে জানার, দূরের সঙ্গে নিকটের মেলবন্ধন তৈরি করে নানাধরনের এবং নানা বিষয়ের গল্পের বই। সবসময় কেবলমাত্র লেখাপড়ার মধ্যে ডুবে থাকাই তাই ছাত্রসমাজের পক্ষে একান্ত কাম্য নয়।

উপসংহার : লেখাপড়ার ফাকে ফাকে এবং অবসর সময়ে আমাদের অবশ্যই খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে শরীরকে মজবুত করতে হবে, ভবিষ্যৎ জীবনে লড়াইয়ের উপযুক্ত করতে হবে এবং সেইসঙ্গে মানসিক বৃত্তিগুলিকে শক্তপােক্ত করার জন্য পড়তে হবে নানাধরনের গল্পের বই। নতুবা শুধুই পড়াশােনা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে পূর্ণ করে তুলতে পারবে না।

আরো পড়ুন

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

গ্রন্থাগার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দূরদর্শনের সুফল ও কুফল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আধুনিক ভারতবর্ষে শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment