লোকপাল বিল কী? রাজনীতিক ও কোম্পানীসমূহের দুর্নীতির বিরুদ্ধে গঠিত কমিটিসমূহ সম্পর্কে আলােচনা কর।

লোকপাল বিল কী? রাজনীতিক ও কোম্পানীসমূহের দুর্নীতির বিরুদ্ধে গঠিত কমিটিসমূহ সম্পর্কে আলােচনা কর। Class 12 | Sociology (সাম্প্রতিক কালের সামাজিক বিচার্য বিষয়) | 8 Marks

উত্তর:

লােকপাল বিল (Lok Pal Bil) : লােকপাল বিল নিয়ে আলােচনা আজকের নয়, অনেক দিনের। লােকপাল–বর্তমানে এই পদের বিকল্প কোনাে পদ নেই। উচ্চতর পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযােগ নিয়ে লােকপালই অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করতে পারেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযােগ অনুসন্ধানের এক্তিয়ার এই পদাধিকারীর আছে। লােকপালের ব্যবস্থাকে সম্যকভাবে কার্যকর করা গেলে উচ্চতর পদাধিকারীদের পর্যায়ে দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ অনেকাংশে সাফল্যমণ্ডিত হবে। লােকপালকে একটি কার্যকর সংস্থা হিসাবে গড়ে তােলা দরকার। তার জন্য সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক/দুই/তিন জন বিচারপতি নিয়ে এই সংস্থাটি গঠিত হওয়া উচিত। এই সমস্ত বিচারপতিদের বাছাই করবে একটি কমিটি। সংশ্লিষ্ট কমিটি গঠিত হওয়া উচিত চারজন ব্যক্তিকে নিয়ে। এই চারজনের মধ্যে থাকা। উচিত প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধান বিচারপতি, লােকসভার স্পিকার এবং বিরােধী দলের নেতা। লােকপালের হাতে চুড়ান্ত ক্ষমতাসমূহ থাকবে। লােকপালের হাতে থাকতে হবে অনুসন্ধানকার্য সম্পাদনের জন্য একটি স্বাধীন ব্যবস্থা।

রাজ্যস্তরে লােকায়ুক নিয়ােগের ব্যবস্থা হয়েছে এগারােটি রাজ্যে। কিন্তু রাজ্যস্তরে এই ব্যবস্থা তেমন। সাফল্য পায়নি। কারণ এই ব্যবস্থার পিছনে আইনগত সমর্থনের অভাব অনস্বীকার্য।

রাজনীতিক ও কোম্পানীসমূহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযােগ অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিশনসমূহ: ভারত সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্যসরকার বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিক ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতির অভিযােগ অনুসন্ধানের জন্য বেশ কিছুসংখ্যক কমিশন গঠন করেছেন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ভারত সরকার এ রকম অনেক কমিশন গঠন করেছে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে কতকগুলি কমিশনের কথা বলা দরকার। (ক) সর্দার প্রতাপ সিং কাইরন-এর বিরুদ্ধে ‘দাস কমিশন গঠিত হয়। (খ) ১৯৭৬ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির বিরুদ্ধে সারকারিয়া কমিশন গঠিত হয়। (গ) ১৯৭৭ সালে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী দেবরাজ আর্স-এর বিরুদ্ধে গ্রোভার কমিশন গঠিত হয়। (ঘ) ১৯৮৭ সালে ওড়িশার । মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়কের বিরুদ্ধে কাপুর কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই সমস্ত কমিশনের কোনােটাই সাফল্যের সঙ্গে অনুসন্ধান করতে বা সত্য উদঘাটন করতে পারেনি।

বােহরা কমিটি (Vohra Committee) : অপরাধীদের বিভিন্ন গােষ্ঠী ও মাফিয়াদের সংগঠনসমূহের । সঙ্গে রাজনীতিবিদ ও সরকারি পদাধিকারীদের সংযােগ-সম্পর্ক অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে বােহরা কমিটি গঠন করে। এই কমিটি ওই বছরের অক্টোবর মাসে একটি প্রতিবেদন। পেশ করে। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয় যে, দুর্নীতিমূলক ঘটনাসমূহের যথাযথ তদন্ত করার জন্য একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করা দরকার।

দুর্নীতি দমনের অন্যান্য সুপারিশসমূহ : দুর্নীতি একটি দুরারােগ্য ব্যাধির ন্যায় ভারতীয় সমাজদেহের । বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে গ্রাস করেছে। পরিস্থিতিপরিমণ্ডলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, দুর্নীতিকে পুরােপুরি নির্মুল করা দুরূহ ব্যাপার। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং হ্রাস করা আবশ্যক এবং তা অসম্ভব। নয়। আর দেরি না করে এখন দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হওয়া আবশ্যক। কেবলমাত্র আইনমূলক উপায়পদ্ধতির মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া যাবে না। দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জনমতকে সংগঠিত । করতে হবে। কেবলমাত্র সৎ ও নির্ভীক সরকারি আধিকারিক, কর্মচারী ও রাজনীতিকদের প্রতিটি নাগরিক। সম্মান প্রদর্শন করবে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি কর্মচারী ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নাগরিকরা কোনােরকম আপােশ করবে না। দুর্নীতি ও দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রামের শপথ সকলকে নিতে হবে। এটাই আজকের দিনে দরকার।

দুর্নীতি দমনে ধুমাত্র আইনমূলক ব্যবস্থাদি যথেষ্ট নয়। অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাদি অবলম্বন করা আবশ্যক। এই সমস্ত ব্যবস্থাদির মধ্যে কতকগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। 

(১) আইন বলবৎকারী কর্তৃপক্ষসমূহকে দুর্নীতিবিরােধী আইনসমূহকে নিরপেক্ষ ও নির্মমভাবে প্রয়ােগ। করতে হবে। 

(২) বিদ্যমান মূল্যস্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে সরকারি আধিকারিক, কর্মচারী, মন্ত্রী এবং সাংসদ ও বিধায়কদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

(৩) ঘুস নেওয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যমান দণ্ডমূলক ব্যবস্থা কঠোরভাবে প্রয়ােগ করলে আমলাদের দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস করা যাবে। 

(8) সততার সমর্থনে এবং অন্যায় ও অসৎ আচরণের বিরুদ্ধে গণ-মাধ্যমসমুহকে অধিকতর সদর্থক। ভূমিকা পালন করতে হবে। 

(5) দুর্নীতিবিরােধী মামলা-মােকদ্দমার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।। 

(৬) কর সম্পর্কিত আইন-কানুনের পরিমার্জন প্রয়ােজন। লাইসেন্স ও পারমিট সম্পর্কিত বিদ্যমান। ব্যবস্থাদির সংস্কারসাধন আবশ্যক।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment