দশম শ্রেনী (মাধ্যমিক) Class 10 Bengali Madhyamik Bengali Suggestion 2023 | বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ) MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর । মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন

Madhyamik Bengali Suggestion 2023 | বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ) MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর । মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন

Madhyamik Bengali Suggestion 2023  ” মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৩ | বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ) MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik / WB Madhyamik / MP Exam Class 10 Exam / West Bengal Board of Secondary Education – WBBSE Madhyamik Exam / Madhyamik Class 10th / Class X / Madhyamik Pariksha) পরীক্ষায় এখান থেকে কিছু প্রশ্ন অবশ্যই থাকবে । সে কথা মাথায় রেখে Wbshiksha.com এর পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দের জন্য় অতি আবশ্যক কিছু প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন

বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ)

Madhyamik Bengali Suggestion 2023 | মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৩ | বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ)

সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখাে  (প্রশ্নের মান ১)

১। হরিদার ঘরে আড্ডা দিত — 

(ক) দুই জন

(খ) পাঁচ জন।

(গ) চার জন

(ঘ) ছয় জন । 

উত্তর – (গ) চার জন

৩। সন্ন্যাসী জগদীশ বাবুর বাড়িতে ছিলেন – 

(ক) সাত ঘন্টা।

(খ) সাত দিন 

(গ) সাত বছর

(ঘ) সাত মাস 

উত্তর – (খ) সাত দিন 

৪।‘খুব হয়েছে হরি এইবার সরে পড়’ -কথাটি বলেছে – 

(ক) ভবতােষ।

(খ) হরিদা 

(গ) কাশীনাথ

(ঘ) জমিদার।

উত্তর – (গ) কাশীনাথ 

৫। বাসের ড্রাইভারের নাম ছিল –

(ক) মহেশ।

(খ) রমেশ । 

(গ) নিশিনাথ 

উত্তর – (ঘ) কাশীনাথ

৬। বাঈজীর ছদ্মবেশে হরিদার রােজগার হয়েছিল — 

(ক) আট টাকা দশ আনা 

(খ) আট টাকা সাত আনা 

(গ) দশ টাকা দশ আনা। | 

(ঘ) দশ টাকা আট আনা 

উত্তর – (ক) আট টাকা দশ আনা 

৭। জগদীশবাবু কেমন স্বভাবের মানুষ ছিলেন – 

(ক) কপট

(খ) উদার 

(গ) বিকৃত

(ঘ) কৃপণ 

উত্তর – (ঘ) কৃপণ 

৮। সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান —

(ক) দু দিন।

(খ) তিন দিন

(গ) পাঁচ দিন

(ঘ) এক দিন

উত্তর – (ঘ) এক দিন

৯। বিরাগী আসলে ছিলেন – 

(ক) হরিদা |

(খ) সন্ন্যাসী 

(গ) পাগল

(ঘ) বাঈজী।

উত্তর – (ক) হরিদা |

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর (প্রশ্নের মান ১)

1. “হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম।”—কীসের গল্প?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন। হরিদার কাছে সেই সন্ন্যাসীর গল্পই করা হয়েছিল।

2. মাস্টারমশাই যখন জানতে পারলেন হরিদা পুলিশ সেজেছিল তখন কী করেছিলেন?

উত্তরঃ মাস্টারমশাই যখন জানতে পারলেন যে হরিদা নকল পুলিশ সেজে ঘুষ নিয়ে ছেলেদের ছেড়েছে তখন তিনি একটুও রাগ করলেন না বরং তারিফ করলেন হরিদার বহুরূপী সাজের।

3. “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস” দুর্লভ জিনিসটি কী?

উত্তরঃ দুর্লভ জিনিসটি হল জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো।

4. হরিদা সন্ন্যসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে কী বলা হয়েছিল?

উত্তরঃ হরিদা সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে বলা হয়েছিল সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো দুর্লভ জিনিস। একমাত্র জগদীশবাবু ছাড়া কাউকেই সন্ন্যাসী তার পায়ের ধুলো দেননি।

5. কীভাবে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পেয়েছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর জন্য একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে খড়মজোড়া সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরতেই সন্ন্যাসী বাধ্য হয়ে নিজের পা এগিয়ে দেন। সেই সুযোগে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়ে নেন।

6. সন্ন্যাসী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু কী করেছিলেন?

