উত্তর : 1857 খ্রিস্টাব্দের ভারতবর্ষে যে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল যা ইতিহাসে মহা বিদ্রোহ নামে পরিচিত সেই বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। অনেকের মতে এটা নিছক সিপাহী বিদ্রোহ, কারও মতে এটা সামন্ত বিদ্রোহ, কেউ বলেছেন জাতীয় সংগ্রাম। কেউবা একে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। নিম্নে আমরা এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো –
১. সিপাহী বিদ্রোহ : স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, চার্লস রেকস, ম্যাকেশন, জন হে প্রমুখের মতে এই বিদ্রোহ ছিল নিছকই সিপাহী বিদ্রোহ। কারণ – এই বিদ্রোহে যারা যোগদান করেছিলেন এবং বিদ্রোহের সূত্রপাত যারা করেছিলেন তাঁরা ছিলেন সিপাহী। কোন রাজনৈতিক সংগঠন, শিক্ষিত সম্প্রদায় এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেননি। রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে এই বিদ্রোহ ছিল একটি সামরিক অভ্যুত্থান মাত্র।
২. জাতীয় বিদ্রোহ : অধ্যাপক সুশোভন সরকার, হোমস, আলেকজান্ডার ডাফ, শশীভূষণ চৌধুরী প্রমুখের মতে এই বিদ্রোহ শুধুমাত্র সিপাহী বিদ্রোহ ছিল না। এটি ছিল একটি জাতীয় বিদ্রোহ। তাদের যুক্তি শুধুমাত্র সিপাহীরাই নয়, বিভিন্ন স্থানের অসামরিক ব্যক্তিবর্গরাও এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেছিলেন। শুধু তাই নয়, বিদ্রোহীরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে সম্রাট রূপে ঘোষণা করে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের পরিচয় দেন। তাই এই বিদ্রোহ একদিকে যেমন জাতীয় রূপ নিয়েছিল, অন্যদিকে এটা হয়ে উঠেছিল এক গণবিদ্রোহ।
৩. সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রজনীকান্ত দত্ত, পি সি যোশী প্রমুখের মতে এই বিদ্রোহ ছিল রক্ষণশীল সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভ্যুত্থান। কারণ – নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ, কুনওয়ার সিং প্রমূখ সামন্ত শ্রেণীর মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে এই বিদ্রোহ, “ক্ষয়িষ্ণু অভিজাততন্ত্র ও মৃতপ্রায় সামন্তদের মৃত্যুকালীন আর্তনাদ ।”
৪. ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ: দেশপ্রেমিক বিনায়ক দামোদর সাভারকর তার “ইন্ডিয়ান ওয়ার অফ ইনডিপেনডেন্স” গ্রন্থে মহাবিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে গণ্য করেছেন। কারণ তার মতে, ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে এবং নিজ নিজ রাজ্যে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ও সর্বোপরি ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহীরা বিদ্রোহ করেছিলেন। যদিও এই মতকে বহু ঐতিহাসিকরা অস্বীকার করেছেন।
৫. কৃষক বিদ্রোহ: ঐতিহাসিক খালদুনের মতে বিদ্রোহ ছিল কৃষক শ্রেণীর বিদ্রোহ। কারণ -অগণিত কৃষকেরা এই বিদ্রোহে মরণপণ সংগ্রাম চালিয়ে ছিল। সমকালীন অনেক ইংরেজ কর্মচারীও এই মতকে সমর্থন করেছেন।
৬. মুসলমান চক্রান্ত: কোন কোন ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহকে মুসলমান চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন। পাকিস্তানি ঐতিহাসিক আরএইচ কুরেশি, সৈয়দ মইনুল হক এই মতের সমর্থক। কারণ -তাদের মতে, মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অযোধ্যা বিহার উত্তরপ্রদেশে মুসলিম বিদ্রোহীদের অত্যধিক তৎপরতা এটাই প্রমাণ করে যে বিদ্রোহীরা পুনরায় মুসলিম রাজত্ব চেয়েছিল। যদিও এই মত কে সমর্থন করা যায় না। কারণ হিন্দু ও মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই বিদ্রোহে যোগদান করেছিল।
মূল্যায়ন : সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি কি ছিল তা এককথায় বলা বেশ কষ্টসাধ্য। এই বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে যেসব মত উঠে আসে তার প্রত্যেকটি সুনির্দিষ্ট যুক্তি আছে। আবার এইসবের পাল্টা যুক্তিও আছে। তাই এই বিদ্রোহ যে কি ছিল তা সম্পূর্ণভাবে এক কথায় বলা দুঃসাধ্য।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Thank you so much
Wow
Nice
Wow nice answer
Valo
Nice answer
Nice answer
Very good answer
So small Answer 😔 it is very easy to read
Thank you Sir so much 🙏🙏
Thank you Sir so much 🙏🙏