মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ

মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks

উত্তর:-

মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ

মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি নীচে উল্লেখ করা হল

[1] ভাষা: তিনটি ভাষা আবশ্যিক—মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা; হিন্দি ও ইংরেজি। যাদের মাতৃভাষা হিন্দি, তারা যে-কোনাে একটি ভারতীয় ভাষা শিখবে। এ ছাড়া আরও একটি প্রাচীন ভাষাকে ঐচ্ছিক হিসেবে নেওয়া যাবে৷ 

[2] গণিত: প্রচলিত গণিতের মধ্যে, যেমন— পাটিগণিত, জ্যামিতি, বীজগণিত, রাশিবিজ্ঞান, ক্যালকুলাস ও স্থানাঙ্ক জ্যামিতি ইত্যাদি বিভাগ আছে, এইগুলিকে সাম্প্রতিক করতে হবে। পুরােনাে পাঠ্যসূচির অনেক বিষয়, যেমন— সরল, উৎপাদক ইত্যাদিকে বাতিল করতে হবে। অভেদ, ত্রিভুজের সমাধান ইত্যাদিও বাতিল করতে হবে। Set ভাষার সাহায্যে জ্যামিতি, পাটিগণিত এবং বীজগণিতের মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব৷ 

[3] বিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীবনবিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান আবশ্যিক হিসেবে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

[4] সমাজবিজ্ঞান: ইতিহাস, ভূগােল ও পৌরবিজ্ঞান— এইসব শিক্ষার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় গভীরতা আনতে হবে। বর্তমানের সমস্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং প্রয়ােজনে এই বিষয়গুলিকে পৃথক বিষয় রূপে পড়াতে হবে। 

[5] চারুকলা বা হস্তশিল্প: এই পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে চিত্রকলা, অঙ্কন, ভাস্কর্য প্রভৃতি বিষয়। 

[6] কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা: কর্মশিক্ষার মধ্যে থাকবে কাঠের কাজ, ধাতুর কাজ, চামড়ার কাজ, সেরামিক, সাবান তৈরি, সেলাই, ইলেকট্রিক্যাল রিপেয়ারিং, মডেল তৈরি, সরল বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম তৈরি, ক্লাসঘর সাজানাে, বই বাঁধানাে, কার্পেট তৈরি, দর্জির কাজ প্রভৃতি।

মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়—[1] শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব গ্রহণ ভিত্তিক, [2] লিঙ্গ-ভিত্তিক, [3] সময়কালভিত্তিক, [4] মাধ্যমভিত্তিক এবং [5] অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক।

মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ

[1] দায়িত্বগ্রহণভিত্তিক: এই বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে দুভাগে ভাগ করা যায়

i. দিবা বিদ্যালয়: এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি থেকে যাতায়াত করে বিদ্যালয়ে পড়াশােনা করে। 

ii. আবাসিক বিদ্যালয়: এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বাসস্থানে থাকতে হয়। তাদের থাকা, খাওয়া, পঠনপাঠন সবই বিদ্যালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। 

[2] লিঙ্গভিত্তিক: এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিদ্যালয়গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— 

i. বালকদের বা পুরুষ-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়: এইপ্রকারের বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র বালকের পঠনপাঠনের সুযােগ থাকে।

ii. বালিকাদের বা মহিলা-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়: এসব বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র বালিকাদের পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা হয়৷ 

iii. সহ-শিক্ষা বিদ্যালয়: এইসব বিদ্যালয়ে বালক ও বালিকা উভয়ই ভরতি হতে পারে এবং পঠনপাঠন করতে পারে৷ 

[3] সময়কালভিত্তিক: শিক্ষার সময়কালকে ভিত্তি করে এই বিভাগ করা হয়, যেমন— 

i. জুনিয়ার বিদ্যালয়: এখানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে। 

ii. মাধ্যমিক বিদ্যালয়: এখানে সাধারণত পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের ব্যবস্থা থাকে। 

iii. উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়: এখানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের ব্যবস্থা থাকে।

[4] মাধ্যমভিত্তিক: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান সঞ্চারণ মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে কী ভাষা ব্যবহৃত হবে, তার ভিত্তিতে বিদ্যালয়গুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। 

i. ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়: এইসব বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। 

ii. বাংলা মাধ্যম বা আঞ্চলিক ভাষা মাধ্যম: যেসব বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের জন্য বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয়, তাকে বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয় বলা হয়। আবার যেসব বিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজি বা বাংলা ভাষা ছাড়া অন্যান্য ভাষায় পঠনপাঠন করে, সেগুলি হল অন্যান্য ভাষার মাধ্যম বিদ্যালয়। যেমন—হিন্দি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি ইত্যাদি। 

[5] অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক: উপরিউক্ত বিদ্যালয়গুলি ছাড়াও আরও মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। যেমন— 

i. পাবলিক স্কুল: ইংল্যান্ডের পাবলিক স্কুলের অনুকরণে এই বিদ্যালয় গঠিত। এখানে জ্ঞানের বিকাশ ছাড়াও অন্যান্য গুণের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

ii. সরকার পরিচালিত বিদ্যালয়: এই সমস্ত বিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে সরকার দ্বারা পরিচালিত। আর্থিক দায়দায়িত্ব, প্রশাসনিক নিয়মকানুন ইত্যাদি সব সরকার নিয়ন্ত্রিত। 

iii. সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়: এক্ষেত্রে সরকার আর্থিক সাহায্য করলেও বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে না। এরজন্য আলাদা বিদ্যালয় পরিচালন সমিতি আছে। 

iv. বেসরকারি বিদ্যালয়: এই ধরনের বিদ্যালয়ে সরকার কোনাে আর্থিক সাহায্য করে না। ব্যয়ের জন্য আর্থিক সংস্থান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই করতে হয়। শিক্ষক নিয়ােগ এবং যাবতীয় প্রশাসনিক নিয়মকানুন কর্তৃপক্ষই স্থির করে।

v. ধর্মীয় সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়: বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্থাপিত এবং পরিচালিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থাও দেখা যায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment