কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামো

কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামো
মাধ্যমিক শিক্ষা কাকে বলে ? মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের বক্তব্য আলােচনা করাে।

উত্তর:-

মাধ্যমিক শিক্ষা: সাধারণভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা বলতে বােঝায় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষা। তবে অনেক ক্ষেত্রে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে মাধ্যমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, সম্প্রতি মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক শিক্ষার কাঠামাে নির্ধারণের ক্ষেত্রে নবম-দশম শ্রেণিকেই মাধ্যমিক শিক্ষা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য

কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত সুপারিশগুলি করেছে 

[1] গণতান্ত্রিক নাগরিক তৈরি করার উদ্দেশ্যে শক্তিশালী সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

[2] সাহিত্য, কলা, শিল্প ও সাংস্কৃতিক দিকের প্রতি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ সৃষ্টি করা। 

[3] শিক্ষার্থীরা যাতে সার্থকভাবে সামাজিক অভিযােজনে সক্ষম হয়, সে ব্যাপারে তাদের সাহায্য করা। 

[4] শিক্ষার্থীদের কায়িক শ্রমের প্রতি মর্যাদার মনােভাব গড়ে তােলা এবং তাদের প্রত্যেকের ক্ষমতানুযায়ী উপযুক্ত কর্মমূলক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা। 

[5] শিক্ষার্থীদের নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং মূল্যবােধের বিকাশ ঘটানাে। 

[6] শিক্ষার্থীর নেতৃত্বের বিকাশে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে এবং সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দেওয়া। 

[7] মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে কমিশন কতকগুলি উপায়ের কথা বলেছে। যেমন— i. প্রত্যেকটি জেলার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন পরিকল্পনা করে পরবর্তী দশ বছরে তা কার্যকর করতে হবে; ii. প্রতিটি নতুন বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যাতে উন্নত হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে এবং চালু বিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। 

[8] মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হবে শিক্ষার সঙ্গে বৃত্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থাকে যুক্ত করে দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। 

[9] কমিশনের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষার আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ও জাতীয় সংহতি বােধের বিকাশ ঘটানাে।

কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো

কমিশনের মতে, এই শিক্ষা হবে মােট চার বছরের। এক্ষেত্রে কমিশন দুটি স্তরের সুপারিশ করে। যথা— (১) নিম্নমাধ্যমিক, (২) উচ্চমাধ্যমিক স্তর।

নিম্নমাধ্যমিক স্তর: প্রথমে ২ বা ৩ বছরে শিক্ষাকে বলা হয়েছে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে। এই পর্যায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়স স্তর এই শিক্ষার পর্যায়ে পড়ে।

উচ্চমাধ্যমিক স্তর: দ্বিতীয় পর্যায় ২ বছরের। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি। ১৬-১৮ বছর বয়স স্তর উচ্চমাধ্যমিক স্তর নামে পরিচিত।

কমিশনে আরও বলা হয়, নিম্নমাধ্যমিক-এর পর একটি বহিঃ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।

আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে নবম ও দশম শ্রেণিকে অর্থাৎ নিম্নমাধ্যমিক স্তরকে মাধ্যমিক শিক্ষা বলে গণ্য করা হয়। আর অন্যদিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বলে অভিহিত করা হয়।

মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি সময়োপযোগী এবং বাস্তবধর্মী হওয়ায় ভারতে এই সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment