মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা
ভূমিকা :
“মাতৃভাষা সে তাে মাতৃদুগ্ধ সমান,
সে ভাষায় শিক্ষালাভে ভরে ওঠে প্রাণ।”
একটি শিশুর জন্মের প্রথম লগ্নে মাতৃদুগ্ধই যেমন তার প্রধান খাদ্য, তেমনি শিশুর শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধসম। মাতৃভাষায় মনের ভাব যত সহজে প্রকাশ করা সম্ভব অন্য কোনাে ভাষায় তা সম্ভব নয়। জ্ঞানবিদ্যার চর্চায়ও মাতৃভাষার গুরুত্ব সর্বাধিক। যে-ভাষায় সহজেই সব কিছু বলা-কওয়া ও বােঝানাে যায়, সেই ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত। এইজন্যই শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সার্থক করতে হলে আমাদের বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষাটা মাতৃভাষার মাধ্যমে হওয়া দরকার। কারণ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান ও গ্রহণ সহজসাধ্য হয়। মাতৃভাষাই শিক্ষার উপযুক্ত মাধ্যম।
মাতৃভাষা সমস্যা : ভারত নানা ভাষার দেশ। তাই শুধু মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে বাস্তব অসুবিধা আছে। তাহলে একে অপরের সঙ্গে যােগসূত্র কীভাবে রক্ষিত হবে? ভারতে ১৫টি ভাষা সংবিধানে স্বীকৃতি পেলেও ভারতে ভাষার সংখ্যা ১৭৯ এবং উপভাষার সংখ্যা ৫৪৪। ভারতে এতগুলি ভাষা থাকার জন্য সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একটি ভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করার যথার্থ অসুবিধা আছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে না। এইজন্য অঞ্চলভেদে শিক্ষার ভাষামাধ্যম স্থির করা প্রয়ােজন। বিভিন্ন অঞ্চলের মাতৃভাষাই এই ক্ষেত্রে সমস্যা দূরীকরণের উপায় হতে পারে। জোর করে অন্য ভাষা চাপিয়ে দিলে সমস্যা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে।
শিক্ষার বাহন: ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের দাবি উঠেছে। এই দাবি ন্যায়সংগত। সম্ভব হলে প্রতিটি ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় বলে অন্তত প্রধান ভাষাগুলিকে শিক্ষার মাধ্যম করা প্রয়ােজন। তবে তাতেও সমস্যা মেটে না। ভারতের ভাষাগুলির চরিত্রগত বিভিন্নতা এত বেশি এবং অঞ্চলভেদে তাদের অবস্থান এত বিচিত্র যে, সর্বত্র একইসঙ্গে ওই ভাষাগুলিতে পঠনপাঠন সম্ভব নয়। তাই অঞ্চল ভিত্তিতে এক-একটি ভাষা প্রাধান্য পেয়েছে। ভারতে এখন অঞ্চল ভিত্তিতে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসংঘ শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম বলে ঘােষণা করে।
ইংরেজি ভাষা : আমাদের দেশে একমাত্র মাতৃভাষাই সর্বশিক্ষার উপযুক্ত বাহন হতে পারে না। বহু ভাষাভাষী দেশ হওয়ায় যােগাযােগ ও জ্ঞান-বিনিময়ের ভাষারূপে ইংরেজি ভাষার প্রয়ােজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন “দুই স্রোতের সাদা এবং কালাে রেখার বিভাগ থাকিবে বটে, কিন্তু তারা একসঙ্গে বহিয়া চলিবে। ইহাতে দেশের শিক্ষা যথার্থ বিস্তীর্ণ হইবে, গভীর হইবে, সত্য হইয়া উঠিবে।” এদিকে ভারতীয় ভাষাগুলির সঙ্গে যােগসূত্র রাখতে গেলে ‘হিন্দি ভাষা শেখা আমাদের পক্ষে একইরকম জরুরি। সুতরাং ভারতবর্ষের বাসিন্দা হিসেবে এবং সার্থক ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনটি ভাষার সূত্র আমাদের মেনে চলা দরকার। জাতীয় সংহতির প্রয়ােজনে এটি খুবই দরকার।
উপসংহার : Mass Education-এর জন্য অর্থাৎ সাধারণ শিক্ষার জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষাই যথেষ্ট। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষা, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা আছে। তা না-হলে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযােগিতার যুদ্ধে আমরা হেরে যাব। আমাদের দেশের উন্নতির পথ রুদ্ধ হবে। ভারত বিশ্বসভার আসন থেকে বঞ্চিত হবে।
আরো পড়ুন
লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
গ্রন্থাগার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
দূরদর্শনের সুফল ও কুফল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।