মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি ?—প্রসঙ্গ নির্দেশ করে ‘ছুটি’ শব্দটির ব্যঞ্জনার্থ বুঝিয়ে দাও ।

উত্তর : পড়াশোনার উন্নতি ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য পিতৃহারা ফটিককে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় নিয়ে আসেন। কিন্তু মামীর নিদারুন অত্যাচার ও অনাদরে ফটিকের জীবন দুঃসহ হয়ে ওঠে। গ্রাম্য মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা ফটিক যান্ত্রিক মমতাহীন কলকাতায় মামার বাড়ির পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না, ক্রমশ হাঁপিয়ে ওঠে। মামাকে তাই সে প্রায়ই বলত মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। মামা সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন কার্তিক মাসে পুজোর ছুটি হলেই নিয়ে যাবেন। স্নেহহীন বদ্ধ জীবন থেকে ছুটি নিয়ে গ্রাম্য সবুজের স্পন্দনে তার ভবঘুরে মন বারবার ফিরে যেতে চেয়েছে। ফটিকের উপরোক্ত প্রশ্নটির অবতারণা সে প্রসঙ্গেই। 

কলকাতার নীরস পরিবেশে মামীর নির্মম ব্যবহারে ব্যথিত ফটিক মায়ের কোলে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। স্কুলের ছুটি পড়ার অপেক্ষায় সে দিন গুনতে থাকে। ছুটির দিন আর আসে না। কার্তিক মাসে পুজোর ছুটি এখনও দেরি আছে। কিন্তু ফটিকের ছুটি চায়। লেখক সুকৌশলে ‘ছুটি’ কথাটি ব্যঙ্গার্থে প্রয়োগ করে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন। ‘ছুটি’ শব্দের অর্থ বন্ধনহীন মুক্তি। বদ্ধ প্রাণের মুক্তি, সমস্ত শাসন-বন্ধন থেকে মুক্তি, অনাবিল আনন্দলোকে প্রাণের মুক্তি। ফটিক পুজোর ছুটির জন্য ব্যাকুলভাবে অপেক্ষা করেছিল। তার আগেই চিরদিনের জন্য সমস্ত মায়ার বন্ধন থেকে ছুটি পেয়ে যায়। এ ছুটি বিদ্যালয়ের সাময়িক ছুটি নয়—নাগরিক জীবনের হৃদয়হীনতা থেকে ছুটি, স্কুলের মাস্টারমশাইদের ব্যঙ্গ আর নিপীড়নের হাত থেকে ছুটি, স্নেহহীন মামীর উপেক্ষা থেকে ছুটি—পৃথিবীর কাছ থেকে পাওয়া অনন্তকালের ছুটি। ফটিকের অকালমৃত্যুতে ‘ছুটি’ কথাটি যেন গভীর ব্যঞ্জনাবহ হয়ে ওঠে আলোচ্য গল্পে।

Read Also

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

‘ তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই ।—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

“ তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন । – কে, কার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কী?

‘বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন ।—বিধবার কাছে কে, কী প্রস্তাব করেছিলেন? তিনি তাতে সম্মত হয়েছিলেন কেন?

‘কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিম্বা আর-কাহারও মনে উদয় হয় নাই । — রচনার নামোল্লেখ-সহ উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। উক্তিটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও ।

এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী, মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল । — বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? উক্তিটির অর্থ লেখো

পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে — পূর্বের খেলাটি কী ছিল? এখনকার খেলাটিই-বা কী এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল ?

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!