সূচনা: খ্রিস্টীয় একাদশ শতক নাগাদ ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। প্রায় সকল দেশেই সামন্ততন্ত্রের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
ইউরােপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
[1] দূর্বল কেন্দ্রীয় শক্তি: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনাে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শক্তির অস্তিত্ব থাকত না। কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযােগে দেশের সর্বত্র অসংখ্য সামন্তপ্রভুই হয়ে উঠতে থাকে দেশের শক্তির সকল আধার। আঞ্চলিক প্রভুদের সেনা সরবরাহের ওপরই কেন্দ্রীয় শাসককে নির্ভর করতে হত।
[2] যোদ্ধাশ্রেণির অস্তিত্ব: সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়ােজনে প্রাণপাত করাই ছিল এই বীরত্বের আদর্শের মূল কথা। সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ‘নাইট বা বীর যোদ্ধা নামে একটি শক্তিশালী যােদ্ধা শ্রেণি অবস্থান করত। এই নাইট বা বীর যােদ্ধারা শিভালরির বীরত্বের আদর্শ মেনে চলত।
[3] অধীনস্থ কৃষক: ইতিহাসবিদ মার্ক ব্লখ মনে করেন যে, সামন্তপ্রভুর অধীনস্থ ও তার দ্বারা শােষিত কৃষক সম্প্রদায়েরর অস্তিত্ব সামন্ততন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন ধরনের কর, বেগার শ্রম প্রভৃতি আদায়ের মাধ্যমে সামন্তপ্রভু কৃষকের কাছ থেকে সম্পদ শােষণ করত।
[4] ম্যানর-ব্যবস্থা: সামন্ততন্ত্রে উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে গ্রামগুলিকে কেন্দ্র করে ম্যানর-ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। ম্যানরে প্রভু তার ম্যানর হাউসে অবস্থান করে কৃষকদের উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত রাখতেন এবং ভূমিদাস ও কৃষকদের শােষণ করতেন।
[5] অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা: ইতিহাসবিদ মরিস ডবের মতে, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষি প্রযুক্তি, শ্রম-বিভাজন প্রভৃতি সবই হত নিম্নমানের। ফলে জমির পরিমাণ ও কৃষকের সংখ্যার অনুপাতে উৎপাদন যথেষ্ট কম হত।
[6] কর ব্যবস্থা: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষক তার সামন্তপ্রভুকে বিভিন্ন ধরনের কর প্রদানে বাধ্য ছিল। প্রভু ভূমিকর, উৎপাদন কর, সম্পত্তিকর (টাইলে), গৃহকর, জলকর প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের কর প্রভু আদায় করতেন। প্রভুরা সাফ বা ভূমিদাসদের কাছ থেকে ‘হেরিয়ট’ বা উত্তরাধিকার কর আদায় করতেন।
[7] কৃষকদের শ্রেণিবিভাগ: মধ্যযুগের ইউরােপের সমাজে অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এযুগের কৃষিজীবীদের প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। এগুলি হল一
- স্বাধীন কৃষক: স্বাধীন কৃষকরা প্রভুকে বিভিন্ন ধরনের করদানের পরও প্রভুর জমিতে ও খামারে তাদের বিনা পারিশ্রমিকে সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময় বেগার শ্রম (করভি) দিতে হত।
- আধা-স্বাধীন কৃষক: আধা-স্বাধীন কৃষকরা প্রভুকে করদানের ক্ষেত্রে বা প্রভুর জমিতে বেগার শ্রম দেওয়ার বিষয়ে স্বাধীন কৃষকদের চেয়েও বেশি শােষিত ছিল।
- ভূমিদাস: সামন্তসমাজে ভূমিদাসরা ছিল সর্বাপেক্ষা শােষিত শ্রেণি। সামন্তপ্রভুর অধীনে অসংখ্য ভূমিদাস থাকত। ভূমিদাসরা সামন্তপ্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতাে ছিল। তারা প্রভুর দ্বারা চূড়ান্তভাবে নির্যাতিত ও শােষিত হত। তারা সারাবছর প্রভুর জমিতে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য ছিল।
উপসংহার: পণ্ডিত বােলাভিয়ের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমর্থন ও প্রশংসা করেছিলেন। এজন্য তাঁর মৃত্যুর (১৭২২ খ্রি.) পরবর্তী তিন শতক ধরে বােলভিয়ের বিভিন্নভাবে সমালােচিত ও নিন্দিত হয়েছেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।