মধ্যযুগের ইসলামিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসার ভূমিকা আলােচনা করাে
উত্তর:
ইসলামিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসার ভূমিকা :
ইসলামিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল মাদ্রাসা। মাদ্রাসা হল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্র। মধ্যযুগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক-একটি মাদ্রাসার এক-একটি বিশেষ বিষয়ে খ্যাতি ছিল। এই কারণে শিক্ষার্থীরা এক মাদ্রাসা থেকে অন্য মাদ্রাসায় যেত। মক্তবের ন্যায় অধিকাংশ মাদ্রাসা মসজিদের পাশাপাশি গড়ে উঠত। তবে মসজিদ ছাড়াও পৃথক স্থানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার বর্ণনা পাওয়া যায়। মাদ্রাসা’ শব্দটি একটি আরবি শব্দ ‘dars’ থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘Dars’-এর অর্থ হল ‘লেখাপড়ার স্থান’ (A place where lecture is given or a lesson is taught) সুতরাং, মাদ্রাসা হল উচ্চশিক্ষার স্থান’ বা ‘প্রতিষ্ঠান। ইসলামিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসার ভূমিকা এখানে আলােচনা করা হল—
(1) মাদ্রাসা স্থাপনের উদ্দেশ্য | মাদ্রাসা স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের উপযােগী শিক্ষাদান করা, কোরানের বিষয়বস্তু পাঠ করে, তা উপলব্ধি করা এবং সৎ, ধার্মিক, চরিত্রবান মানুষ গড়ে তোেলা। |
(2) মাদ্রাসার অবস্থান | সাধারণত মাদ্রাসাগুলি মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকত। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসকগােষ্ঠীর প্রতিষ্ঠিত রাজধানীকে কেন্দ্র করে মসজিদের নিকটবর্তী স্থানে মাদ্রাসাগুলি গড়ে তােলা হত। |
(3) মাদ্রাসায় ভরতির অনুষ্ঠান | মক্তবের পাঠ শেষ হলেই শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ভরতির জন্য আসত। মাদ্রাসায় ভরতির সময়অন্য কোনাে অনুষ্ঠান হত না। |
(4) পৃষ্ঠপােষকতা | রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনাে শিক্ষা বিভাগ না-থাকায় মধ্যযুগে মাদ্রাসা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকতেন বেসরকারি পরিচালন সংস্থা অথবা প্রতিনিধি থানীয় ব্যক্তিরা। আর্থিক অনুদান ছাড়াও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার জন্য জমি প্রদানেরও ব্যবস্থা ছিল। |
(5) পাঠক্রম | মাদ্রাসাগুলিতে দু-ধরনের পাঠক্রম অনুসরণ করা হত। ধর্মনিরপেক্ষ পাঠক্রম এবং ধর্মীয় পাঠক্রম। ধর্মনিরপেক্ষ পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল আরবি ব্যাকরণ, গদ্য, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগােল, আইন, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, কৃষিবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে আরবি ও ফারসি ভাষা চর্চা করা হত। অন্যদিকে ধর্মীয় পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল কোরানের অংশ, হজরত মহম্মদের বাণী, ইসলামিক আইন, হাদিস ও তার ব্যাখ্যা, সুফি মতবাদ ইত্যাদি। |
(6) শিক্ষণ পদ্ধতি | মাদ্রাসাতে শিক্ষকগণ বক্তৃতা পদ্ধতিতে পাঠদান করতেন। মুখস্থ ছিল শিখনের অন্যতম পদ্ধতি। আত্মশিখনের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হত। শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা অনুযায়ী শিক্ষালাভ করত। মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মূলত মৌখিক |
(7) শৃঙ্খলা | মাদ্রাসাতে কঠোরভাবে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হত। ইসলামের নির্দেশানুসারে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট অনুযায়ী নমাজ পড়ত। ধর্মীয় এবং সামাজিক কর্তব্যগুলি পালন করত। অনৈতিক আচরণের জন্য শিক্ষার্থীদের কঠোর শাস্তি গ্রহণ করতে হত। |
(8) শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক | মাদ্রাসার শিক্ষা ছিল সম্পূর্ণরূপে আবাসিক। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একসাথে বসবাস করত। একে অপরের সান্নিধ্যে আসার সুযােগ পেত। ফলে তাদের মধ্যে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক গড়ে উঠত। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মূল্যবােধ অনুযায়ী অন্যের সাথে আচার-আচরণে অগ্রসর হতেন। |
মন্তব্য :
উপরােক্ত আলােচ্য বিষয়সাপেক্ষে বলা যায় যে, মাদ্রাসা হল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। বিত্তবানদের অর্থে স্থাপিত ও পরিচালিত মাদ্রাসার শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। বিত্তবানরা শিক্ষকদেরকে ভাতা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তিও দিতেন। মধ্যযুগে উচ্চশিক্ষার বিস্তারে মাদ্রাসার অবদান অনস্বীকার্য।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।