মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করাে।

মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করাে।     Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশসমূহ : মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রয়ােজনীয়তার কথা বিবেচনা করে মাধ্যমিক শিক্ষার কয়েকটি লক্ষ্য স্থির করে। সেগুলি হল— 

[1] উপযুক্ত নাগরিক সৃষ্টি: কমিশনের মতে, শিক্ষার লক্ষ্য হবে। শিক্ষার্থীদের জাতীয় লক্ষ্যপূরণের সহায়ক সুযােগ্য নাগরিকরূপে গড়ে তােলা। অর্থাৎ, এমন একপ্রকার শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভাবীকালে দেশের সুযােগ্য নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনে সমর্থ হবে। 

[2] জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি: মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়ােজন যার ফলে তারা আগামী দিনে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে এবং জীবনের মান উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব পালনে আগ্রহী ও সমর্থ হয়। 

[3] গণসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানাে: মাধ্যমিক শিক্ষার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গণসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানাে। আর্থিক কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ এতদিন শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ দেশের সমৃদ্ধির জন্য গণসংস্কৃতির বিকাশ অপরিহার্য | 

[4] গণতান্ত্রিক মনােভাব গড়ে তােলা: স্বাধীন ভারতের বিকাশ ঘটাতে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা যাতে আগামী দিনে যােগ্য, সক্ষম সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারে তার জন্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনােভাব গড়ে তুলতে হবে।

[5] অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক ও বৃত্তিমূলক দক্ষতার উন্নতিসাধন করা। তাদের মধ্যে এমন মনােভাব গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা দেশের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসাধনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে।

[6] সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার অপর একটি লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিমূলক আগ্রহ ও প্রবণতার বিকাশ ঘটানাে | কারণ এগুলি ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। তা ছাড়া এগুলিকে বাদ দিয়ে কোনােভাবেই জাতীয় সংস্কৃতি গঠন করা যায় না।

[7] নেভূক্তদানের যােগ্যতা অর্জনে সহায়তা: কমিশনের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষার একটি লক্ষ্য হওয়া উচিত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নেতৃত্বদানের যােগ্যতা সৃষ্টি করা। এই উদ্দেশ্যে কমিশন সুপারিশ করে, সতেরাে বছর বয়স পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং পূণাঙ্গা মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহন করা প্রয়ােজন। এই শিক্ষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল— 

i. শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের সার্বিক বিকাশ, বৃত্তিমূলক যােগ্যতা অর্জন গণতান্ত্রিক নাগরিকতার বিকাশ ও নেতৃত্বদানের যােগ্যতা অর্জন সহায়তা। 

ii. উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রস্তুতি ও কর্ম ক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য প্রয়ােজনীয় সহায়ক শিক্ষাদানের মাধ্যমে ইচ্ছুকদের উৎসাহিত করা। 

[8] বয়ঃসন্ধিক্ষণের চাহিদাপূরণ : শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকালের দৈহিক মানসিক, প্রক্ষোভিক, সামাজিক বিভিন্ন বিকাশের ধারা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি নজর দিতে হবে। 

i. বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীরা খুবই কর্মমুখর হয়ে ওঠে। সেই কারণে মাধ্যমিক শিক্ষা যাতে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। 

ii. বয়ঃসন্ধিকালে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহযােগিতামূলক যৌথকর্মের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজের পক্ষে মঙ্গলময় আচার-আচরণে তারা যাতে অভ্যস্ত হয়, তার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

iii. বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষার্থীদের আবেগ ও প্রক্ষোভ যাতে বাঞ্ছিত পথে প্রশমিত হয়, তার জন্য মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক শিক্ষার আয়ােজন করতে হবে। 

iv. বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষার্থীদের যৌন কৌতুহল প্রশমনের জন্য মাধ্যমিক স্তরেই তাদেরকে সৃষ্টিধর্মী সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। 

[9] মানবিক গুণাবলির বিকাশ: মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য হবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা, কর্মপ্রেরণা জাগ্রত করা এবং বিভিন্ন ধরনের মানবিক গুণাবলির বিকাশসাধনে সহায়তা করা। এর জন্য সঠিকভাবে পাঠক্রম প্রণয়নও করতে হবে। 

[10] শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি: মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিদ্যালয়ের গতিশীল জীবনধারার সঙ্গে সহজভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ। মাধ্যমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। 

[11] নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন: মাধ্যমিক শিক্ষার আর-একটি লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যার ফলে তারা আগামী দিনে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারে এবং কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে অংশগ্রহণ করতে পারে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment