মনােবিদগণ কীভাবে প্রেষণাকে ব্যাখ্যা করেছেন? প্রেষণা সম্পর্কিত ম্যাকলেল্যান্ড ও অ্যাটকিনসনের সাফল্যলাভের তত্ত্ব এবং ফ্রয়েডের মনােবিশ্লেষণ তত্ত্ব দুটি লেখাে।

মনােবিদগণ কীভাবে প্রেষণাকে ব্যাখ্যা করেছেন? প্রেষণা সম্পর্কিত ম্যাকলেল্যান্ড ও অ্যাটকিনসনের সাফল্যলাভের তত্ত্ব এবং ফ্রয়েডের মনােবিশ্লেষণ তত্ত্ব দুটি লেখাে। 2 + 6  Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

প্রেষণা সম্পর্কে মনােবিদদের ব্যাখ্যা : 

[1] চাহিদা ও আচরণ : এই পৃথিবীতে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। একটি চাহিদাপূরণের সাথে সাথে আর-একটি নতুন চাহিদার উন্মেষ ঘটে। এইসব চাহিদাপূরণের জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে থাকে। 

[2] আচরণ ও অভাববােধ: মানুষের প্রত্যেকটি আচরণের পিছনে কোনাে-না-কোনাে অভাববােধ থাকে। 

[3] অভাববােধ ও অস্বস্তি : প্রকৃতপক্ষে মানুষ যখন কোনাে কিছুর অভাব অনুভব করে, তখন তার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। এই অস্বস্তি দূর করার জন্যই মানুষ কাজ করে। 

[4] অভাববােধ ও আকাক্ষা : মানুষের প্রতিটি কাজের বা আচরণের পিছনে থাকে দুটি বিষয়—একটি হল অভাববােধ এবং অন্যটি হল লক্ষ্যপূরণের আকাঙ্ক্ষা। 

[5] প্রেষণা : চাহিদাপূরণের চেষ্টা, অর্থাৎ কাজ বা আচরণ কোনাে অভাববােধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং কোনাে উদ্দেশ্যসাধনের দিকে পরিচালিত হয়; মনােবিদগণ তাকে প্রেষণা (motivation) আখ্যা দিয়েছেন। প্রেষণার পিছনে যে অভাববােধ থাকে, তা চেতন কিংবা অবচেতন—দুই ধরনের হতে পারে। মানুষের অনেক জৈবিক ক্রিয়াই অবচেতন অভাববােধের তাড়নায় সম্পাদিত হয়। মনােবিদদের মতে, মানুষের সব ধরনের কাজই প্রেষণাপ্রণােদিত (motivated)। তবে কোনাে কোনাে কাজের প্রেষণা চেতন, আবার কোনাে কোনাে কাজের প্রেষণা অবচেতন। 

ম্যাকলেল্যান্ড এবং অ্যাটিকিনসনের সাফল্যলাভের তত্ত্ব : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ম্যাকলেল্যান্ড এবং তার সহযােগী অ্যাটকিন্সন-এর মতে প্রত্যেক ব্যক্তিই চায় বিভিন্ন কর্মে সফলতা অর্জন করতে। শিশু অবস্থা থেকেই সফলতা লাভের আকাঙ্ক্ষা বিকশিত হতে থাকে। এই আকাঙ্ক্ষা বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম হয়। তবে যেসব ব্যক্তির মধ্যে সফলতা লাভের আকাঙ্ক্ষা বেশি, তাদের সফল হওয়া সম্ভাবনাও বেশি। শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থাৎ, শিখনে সফলতা লাভের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করতে হলে শিখনের প্রতিটি স্তরে উপযুক্ত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করতে হবে l উপযুক্ত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করার জন্য দরকার সঠিক পাঠক্রম, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর পছন্দ ও চাহিদামতাে শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং উপযুক্ত শিক্ষাপদ্ধতি নির্ধারণ করা ইত্যাদি।

ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিফল হওয়ার আশঙ্কায় না ভােগে, তার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকার আচরণ ও কার্যপ্রণালীর স্পষ্টতা, স্বচ্ছতা, পক্ষপাতহীনতা, সহমর্মিতা ইত্যাদিও অপরিহার্য। 

ফ্রয়েডের মনােবিশ্লেষণ তত্ত্ব : বিশিষ্ট মনােবিদ ফ্রয়েডের মতে, ব্যক্তির মধ্যে সাধারণ জৈবিক শক্তি থেকে প্রেষণার সৃষ্টি হয়—এই সাধারণ জৈবিক শক্তি মানুষের মধ্যে দুটি ধারায় সক্রিয় হয়। একটি হল সৃজনাত্মক ধারা এবং অন্যটি হল ধবংসাত্মক ধারা | ফ্রয়েডের মতে, সৃজনাত্মক প্রবৃত্তিটি হল প্রাণশক্তি এবং ধবংসাত্মক প্রবৃত্তিটি হল মারণশক্তি। প্রেষণা বা আচরণের উৎস হল প্রাণশক্তি ও মারণশক্তির মধ্যে ভারসাম্যের অবস্থান। ব্যক্তির প্রেষণা সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে ফ্রয়েড ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মূলে থাকা তিনটি বিষয়ের মিথস্ক্রিয়াকে দায়ী করেছেন। এই তিনটি বিষয় হল—ইদম্ (Id), অহম্ (Ego) এবং অধিসত্তা (Super-ego) l

[1] মানুষের আদিম কামনা, বাসনা এবং প্রবৃত্তি নিয়ে ইদম্ গঠিত। এগুলি প্রত্যেক মানুষের অবচেতন মনে সক্রিয় থাকে। ইদম্ পুরােপুরি সুখভােগের নীতি দ্বারা পরিচালিত। 

[2] অহম্ বাস্তবতার নীতি দ্বারা পরিচালিত। অহম্ প্রকৃতপক্ষে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ও যুক্তিধমী ৷ অহম্ সর্বদা বাস্তবের অনুশাসন মেনে চলে | এটি ইদমের সকল দাবি পূরণ করে না।

[3] অধিসত্তা অহমের মধ্যে নীতিবােধ জাগ্রত করে ইদমের অসামাজিক আচরণগুলিকে প্রতিহত করে। মানুষের বিবেকের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করে অধিসত্তা। এটিই মনুষ্যত্বের ভিত্তি। ফ্রয়েডের মতে, ব্যক্তির প্রেষণা নিয়ন্ত্রিত হয় ইদম্, অহম ও অধিসত্তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment