মনােবিজ্ঞানের একটি সামগ্রিক সংজ্ঞা দাও। মনােবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।
উত্তর :
মনােবিজ্ঞানের সামগ্রিক সংজ্ঞা :
‘মনােবিজ্ঞান হল জীবের আচরণ সম্পর্কিত বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান যা জীবের আচারআচরণের পরিপ্রেক্ষিতে মানসিক প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণ, শ্রেণিবিভাগ, গতিপ্রকৃতি, স্বরূপ, নিয়মনীতি, কারণ ও ফলাফল ইত্যাদি নির্ণয় ও ব্যাখ্যা করে এবং মানসিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নানান দেহগত প্রক্রিয়ার বর্ণনাদান করে।
মনােবিজ্ঞানের শাখা :
মনােবিজ্ঞানের প্রধান শাখাকে দুটি ভাগে। ভাগ করা হয়। যথা—বিশুদ্ধ মনােবিজ্ঞান এবং প্রয়ােগমূলক। মনােবিজ্ঞান। নীচে এই দুই বিভাগের বিভিন্ন শাখা প্রসঙ্গে। আলােচনা করা হল।
বিশুদ্ধ মনােবিজ্ঞানের শাখা :
বিশুদ্ধ মনােবিজ্ঞান, মনােবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বের গঠনগত দিক নিয়ে আলােচনা করে, এর গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলি হল
[1] সাধারণ মনােবিজ্ঞান : মনােবিজ্ঞানের এই শাখাটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আচরণ অনুশীলনের বিষয়ে মনােবিজ্ঞানের মৌলিক নিয়ম, নীতি এবং বিভিন্ন তত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করে।
[2] অস্বাভাবিক মনােবিজ্ঞান : মনােবিজ্ঞানের এই শাখাটি অস্বাভাবিক ব্যক্তির মনের কার্যকারিতা নিয়ে আলােচনা করে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মানসিক রােগ, রােগের উৎপত্তি, লক্ষণ চিকিৎসাপদ্ধতি ও আরােগ্য-সম্ভাবনা প্রভৃতি নিয়েও আলােচনা করে।
[3] সমাজ-মনােবিজ্ঞান : সমাজ-মনােবিজ্ঞানের আলােচনার বিষয়বস্তু হল সমাজের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগােষ্ঠীর মন। মনােবিজ্ঞানের এই শাখার মূল কাজ হল— ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্কের পেছনে সক্রিয় মনস্তাত্ত্বিক উপাদানগুলি পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে আলােচনা করা।
[4] পরীক্ষামূলক মনােবিজ্ঞান : মনােবিজ্ঞানের এই শাখার আলােচনার বিষয়বস্তু হল গবেষণাগারে বা কোনাে ধরনের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের আচরণ ও তার সমস্যা নিয়ে পরীক্ষামূলক স্তরে চর্চা বা অনুশীলন। করা। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য, বিশিষ্ট মনােবিজ্ঞানী ভুন্ড 1879 খ্রিস্টাব্দে জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মনােবিজ্ঞানের পরীক্ষণাগার স্থাপন করেন।
[5] শারীরবৃত্তীয় মনােবিজ্ঞান : মনােবিজ্ঞানের এই শাখার আলােচনার বিষয়বস্তু হল জীবের আচরণের জৈবিক ও শারীরবৃত্তীয় ভিত্তি নিয়ে পর্যালােচনা করা। এক্ষেত্রে মনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন অংশের, যেমন—নাৰ্ভতন্ত্র, জ্ঞানেন্দ্রিয় প্রভৃতির গঠন, কার্যপ্রণালী ইত্যাদিসম্পর্কিত আলােচনা করা হয়।
[6] বিকাশমূলক মনােবিজ্ঞান: মনােবিজ্ঞানের এই শাখার আলােচনার বিষয় হল শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা।
[7] শিশু মনােবিজ্ঞান : মনােবিজ্ঞানের এই শাখার মূল আলােচ্য বিষয় হল শিশু মন। শিশুর মন কেমনভাবে বিকশিত হয়, তার স্বরুপ, বুদ্ধি, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলিও শিশু মনােবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।
প্রয়ােগমূলক মনােবিজ্ঞানের শাখা :
বিশুদ্ধ মনােবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বকে প্রয়ােগ করার ক্ষেত্রে যে মনােবিজ্ঞান সহায়তা করে, তাই হল প্রয়ােগমূলক মনােবিজ্ঞান।
[1] শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান শিক্ষার্থীর প্রবৃত্তি, প্রক্ষোভ, আগ্রহ, মনােযােগ, বুদ্ধিবৃত্তি প্রভৃতির স্বরূপ ও তাদের শিক্ষাগত তাৎপর্য সম্পর্কে বিশেষভাবে আলােচনা করে। এককথায় শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান সাধারণ মনােবিজ্ঞানের সবধরনের পদ্ধতির প্রয়ােগ করে থাকে। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান প্রয়ােগমূলক মনােবিজ্ঞানের একটি প্রয়ােজনীয় শাখা।
[2] আরােগ্য সহায়ক মনােবিজ্ঞান : প্রয়ােগমূলক মনােবিজ্ঞানের এই শাখা শিশু নির্দেশনাগারে এবং মানসিক হাসপাতালে মনােরােগীদের রােগ নির্ণয় এবং তার সমাধানে। সহায়তা করে।
[3] শিল্প মনােবিজ্ঞান : শিল্প ক্ষেত্রে নিযুক্ত ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা, ক্লান্তি ও বিরক্তি থেকে শ্রমিকদের বা কর্মীদের মুক্ত করা, কর্মীদের প্রবণতা অনুযায়ী কাজে নিযুক্ত করা ইত্যাদি বিষয় পর্যালােচনা করার জন্য শিল্প-মনােবিজ্ঞান নামক প্রয়ােগমূলক শাখাটি গড়ে তােলা হয়েছে।
[4] সামরিক মনােবিজ্ঞান : সামরিক বিভাগের জন্য। সঠিক সৈন্য নির্বাচন করা, ব্যক্তির সক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তা অনুযায়ী তার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে মনােবিজ্ঞানের যে প্রয়ােগমূলক শাখাটি কাজ করে, সেটিই হল সামরিক মনােবিজ্ঞান।
[5] রাজনৈতিক মনােবিজ্ঞান : নেতৃত্বদানের জন্য ব্যক্তিকে প্রস্তুত করা, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা, নেতা নির্বাচন। করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে মনােবিজ্ঞানের এই প্রয়ােগমূলক শাখাটি কাজ করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।