১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনােভাব ছিল? অথবা মহাবিদ্রোহের বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মনােভাব কী ছিল? 4 Marks/Class 10
উত্তর:–
ভূমিকা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ বাংলার ব্যারাকপুরে শুরু হলেও তা শিক্ষিত বাঙালির সমর্থন লাভ করেনি বরং অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালি বিরূপ মনােভাব দেখিয়েছিলেন। যেমন, সমসাময়িক বাঙালি কিশােরীচাঁদ মিত্র, শম্ভুচরণ মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধাকান্ত দেব প্রমুখ এই বিদ্রোহের বিরােধিতা করেন। এর পশ্চাতে কারণগুলি হল—
১) অপরিহার্য ব্রিটিশ শাসন : ভারতে ঔপনিবেশিক প্রশাসন আইন ও বিচার বিভাগে কর্মরত এবং ব্রিটিশ শাসনে সুবিধাপ্রাপ্ত পাশ্চাত্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ ভারতের পক্ষে ব্রিটিশ শাসনকে কল্যাণকর বলে মনে করত। তাই তাঁরা ব্রিটিশ শাসনের অবসান চাননি।
২) বিদ্রোহীদের প্রতি সন্দেহ : মহাবিদ্রোহের বিদ্রোহীরা ইংরেজদের উৎখাত করে এদেশে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে কিনা এ বিষয়ে শিক্ষিত বাঙালিরা সন্দিহান ছিলেন।
৩) সামন্ততান্ত্রিক প্রবণতার বিরােধিতা : কলকাতার ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা যেমন রাজা রাধাকান্ত দেব, কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রমুখ কলকাতার সম্রান্ত ব্যক্তিরা কলকাতা হিন্দু মেট্রোপলিটান কলেজে সিপাহিদের বিদ্রোহের নিন্দা এবং ইংরেজ সরকারকে সর্বপ্রকার সাহায্যের প্রস্তাব গ্রহণ করেন (২৫ মে। ১৮৫৭ খ্রি.)। তাঁরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ, নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাই প্রমখ সামন্ততান্ত্রিক নেতা-নেত্রীর প্রতিও নিন্দায় সােচ্চার হন।
উপসংহার : অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের বিরােধিতা করলেও —
প্রথমত, হরিশচন্দ্র মুখােপাধ্যায় সহ খুব অল্পসংখ্যক বাঙালি সিপাহী বিদ্রোহের প্রতি সদয় ছিলেন।
দ্বিতীয়ত, সিপাহি বিদ্রোহের পরবর্তীকালে অবশ্য বাঙালীরা উপনিবেশ-বিরােধী আন্দোলনের সূচনা করেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।