মধ্যযুগে ভারতের নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে

মধ্যযুগে ভারতের নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে

উত্তর:

মধ্যযুগে ভারতের নারীশিক্ষা :

মধ্যযুগে ভারতের নারীশিক্ষা সঠিকভাবে প্রসার লাভ করতে পারেনি। সে-যুগের গোঁড়া মুসলমানরা মনে করত নারীরা শিক্ষিত হলে, তা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। তবে মধ্যযুগের মুসলমান শাসকরা এবং মনীষীরা নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। এমনকি ইসলাম ধর্মের প্রবাদপুরুষ প্রবর্তক হজরত মহম্মদও নারীশিক্ষা প্রসারের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু মধ্যযুগে নারীদেরকে পর্দার আড়ালে রাখার রীতি প্রচলিত হয়। ফলে নারীশিক্ষার বিকাশ অনেকাংশে ব্যাহত হয়। এখানে নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—

[1] গৃহে বা অন্দরমহলে শিক্ষার ব্যবস্থা : ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থাতে বালিকা সাত বছর বয়সে পৌছােলে, তাকে আর মক্তবে পাঠানাে যেত না। তা ছাড়া বালিকাদের পঠনপাঠনের জন্য বিশেষ কোনাে বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। সাধারণ বিদ্যালয়েও নারীদের ভরতি নেওয়া হত না। ফলে বালিকাদের বাড়িতে বসেই শিক্ষালাভ করতে হত। সে-যুগের মুসলিম কন্যারা নিজেদের গৃহে বসেই ‘কোরানের সুরা পাঠ করত। হিন্দু জমিদার ও বিত্তবানরা নিজেদের গৃহে কন্যাসন্তানের জন্য শিক্ষক নিয়ােগ করতেন। 

[2] শিক্ষক : মধ্যযুগে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধনী পরিবারের গৃহে পাঠদানের জন্য ‘উলেমা’ নিযুক্ত করা হত। চারুকলা বিষয়ে তালিম দেওয়ার জন্য ওস্তাদ’ নিয়ােগ করা হত। বিভিন্ন রাজপরিবারে কন্যাসন্তানদের পঠনপাঠনের জন্য ‘শিক্ষিকা নিয়ােগ করা হত। ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে জানা যায় সুলতান গিয়াসুদ্দিন হারেমের মহিলাদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ‘শিক্ষিকা’ নিয়ােগের বন্দোবস্ত করেছিলেন।

[3] বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন : মধ্যযুগে নারীশিক্ষার বিকাশের জন্য কয়েকজন সম্রাট ‘জেনানা বিদ্যালয়’ অর্থাৎ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ওই বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র মেয়েরাই পঠনপাঠন করতে পারে। মহামতি আকবর নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য ফতেপুরসিক্রিতে অন্তঃপুরে মাদ্রাসা। প্রতিষ্ঠা করেন। বহু মহিলা ওই মাদ্রাসাতে সাহিত্য, কাব্য ও শিল্প বিষয়ে অধ্যয়ন করতেন।

[4] খ্যাতনামা বিদুষী মহিলা : মধ্যযুগের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা বিদুষী মহিলার বিষয়ে জানা যায়। যাঁরা সাহিত্যে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন—সুলতানা রাজিয়া, বাবর কন্যা গুলবদন, শাজাহান কন্যা জাহানারা বেগম, সােফিয়া, হামিদা, ফতেমা। এ ছাড়া মধ্যযুগে কয়েকজন বিদুষী হিন্দু মহিলার সম্পর্কেও জানা যায়। এঁরা হলেন মীরাবাই, রানি দুর্গাবতী প্রমুখ নারী। 

[5] নারীশিক্ষার সুযােগ হাস : মােগল যুগের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যযুগের নারীশিক্ষাও বাধাপ্রাপ্ত হয়। ইসলাম ধর্মের গোঁড়ামি ও সামাজিক রীতিনীতির অনুশাসনে হিন্দুধর্ম ও হিন্দুসমাজও অনেকখানি রক্ষণশীল হয়ে পড়ে। ফলে হিন্দু মহিলারা শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞিত হতে থাকে। কতিপয় ধনী ও অভিজাত পরিবারের মহিলারা শিক্ষার আঙিনায় আসে। বাকিরা অশিক্ষার অন্ধকারে তলিয়ে যায়।দিতেন না। তবে হিন্দু রাজা, জমিদার ও বিত্তবান ব্যক্তিরা হিন্দু শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনার জন্য অর্থ সাহায্য করতেন।

[6] শিক্ষার সুযােগ: মধ্যযুগের হিন্দু শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে শূদ্র ছাড়া অন্য সব বর্ণের হিন্দুরা শিক্ষার সুযােগ লাভ করত। তবে বৌদ্ধরা তাদের পাঠশালায় সকল বর্ণের শিক্ষার্থীকেই পাঠ গ্রহণের সুযােগ দিতেন। 

[7] শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক : মধ্যযুগের হিন্দু শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক খুবই মধুর ছিল। শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব কম থাকায় ওই সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের ব্যক্তিগত ও তত্ত্বাবধানে শিক্ষার সুযােগ লাভ করত।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment