মিথ ও লিজেন্ড বলতে কি বোঝ | অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে

মিথ ও লিজেন্ড বলতে কি বোঝ | অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে

উত্তর:

মিথ: অতীতকে জানতে আমাদের সাহায্য করে যা কিছু তার মধ্যে মিথ বা উপকথা অন্যতম । বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনী বা ঘটনাকে আধার করে প্রজন্মজয়ী মিথ রচিত হয় । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন : ভারত, চীন, ব্যবিলন, মিশর সর্বত্র‌ই মিথের উপস্থিতি আছে ।

বলা যায় যে –“A myth is a traditioal story that explains the belief about the natural and human world. The main characters in myth are usually gods and supernatural heroes.”

হিন্দু মিথ যেমন- দেবী দুর্গার কাহিনী,বাইবেলের পৌরাণিক, গ্রিসের পৌরাণিক কাহিনি, যেমন- দেবরাজ জিউসের কাহিনি,রােমের পৌরাণিক কাহিনি, যেমন- রােমুলাসের জীবনকাহিনি ইত্যাদি মিথের উৎকৃষ্ট নিদর্শন ।

লিজেন্ড : কিংবদন্তি হল অতীতের কোনাে চরিত্রের এমন সব ঘটনার বিবরণ বা বীরগাথা যা অতীতে একসময় ঘটেছিল এবং সেসব চরিত্র জীবন্ত ছিল বলে লােকসমাজ বিশ্বাসও করে থাকে।

‘Legend’ কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘Legenda’ থেকে । অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন মানবসমাজে ইতিহাসবোধ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এই সকল কাহিনীগুলি গড়ে উঠতে শুরু করে ।

এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

[১] কিংবদন্তিগুলিতে বিস্ময় ও কল্পনার আধিক্য থাকে।

[২] এর অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অতিরঞ্জন করার প্রবণতা।

[৩] প্রতিটি কিংবদন্তিতে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে এবং সেই চরিত্র একসময় জীবন্ত ছিল বলে মনে করা হয়।

[৪] কিংবদন্তিতে ভিত্তিহীন ঘটনার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।

লিজেন্ড – এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ভারতবর্ষে মৌর্য সম্রাট অশোক, রানী পদ্মিনী, মীরাবাঈ, রানী দুর্গাবতী, শিবাজীকে কেন্দ্র করে অনেক লিজেন্ড প্রচলিত আছে ।

অতীত বিষয়ের রূপদানে মিথ ও লিজেন্ডের ভূমিকা :

প্রচলিত মিথ ও লিজেন্ডগুলি যে যে ভাবে মানুষের অতীত কৌতূহলকে সমৃদ্ধ করে, তা নিম্নরূপ—

(ক) ঐতিহাসিক উপাদানের সূত্র : মিথ ও লিজেন্ডগুলি অনেকাংশেই কল্পনানির্ভর হলেও এগুলি থেকে ঐতিহাসিক উপাদানের সূত্র পাওয়া যায় । প্রাচীন গ্রিসের মিথের সূত্র ধরেই বর্তমানকালের ট্রয় নগরী ও ট্রয়ের যুদ্ধ ক্ষেত্রের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।

আবার , ভারতে প্রচলিত মৌর্য সম্রাট অশোক , রানি দুর্গাবতী , মীরাবাই , ফ্রান্সের লুই নেপোলিয়ান সম্পর্কে প্রচলিত লিজেন্ডগুলি তাঁদেরকে যেমন জাতীয় বীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে , অন্যদিকে তেমনি এঁদের রাজত্বকাল সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রদান‌ও করে ।

(খ) সময়কাল ও বংশতালিকা নির্মাণ : অতীতকালের বিভিন্ন রাজবংশের বংশলতিকা বহু মিথ বা লিজেন্ডে পাওয়া যায়। এ ছাড়া উপকথা ও পৌরাণিক কাহিনি থেকে বিভিন্ন প্রাচীন রাজবংশের রাজাদের নাম ও শাসনকাল সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় ।

(গ) সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ : উপকথা ও পুরাকাহিনিগুলি কল্পনানির্ভর হলেও যে প্রেক্ষাপটে কাহিনিগুলি রচিত হয়েছে তার আলোচনা থেকে সমকালীন সমাজ , সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায় ।

উপসংহার : বলা যায় , মিথ ও লিজেন্ডগুলি কল্পকাহিনি নির্ভর হলেও প্রাচীন যুগের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । অতীতকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও সে বিষয়ে কোনো চিন্তা করার ক্ষেত্রেও এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

3 thoughts on “মিথ ও লিজেন্ড বলতে কি বোঝ | অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে”

Leave a Comment