মনােবিদরা কীভাবে মনােযােগকে সংজ্ঞায়িত করেছেন? মনােযােগের শ্রেণিবিভাগ করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
মনােযােগের সংজ্ঞা
বিভিন্ন মনােবিদ মনােযােগকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন
[1] উনিশ শতকের মাঝামাঝি ভুন্ড, টিচেনার প্রমুখ অবয়ববাদী মনােযােগকে কেন্দ্রীভুত চেতনা হিসেবে আখ্যা দেন।
[2] বিশ শতকের প্রথম ভাগে আচরণবাদী উডওয়ার্থ মনােযােগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, চেতন মনের নির্বাচন প্রক্রিয়া হল মনােযােগ। অনেকগুলি উদ্দীপকের মধ্যে থেকে কোনাে একটি বিশেষ উদ্দীপক বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে মনােযােগ বলে|
[3] রস-এর মতে, মনােযােগ একটি প্রক্রিয়া যা চিন্তার বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে মনের দরজায় এনে উপস্থিত করে।
[4] ম্যাকডুগালের মতে, যে মানসিক সক্রিয়তা জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তাকে মনােযােগ বলে।
[5] আর এন শর্মার মতে, মনােযােগ হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তিকে পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত বহু উদ্দীপকের মধ্য থেকে তার আগ্রহ ও
দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিশেষ উদ্দীপকটিকে নির্বাচন করতে বাধ্য করে।
মনােযােগের শ্রেণিবিভাগ
মনােবিদ রস মনােযােগকে দু-ভাগে ভাগ করেছেন—[1] ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগ এবং [2] ইচ্ছানিরপেক্ষ মনােযােগ।
[1] ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগ: যে মনােযােগের পিছনে ব্যক্তির ইচ্ছা ক্রিয়াশীল, তাকে ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগ বলে। যেমন—পড়াশােনার প্রতি আগ্রহ না থাকলেও শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পাঠের প্রতি মনােযােগী হয়।
এই ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা হয়। যে ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগের ক্ষেত্রে ব্যক্তি শুরুতে একবার মাত্র ইচ্ছা প্রয়ােগ করে এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে মনােযােগ স্বাভাবিকভাবেই চলে, তাকে গুপ্ত ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগ বলে। আবার যে ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগে বারবার ইচ্ছাকে প্রয়ােগ করা হয়, অন্যথায় মনােযােগ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাকে ব্যক্ত ইচ্ছাপ্রসূত মনােযােগ বলে।
[2] ইচ্ছানিরপেক্ষ মনােযােগ: উদ্দীপক বা পরিস্থিতির বৈশিষ্ট্য যখন আমাদের মনােযােগকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা যখন মূল্যহীন, তাকে ইচ্ছানিরপেক্ষ মনােযােগ বলে। যেমন— পড়ার সময় যদি বাইরে মাইকে কোনাে বক্তৃতা হয়, তখন আমাদের মনােযােগ সেখানে চলে যায়। অর্থাৎ বলা যায়, ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমরা সেটির প্রতি মনােযোগ দিতে বাধ্য হই।
এই ধরনের অর্থাৎ, ইচ্ছানিরপেক্ষ মনােযােগ যখন প্রবৃত্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে প্রবৃত্তি-প্রযুক্ত মনােযােগ বলে। যেমন—বিপদ দেখলে আমরা নিরাপত্তার তাগিদে নিরাপদ আশ্রয়স্থান সন্ধানের প্রতি মনােযােগী হই। আবার যখন আবেগ, অভ্যাস বা সেন্টিমেন্টের কারণে আমরা মনােযােগী হই, তখন তাকে স্বতঃস্ফূর্ত মনােযােগ বলা হয়। যেমন— মন দিয়ে পড়ার সময় বাইরের মাইকে যদি আমার প্রিয় গান বাজতে থাকে, তাহলে তার প্রতি আমরা মনােযােগী হই।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।