উত্তরঃ সন্ন্যাসী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তাঁকে দিয়েছিলেন আর সন্ন্যাসীর ঝোলায় জোর করে একশো টাকার একটা নোট ফেলেছিলেন।

7. “সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন”–সন্ন্যাসী কী দেখে হাসলেন?

উত্তরঃ সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর হাতে একশো টাকার একটা নোট দেখে হাসলেন।

8. হরিদার ঘরটা কীরকম ছিল এবং সেখানে কী হত?

উত্তরঃ সরু এক গলির মধ্যে হরিদার ছোটো একটা ঘর ছিল। সেখানে সকাল-সন্ধ্যা লেখকদের আড্ডা বসত। চা, চিনি, দুধ তারাই আনতেন। হরিদা শুধু আগুনের আঁচে জল ফুটিয়ে দিত।

9. হরিদা কীভাবে প্রতিদিনের অন্নসংস্থান করে?

উত্তরঃ হরিদা বহুরূপী সেজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় বহুরূপী দেখে কেউ কেউ এক-আনা, দু-আনা বকশিস দেয়। সেই দিয়ে হরিদা তার অন্নসংস্থান করে।

10. হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী?

উত্তরঃ হরিদা ছিল পেশায় বহুরূপী। সে কখনও পাগল সাজত, কখনও বাউল, কোনোদিন কাপালিক, কখনও বা বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা। এটাই তার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য।

11. “দুটো একটা পয়সাও ফেলে দিচ্ছে”—কারা, কী জন্য পয়সা ফেলে দিচ্ছে?

উত্তরঃ হরিদা পাগল সাজলে বাসের যাত্রীরা দুটো একটা পয়সা ছুড়ে দিচ্ছিল।

12. “এইবার সরে পড়ো”- কে, কাকে সরে পড়তে বলে?

উত্তরঃ বাস ড্রাইভার জানত হরি বহুরূপী সাজে। আর তাই সেদিন হরি পাগল সাজলে বাস ড্রাইভার তাকে চিনতে পেরে সেখান থেকে সরে যেতে বলেছিল।

13. পাগলকে বহুরুপী বুঝতে পেরে লোকজন কী করে?

উত্তরঃ পাগল আসলে বহুরূপী তা বুঝতে পেরে বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে কেউ বিরক্ত হয় আবার কেউ এই ভেবে অবাক হয় যে লোকটা এমন সেজেছে যে তাকে চেনাই যাচ্ছে না।

14. কোন্ বহুরুপী বেশে হরিদার রোজগার বেশি হয়েছিল?

উত্তরঃ হরিদা একবার রুপসি বাইজি সেজে দোকানে দোকানে গিয়ে ফুলসাজি এগিয়ে দিচ্ছিল। সবাই এক সিকি করে সেই সাজিতে ফেলছিল। এইভাবে হরিদা মোট আট টাকা দশ আনা পেয়েছিল।

15. পুলিশ সেজে হরিদা কী করেছিল?

উত্তরঃ হরিদা একবার পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিল আর সেখান থেকে চারটে স্কুলের ছেলেকে ধরেছিল।

16. পুলিশ সেজে হরিদা স্কুলের কত জন ছাত্রকে ধরেছিল?

উত্তরঃ পুলিশ সেজে হরিদা স্কুলের চারজন ছাত্রকে ধরেছিল।

17. স্কুলের ছেলেদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে স্কুলের মাস্টার কী করেছিলেন?

উত্তরঃ স্কুলের মাস্টার ছেলেদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বহুরূপী বেশে নকল পুলিশকে আট আনা ঘুষ দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন।

18. মাস্টারমশাই যখন জানতে পারলেন হরিদা পুলিশ সেজেছিল তখন কী করেছিলেন?

উত্তরঃ মাস্টারমশাই যখন জানতে পারলেন যে হরিদা নকল পুলিশ সেজে ঘুষ নিয়ে ছেলেদের ছেড়েছে তখন তিনি একটুও রাগ করলেন না বরং তারিফ করলেন হরিদার বহুরূপী সাজের।

18. লেখক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার কাছে কোন ঘটনা শোনাতে এসেছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর বাড়িতে খুব উঁচুদরের এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন এবং তিনি সাত দিন ধরে ছিলেন। এই খবরটাই লেখকরা হরিদাকে শোনাতে এসেছিলেন।

বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ) গল্প প্রশ্ন উত্তর – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৩ – Madhyamik Bengali Suggestion 2023

কমবেশি ৬০ টি শব্দের মধ্যে উত্তর লেখো (প্রশ্নমান – ৩)

১। হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম, হরিদা কে ? তার কাছে বক্তারা কী গল্প করেছিল ? অথবা, ‘খুব উঁচু দরের সন্ন্যাসী।’—সন্ন্যাসীর পরিচয় দাও। অথবা, বাঃ, এ তাে বেশ মজার ব্যাপার’—কোন ঘটনাকে মজার ব্যাপার বলা হয়েছে ? অথবা, জগদীশ বাবু যে কী কান্ড করেছেন, শশানেন নি হরিদা ?’— জগদীশ বাবু কী কান্ড করেছেন ?

উত্তর –  প্রথিতযশা লেখক সুবােধ ঘােষের লেখা বহুরূপী’ গল্পের মুখ্য চরিত্র হল। হরিদা। তিনি পেশায় একজন বহুরূপী।

গল্প কথক ও তাঁর বন্ধুরা মিলে হরিদার বাড়িতে আড্ডা দেওয়ার সময় জগদীশ বাবুর বাড়িতে হিমালয় থেকে যে এক সন্ন্যাসী এসেছেন তা জানায়। সেই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গিরিগুহায় থাকেন এবং বছরে শুধুমাত্র একটি হরিতকি খান, তার বয়স হাজার বছরেরও বেশি। তিনি এতই উঁচু দরের যে কাউকে পদধুলি দিতেন না। শেষ পর্যন্ত জগদীশ বাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সােনার বােল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরলেন। আর সেই ফাঁকে জগদীশ বাবু পায়ের ধুলাে নিয়েছিলেন। এই ঘটনাকেই মজার ঘটনা বলা হয়েছে।

২। হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে।” – হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য কী? অথবা, ‘হরিদার জীবন এই রকম বহুরূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে। – হরিদার জীবনের ‘বহুরূপের খেলার পরিচয় দাও। অথবা, এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরুপী হরিদা। – হরিদার বহুরূপীতার পরিচয় দাও।

উত্তর –  প্রখ্যাত লেখক সুবােধ ঘােষের লেখা বহুরূপী’ গল্পের মুখ্য চরিত্র হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয়েছে। হরিদা ব্যক্তিগত জীবনে ইচ্ছা। করলেই ছােটোখাটো চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন। তা না করে। তিনি সপ্তাহে একদিন কখনাে পাগল, বাইজী, পুলিশ, বিরাগী, বাউল, কখনও কাবলিওয়ালা, সাহেব প্রভৃতি সাজে সাজেন। এইভাবে হরিদার রােজগার সামান্য হলেও তাঁর জীবনে বৈচিত্র্য এনে দেয় এই পেশাই।।

৩। ‘মােট আট টাকা দশ আনা পেয়েছিলেন। কী কারণে কে এই টাকা পেয়েছিলেন ? অথবা, বাঈজীর ছদ্মবেশে সেদিন হরিদার রোজগার মন্দ হয় নি । কীভাবে হরিদা রােজগার করেছিল তা বর্ণনা করাে।

উত্তর – সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পের অন্যবদ্য সাহিত্য চরিত্র হরিদা টাকাটা পেয়েছিলেন।

হরিদা ছিলেন পেশায় একজন বহুরূপী। তাঁর পেশা ছিল তাঁর জীবনের সত্য। কিন্তু তবুও জীবিকা নির্বাহে কখনো বাউল, কখনো উন্মাদ, কখনো কাপালিক বা কাবুলিয়ালার ছদ্মবেশে তিনি সং সেজে পথে নামতেন। একদিন সন্ধ্যাবেলায় শহরের ব্যস্তমুখর সড়কপথে এক রূপসী বাঈজির আগমন পথচলতি জনমানসে কৌতূহল সৃষ্টি করে। ছদ্মবেশী হরিদার ঘুঙুরের ঝনঝন শব্দে শহরে আগত নবাগতদের বিস্মিত, বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে। অবশ্য পরিচিত এক দোকানদার তাঁর প্রকৃত পরিচয় উন্মোচিত করে দেয় ঠিকই, কিন্তু ছদ্মবেশের আড়ালে চরিত্রের মধ্যে নিখুঁত ভাবে প্রাণসঞ্চার করতে পেরেছিলেন বলেই মুগ্ধ পথচারীদের কাছ থেকে উপহারস্বরূপ তিনি টাকাটা পেয়েছিলেন।

৪। অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না” – হরিদার ভুলটি কী ছিল ? বক্তা কেন এমন মন্তব্য করেছিলেন ?                

উত্তর –  সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।

হিমালয়প্রবাসী একজন ভণ্ড সন্ন্যাসী এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি জগদীশবাবুর কাছে থেকে একশ’ টাকা ও একটি সোনার বোল লাগানো খড়ম প্রণামী হিসেবে নিয়েছেন শুনে হরিদা একদিন এক বিরাগীর ছদ্মবেশে তাঁর বাড়িতে হাজির হন। বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদার জীবনদর্শন, আচরণ ও পাণ্ডিত্য জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করায় তিনি খুশি হয়ে তাঁকে একশ’ এক টাকা প্রণামী দিতে চান। কিন্তু খাঁটি সন্ন্যাসীর মতই হরিদা তা অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। গল্পকথক হরিদার এই আচরণকে ‘ভুল’ বলে উল্লেখ করেছেন। কথক জানতেন আর পাঁচটা পেশার মতো বহুরূপী সেজে হরিদার তেমন উপার্জন হয় না। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন, সৎ, নির্লোভ এই ব্যতিক্রমী মানুষটি চরম অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে জীবনযাপন করেন। সং সেজে রাস্তায় বেরোলে সহৃদয় পথচারীরা যে এক আনা-দু আনা বখশিস দেন, তা দিয়ে তাঁর দুঃসহ অভাব ঘোচে না। তাই এই অতিরিক্ত অর্থ পেয়েও না নেওয়ার বিলাসিতা, রোজকারের অনটনকে অতিক্রম করে সামান্য স্বাচ্ছন্দ্যের প্রত্যাশা বিলীন হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতকে লেখকের ‘ভুল’ বলে মনে হয়েছে। 

৫। “তাতে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।” – ‘ঢং’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কীসে ঢং নষ্ট হয়ে যায় ?                                

উত্তর – সমাজ-বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পের অন্যবদ্য সাহিত্য চরিত্র হরিদা ছিলেন পেশায় একজন বহুরূপী। কিন্তু অর্থোপার্জন তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না, বরং নিজের পেশায় তাঁর শিল্পসত্তার আবেগ ছিল অনেক বেশি। তাই একজন দক্ষ শিল্পীর মতো তিনি অভিনীত চরিত্রের সত্তাতে বিলীন হয়ে যেতেন। জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছধ্মবেশে হরিদা অভিনয়ের মাধ্যমে যে চরিত্রধর্ম ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তাকেই তিনি ‘ঢং’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা যে বিরাগীর ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন পার্থিব মোহের প্রতি উদাসীন। তাই হরিদার এমন মনে হয়েছিল সামান্য একশ’ এক টাকার লোভ সংবরণ করতে না পারলে বিরাগীর আচরণের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের কোন সামঞ্জস্য থাকবে না। আর্থিক প্রাপ্তি তাঁর সম্পূর্ণ অভিনয়কে ব্যর্থ করে দেবে, শিল্পের প্রতি তাঁর দরদকে কলুষিত করবে, হরিদা তা বুঝতে পারেন।

আসলে শিল্পই হরিদার জীবনের একমাত্র সত্য। অভিনীত চরিত্রে একীভূত হওয়াই শিল্পীর ধর্ম, যে ধর্ম নীলকন্ঠ হতে শেখায়। তাই তিনি অনায়াসে টাকার থলি ত্যাগ করেন, কিন্ত শিল্পগুণ বিসর্জন দিতে পারেন না।

৬। “তবে কিছু উপদেশ শুনিয়ে যান” – উক্তিটি কার ? তিনি কী উপদেশ শুনিয়েছিলেন ?

উত্তর – সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে গৃহীত প্রশ্নদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন এলাকা্র সচ্ছ্ল ব্যক্তি জগদীশবাবু।

হিমালয়প্রবাসী একজন ভণ্ড সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর কাছে থেকে একশ’ টাকা ও একটি সোনার বোল লাগানো খড়ম প্রণামী হিসেবে নিয়েছেন শুনে হরিদা একদিন এক বিরাগীর ছদ্মবেশে তাঁর বাড়িতে হাজির হন। বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদার জীবনদর্শন, আচরণ ও পান্ডিত্য জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করায় তিনি মন্তব্যটি করেন।জগদীশবাবুর আবেদনের প্রত্যুত্তরে বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা সাধক জীবনের সারসত্যকে উদ্ভাসিত করে তোলেন। তিনি জগদীশবাবুকে উপদেশ দিয়ে বলেন, মানুষের জীবনে ‘ধন-জন-যৌবন’ কিছুই চিরন্তন নয়, বরং এগুলো হল সুন্দর একেকটি প্রবঞ্চনা। তাই পার্থিব মোহ ত্যাগ করে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। মায়া-মোহ-মমতা-দেহসুখের মতো জাগতিক সুখের বন্ধন থেকে মুক্তি পেলেই সাধক জীবনে উত্তরণ ঘটে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ব্যাতীত অন্য কোন চিন্তাই সাধকের মনে স্থানলাভ করে না। বিরাগীবেশী হরিদা বলেন, ঈশ্বরলাভের মধ্য দিয়েই সৃষ্টির সকল ঐশ্বর্য আহরণ করা সম্ভব।

৭। “আমার বুকের ভেতরেই যে সব তীর্থ” – উক্তিটি কার ? এর মর্মার্থ বুঝিয়ে দাও। 

উত্তর – সমাজ-বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পের অন্যবদ্য সাহিত্য চরিত্র হরিদা উক্তিটি করেছিলেন। বিবাগীর ছদ্মবেশে হরিদার জীবনদর্শন, আচরণ ও  পান্ডিত্য জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করায় তিনি খুশি হয়ে তাঁকে তীর্থভ্রমণ বাবদ একশ’ এক টাকা প্রণামী দিতে চান। কিন্তু খাঁটি সন্ন্যাসীর মতই হরিদা তা অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। হরিদা যে বিবাগীর ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন পার্থিব মোহের প্রতি উদাসীন। তাই একশ’ এক টাকা প্রণামীর লোভ সংবরণ করতে না পারলে বিবাগীর আচরণের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের সামঞ্জস্য থাকবে না, হরিদার এমন মনে হয়েছিল। আর্থিক প্রাপ্তি তাঁর সম্পূর্ণ অভিনয়কে ব্যর্থ করে দেবে, শিল্পের প্রতি তাঁর দরদকে কলুষিত করবে, হরিদা তা বুঝতে পারেন। আসলে শিল্পই হরিদার জীবনের একমাত্র সত্য। অভিনীত চরিত্রে একীভূত হওয়াই শিল্পীর ধর্ম, যে ধর্ম নীলকন্ঠ হতে শেখায়। বিবাগী হরিদা সন্ন্যাসীর চরিত্র ধর্মে আচ্ছন্ন হয়েই জগদীশবাবুকে বিনীতভাবে বলেছিলেন, তাঁর হৃদয়ের অন্তঃস্থলই তাঁর তীর্থস্থান, যেখানে একজন প্রকৃত শিল্পীর অধিষ্ঠান।

৮।  ‘শুনেছেন হরিদা, কান্ডটা কী হয়েছে?’ – কাদের এই উক্তি ? কান্ডটা কী হয়েছিল ? 

উত্তর – সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পে গল্পকথক ও তাঁর বন্ধু অনাদি, ভবতোষরা হরিদাকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করেছেন।

একদিন হরিদা, গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারেন, এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে সম্প্রতি হিমালয় আগত একজন সন্ন্যাসী আতিথ্যগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বয়স নাকি হাজার বছরের বেশি। সর্বত্যাগী সেই সন্নাস্যী সারাবছরে শুধু একটিমাত্র হরিতকি খান। তিনি এতটাই উঁচুদরের যে, কাউকে তাঁর পদধূলি গ্রহণ করতে দেন না। একদিন জগদীসবাবু তাঁর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে পায়ের সামনে ধরলে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিয়েছিলেন, এবং এইভাবে একমাত্র জগদীশবাবু তাঁর পদধূলি লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। এমনকি বিদায়কালে তিনি তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে প্রণামী বাবদ একশ’ টাকা গ্রহণ করেছিলেন।পার্থিব জীবনের সুখ – দুঃখ থেকে যিনি মোক্ষলাভ করেন, তিনিই প্রকৃত সন্ন্যাসী। হিমালয়বাসী সন্ন্যাসীর আচরণে একটা কপটতা ছিল, ভন্ডামি ছিল। তাই কথক ও তাঁর বন্ধুরা সন্ন্যাসীর এহেন আচরণকে পরিহাসচ্ছলে ‘কান্ড’ বলে উল্লেখ করেছেন।

৯। ‘গল্প শুনে গম্ভীর হয়ে গেল হরিদা” – কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল ?  

উত্তর – সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।

একদিন হরিদা, গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারেন, এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে সম্প্রতি হিমালয় আগত একজন সন্ন্যাসী আতিথ্যগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বয়স নাকি হাজার বছরের বেশি। সর্বত্যাগী সেই সন্নাস্যী সারাবছরে শুধু একটিমাত্র হরিতকি খান। তিনি এতটাই উঁচুদরের যে, কাউকে তাঁর পদধূলি গ্রহণ করতে দেন না। একদিন জগদীসবাবু তাঁর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে পায়ের সামনে ধরলে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিয়েছিলেন, এবং এইভাবে একমাত্র জগদীশবাবু তাঁর পদধূলি লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। এমনকি বিদায়কালে তিনি তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে প্রণামী বাবদ একশ’ টাকা গ্রহণ করেছিলেন।এই গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন।

বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ) গল্প প্রশ্ন উত্তর – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৩ – Madhyamik Bengali Suggestion 2023

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (প্রশ্নমান – ৫)

১। “আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়?” – কাকে একথা বলা হয়েছে? তাকে একথা বলা হয়েছে কেন? 

উত্তর – ‘বহুরুপী’ গল্পে বিরাগী হরিদা জগদীশবাবুকে একথা বলেছেন।

হরিদা ছিলেন দরিদ্র, সহজ-সরল এবং সৎ। রুজি-রােজগারের জন্য মাঝে মধ্যেই বহুরূপী সেজে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন। এরকম একদিন বিরাগী। সন্ন্যাসীর বেশে তিনি সেখানকার অবস্থাসম্পন্ন জগদীশবাবুর বাড়িতে। গিয়েছিলেন। কিন্তু জগদীশবাবুর মধ্যে একটি অহংকার ছিল, কারণ তিনি ছিলেন। এগারাে লক্ষ টাকার মালিক। যে কারণে বাড়ির বারান্দা থেকেই তিনি বিরাগীকে। অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। বিরাগী হরিদা সেটা ভালাে মনে নেননি। যে কারণে। জগদীশবাবুকে উক্ত উক্তিটি করেছিলেন। 

২ “দোকানদার হেসে ফেলে … হরির কান্ড।” – হরি কী কান্ড |করেছিল? দোকানদার কেন হেসেছিল? অথবা, “এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী। হরিদা” – দুটি ঘটনার বিবরণ দাও। অথবা, “শহরে যারা নতুন এসেছে, তারা দুই চোখ বড়াে করে তাকিয়ে থাকে।” – কোন ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে? ঘটনাটি বর্ণনা করাে

উত্তর –  কথা সাহিত্যিক সুবােধ ঘােষের লেখা বহুরুপীর গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা। একজন বহুরূপী পেশার মানুষ। গতে বাধা জীবন হরির পছন্দ নয় বলে সে সপ্তাহে একদিন নানা বৈচিত্র্যময় বেশ ধারণ করে লােককে মােহিত করে। রােজগার করে। তারই মধ্যে দেখা যায় কোনােদিন পাগল, কোনােদিন বাঈজা, পুলিশ কিংবা বিরাগী সাজে।

একদিন সন্ধ্যাবেলা রূপসী বাঈজী সেজে সন্ধ্যাবেলা নাচতে নাচতে ঘুঙুরের শব্দ তুলে শহরে বেশ মজাদার পরিবেশ রচনা করেছিল। সকলেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। দোকানদার হেসে ফেলে – হরির কান্ড।| আর একদিন পুলিশ সেজে লিচু বাগানে স্কুলের চারটি ছেলেকে ধরে। মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে আট আনা ঘুষ নিয়ে ছেড়েছিল।

৩ । বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরি বহুরূপীর চরিত্রটি আলােচনা করাে। অথবা, “হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে। – কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে হরি বহুরূপীর অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দাও।

উত্তর – প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবােধ ঘােষের ‘কিশাের গল্প সুবােধ ঘােষ’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বহুমুখী’ শীর্ষক ছােটগল্পে হরি বহুরুপীকে কেন্দ্র করে কাহিনী বিস্তৃত হয়েছে। প্রধান চরিত্র হরির চরিত্রের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ পেয়েছে –

রুটিন বাঁধা জীবন নাপছন্দ : বহুরূপী হরি দরিদ্র হলেও দক্ষতার কারণে হয়তাে অফিসের কর্মী কিংবা দোকানে জিনিস বিক্রেতার কাজ পেতেন। কিন্তু ঘড়ির কাটার সামনে সময় বেঁধে দিয়ে আর নিয়ম করে নিয়ে রােজই একটা চাকরীর কাজ করে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ রুটিন বাঁধা জীবনকে সে পছন্দ করে না।।

দক্ষ অভিনেতা : একজন প্রকৃত পেশাদার বহুরূপীকে হতে হয় দক্ষ অভিনেতা। সপ্তাহে একদিন বা দুদিন হরি বহুরূপী নানা সাজে বেরােয় – তাতে তার অভিনয় দক্ষতার পরিচয় মেলে। পাগল, বাঈজী, বাউল, কাপালিক, পুলিশ। থেকে বিরাগী সব বেশেই তিনি দক্ষ। পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষকের কাছে প্রকৃত পুলিশ বলে মনে হওয়া তার অভিনয় দক্ষতারই পরিচয় দেয়।

বন্ধুবৎসল :  অনাদি, ভবতােষের কথকের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের পরিচয় মেলে। তাদের কাছে পরামর্শ করে জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়া, রােজকার চায়ের আড্ডা সে পরিচয়কেই বহন করে।

নির্লোভ ও মােহমুক্ত সন্ন্যাসী সত্তার অধিকারী : দরিদ্র গৃহী হয়েও হরির নির্লোভ মানসিকতা তাকে উচ্চতর আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। জগদীশবাবুর। বাড়িতে একশ টাকার প্রণামী তাই অনায়াসেই উপেক্ষা করে চলে আসে। বন্ধুদের কাছে তার জবাবদিহি হিসাবে অনায়াসে তাই বলতে পারে – “একজন বিরাগী। সন্ন্যাসী হয়ে টাকা-ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল।” অর্থাৎ ছদ্মবেশের আড়ালে তার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল সাংসারিক মােহমুক্ত এক বিরাগী সত্তা।
দার্শনিক সত্তার অধিকারী প্রকৃত মানুষ : সহজ সরল দরিদ্র এই মানুষটি  জীবনদর্শণে যেন দার্শনিক সত্তার পরিচয় দেন। অল্পে খুশি মানুষটি জীবনবােধে নিজস্ব ধারণায় প্রতিষ্ঠিত। গল্পের শেষে তার উক্তিটি স্মরণযােগ্য – “খাঁটি মানুষ তাে নয়, এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে।”

সর্বোপরি বলা যায়, হরি বহুরূপী প্রকৃত একজন সত্যাদর্শী মানুষ, যে অনেক বহুরূপী মানুষের ভীড়ে বহিরঙ্গে বহুরূপী হয়েও ভেতরের মানব সত্তাটিকে বিকৃত করেনি কোনােভাবেই। এখানেই চরিত্রটি আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসন লাভ করে নেয়।

4. “গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা” – কোন গল্প কার কাছ থেকে শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা? তাঁর গম্ভীর হওয়ার সম্ভাব্য কারণ কী?

উত্তর – আধুনিক ছােটোগল্পকার সুবােধ ঘােষের ‘বহুরূপী’ গল্পে বহুরূপী হরিদা গল্পের কথক অর্থাৎ লেখকসহ ভবতােষ ও অনাদির কাছ থেকে গল্প শুনে গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন।।

গল্পটি হল জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসীর আগমন ও সন্ন্যাসীর প্রতি জগদীশবাবুর সেবা ও দান ধ্যানের প্রাচুর্য। গল্পকথক হরিদাকে জানান যে জগদীশবাবুর বাড়িতে এক উচু দরের সন্ন্যাসী সাতদিন ব্যাপী অবস্থান করেছিলেন। সন্ন্যাসীর বয়স হাজারের বেশি বলে মনে হয়। হিমালয়ের গুহাতে থাকেন। সারাবছরে শুধুমাত্র একটি হরিতকি খান। তিনি এমনই ভয়ানক দুর্লভ সন্ন্যাসী যে সহজেই কাউকে চরণধুলি দেন না। কেবলমাত্র জগদীশবাবু কাঠের খড়মে সােনার বােল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে নিবেদন করে পদধূলি অরজন করেছিলেন ।  তাছাড়া সন্ন্যাসীকে বিদায় নেওয়ার সময় একশাে টাকার একটা নোট জোর করে সন্ন্যাসীর ঝােলার ভেতর ফেলে দিয়েছিলেন এবং সন্ন্যাসী মুচকি 

হেসে বিদায় নিয়েছিলেন। এই গল্প শুনে হরিদা অনেকক্ষণ  চুপ ও গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন।

হরিদা গম্ভীর ও চুপ হয়ে থাকার মধ্যে যে সম্ভাব্য কারণ তা ।

(ক) হরিদা সন্ন্যাসীর বেশে হাড় কৃপণ জগদীশবাবুর কাছ : অর্থ বাগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
(খ) জগদীশবাবুর মতােন হাড় কৃপণ মানুষ সন্ন্যাসীকে সে। খড়ম ও একশাে টাকা দিয়ে বিদায় দিয়েছিলেন শুনে হরিদা ম্বিস্মিত ও গম্ভীর হয়েছিলেন।

৫। বহরপী গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।

উত্তর – নামকরণের বিষয়টিও একটি শিল্প হয়ে ওঠে, কেন কেননা নামকরণ

শুধুমাত্র নামমাত্র নয়। লেখক চরিত্র কেন্দ্রিক, বিষয়কেন্দ্রিক, আঙ্গিকগত কিংবা ব্যঞ্জনাগত দিক থেকে নামকরণ করে পাঠকের কাছে তাঁর দক্ষতাকে তুলে ধরেন। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবােধ ঘােষের বহুমুখী’ গল্পটি তাই বিষয়গত বা। ব্যঞ্জনাগত দিক দিয়ে কতদুর সার্থক তা আলােচনা সাপেক্ষ।

আলােচ্যমান গল্পটির প্রথমেই পরিচয় পাই এক বহুরূপী চরিত্র যিনি হরি বহুমুখী নামে পরিচিত। কথকের প্রিয় হরিদা বেশ দক্ষ বহুমুখী ; কখনাে পাগল, বাইজী, বাউল, কাপালিক, পুলিশ কিংবা বিরাগী সেজে তিনি মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন সংসার বিরাগী শিল্পী-সন্ন্যাসী। জগদীশবাবুর বাড়িতে একজন এসেছিলেন যিনি সন্ন্যাসী হয়েও ধনসম্পদের মােহ ত্যাগ করতে পারেননি। কিন্তু তার কাছেই বিরাগী সেজে অবাক করে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে প্রকৃত বিরাগী মানুষ কিরকম হতে পারে। এখানেই হরি বহুরূপী তার বহুরূপী সত্ত্বার ভেতর লুকানাে প্রকৃত মানুষ – সংসারত্যাগী মােহমুক্ত মানুষের পরিচয় দিয়েছিলেন।

বহুরুপী বলতে বােঝায় যারা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে মানুষের মনােরঞ্জন করে রােজগার করেন। এটা তাদের পেশা। কিন্তু হরি যে ধরণের বহুরূপী সে অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। ফলে সংসার বিরাগীর অভিনয়টিতে তার প্রকৃত সত্ত্বাটিই প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

সামান্য রােজগার হলেও রুটিন বাঁধা চাকরি জীবনকে সে বেছে নেয়নি। ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর কাছ থেকে অনেক টাকার লােভকেও সে সংবরণ। করেছে অনায়াসে। তার প্রাপ্য আট-আনা বকশিশটুকুই প্রাপ্য বলে মেনে নিয়েছে। সে পড়ে থাকা একশ টাকার থলি সহজেই মাড়িয়ে চলে আসতে পারে। অথচ জগদীশবাবুর বাড়িতে পূর্বে আশ্রয়ধারী সন্ন্যাসী সােনা বাঁধানাে খড়ম আর একশ টাকার মােহ ত্যাগ করতে পারেনি। হরি বহুরুপী হলেও সে অনাদি ও ভবতােষকে টাকাটা উপেক্ষার কারণ হিসেবে বলেছে – “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে।” অর্থাৎ খাঁটি সন্ন্যাসী সত্ত্বাটিই তার কাছে সত্য বলে। প্রতিভাত হয়েছে।

অতএব দেখা যায় সমাজের মানুষের বাহ্যিক রূপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বহুরূপী সত্ত্বাটি থেকে মানুষ বেরােতে পারে না, সেখানে হরি বহুরূপী হয়েও প্রকৃত বিরাগীর মতাে মােহমুক্ত থাকতে পেরেছে। গৃহী হয়েও সে প্রকৃত মানুষ সত্ত্বার পরিচয় দিয়েছে

বৈপরীত্যের উপস্থাপনায় তাই বহুরূপী’ গল্পের নামকরণটি বিষয়ের সঙ্গে ব্যঞ্জনার মেলবন্ধনে অত্যন্ত সার্থক ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠেছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!