মনােযােগ আকর্ষণের উপায় লেখাে । মনােযােগের কয়েকটি বিকর্ষক উল্লেখ করাে । শিক্ষায় মনােযােগের ভূমিকা লেখাে ।

মনােযােগ আকর্ষণের উপায় লেখাে। মনােযােগের কয়েকটি বিকর্ষক উল্লেখ করাে। শিক্ষায় মনােযােগের ভূমিকা লেখাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

মনােযােগ আকর্ষণের উপায় 

মনােযােগ আকর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলি হল—

[1] শান্ত পরিবেশ: কোলাহলমুক্ত শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যালয় স্থাপিত হলে পড়াশােনার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনােযােগ সহজে আকৃষ্ট হয়। 

[2] বিশ্রামের ব্যবস্থা: শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করার জন্য সময়সূচিতে মনােবিজ্ঞানসম্মতভাবে বিভিন্ন বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মাঝে মাঝে বিশ্রামের ব্যবস্থা করাও একান্তই বাঞ্ছনীয়। 

[3] শিক্ষাব্যবস্থার বৈচিত্র্যকরণ: পাঠক্রমকে কেবলমাত্র গ্রন্থকেন্দ্রিক করে বিচিত্র ও বহুমুখী করে তুলতে হবে। ক্রীড়া ও কর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের বিচিত্র বিষয়ে রুচি ও অনুরাগ তৈরি হয়। 

[4] দৃষ্টি ও শ্রুতিনির্ভর শিক্ষার ব্যবস্থা: শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বা অনুরাগকে ক্রিয়াশীল করতে হলে, পাঠদানকালে দৃষ্টিনির্ভর ও শ্রুতিনির্ভর। শিক্ষার উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও পাঠদানকালে মনােযােগের নির্ধারকগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। 

[5] জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা: দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় ঘটালে শিক্ষার্থীদের মনােযােগ বৃদ্ধি পাবে।

[6] উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্টতা: শিক্ষার উদ্দেশ্যকে শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।

মনোযােগের বিকর্ষক 

মনােযােগে বাধাপ্রদানকারী বিষয়গুলিকে মনােযােগের বিকর্ষক বলা হয় এখানে কয়েকটি বিকর্ষকের উল্লেখ করা হল –

[1] দুশ্চিন্তা, অহেতুক ভয় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মনােযােগ নষ্ট করে দেয়। 

[2] বাহ্যিক উদ্দীপক, যেমন—অতি জোর শব্দ, কানের কাছে অনেকক্ষণ ধরে ধ্বনিত হওয়া যে-কোনাে শব্দ মনােযােগের বিকর্ষক হিসাবে কাজ করে। 

[3] বিভিন্ন প্রকার অভাববােধ, চাহিদা, অতৃপ্ত বাসনা আমাদের মনোযোগে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

[4] বিভিন্ন প্রকার প্রতিকূল পরিবেশ, শারীরিক অসুস্থতা মনােযােগের বিকর্ষক হিসেবে কাজ করে। 

[5] পরিকল্পনার অভাব, শৃঙ্খলাহীন অবস্থা, ইচ্ছার অভাবও মনােযােগের বিকর্ষক হিসেবে কাজ করে। তাই, ছাত্রছাত্রীদের পাঠে মনােযােগী হওয়ার জন্য যতদূর সম্ভব অনুকূল পরিবেশ গঠন করতে হবে এবং বিকর্ষকগুলিকে দূর করতে হবে৷ ইচ্ছা বা প্রেষণাকে উদ্দীপিত করতে হবে। প্রতিটি কাজের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে এবং যথাসম্ভব শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশােনায় আরও মনােযােগী হতে পারবে। 

শিক্ষায় মনােযােগের ভূমিকা

শিক্ষার সঙ্গে মনােযােগের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ৷ শিখনের একটা বড়াে সমস্যা হল শিক্ষার্থীর মনােযােগ আকর্ষণ করা। এ ব্যাপারে মনােবিদরা কয়েকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন— 

[1] মনােযােগ আকর্ষণকারী কৌশল: ব্যক্তিজীবনে মনােযােগের রূপ এক থাকে না। শৈশবকালে ব্যক্তিনিরপেক্ষ মনােযােগের প্রাধান্য দেখা যায়। এই স্তরে বস্তুর বৈশিষ্ট্যই মনােযােগের নির্ধারক। চাহিদাকে কেন্দ্র করে শিশুর শিখনকে বিন্যস্ত করতে হবে। শিশুর চাহিদা হল খেলা। তাই শিশুর পাঠক্রম হবে ক্রীড়াভিত্তিক এবং শিখনপদ্ধতি হবে ক্রীড়াকেন্দ্রিক। 

[2] ইচ্ছাসাপেক্ষ কৌশল: পরবর্তী স্তরে ইচ্ছাসাপেক্ষে মনােযােগ দেখা যায়। এই সময় শিখনের উদ্দেশ্য ও ব্যাবহারিক প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করে, সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করে, উপদেশ দিয়ে, প্রয়ােজনে লঘু শাসন ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনােযােগ আকর্ষণ করতে হবে।

[3] পরিসর অনতিক্রম্য কৌশল: বিষয়বস্তু নির্বাচনে শিক্ষককে লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন শিক্ষার্থীর মনােযােগের পরিসর অতিক্রম না করে। প্রয়ােজন হলে বড়াে ও জটিল বাক্যকে ছােটো সরল বাক্যে পরিণত করতে হবে।

[4] নির্ধারক প্রয়ােগ কৌশল: মনােযােগের নির্ধারকগুলিকে প্রয়ােজনমতাে প্রয়ােগ করতে হবে। “তীব্রতা, স্পষ্টতা, নতুনত্ব, পুনরাবৃত্তি প্রভৃতি মনােযােগের বস্তুগত নির্ধারকগুলিকে শিখনীয় বিষয়গুলির সঙ্গে করতে হবে।

[5] বিষয়-বৈচিত্র্য প্রয়ােগ কৌশল: মনােযােগের পরিবর্তন-শীলতা ও চঞ্চলতা সম্পর্কে শিক্ষক সচেতন হবেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনাে কিছু দীর্ঘ সময় ধরে আলােচনা না করে, মাঝে মাঝে তিনি অন্য বিষয়ে চলে যাবেন।

পরিশেষে বলা যায়, মনােযােগ পঠনপাঠনের প্রথম ও প্রধান শর্ত। তাই শিক্ষার্থীদের মনােযােগ আকর্ষণে লিখিত ও অলিখিত সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে, যাতে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতি তাদের সুস্থ, স্বাভাবিক মনােযােগ সৃষ্টি হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!