মৃত্তিকা স্বাভাবিক উদ্ভিদ কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখাে।

মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখাে।  Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: ভারতে মৃত্তিকার উৎপত্তি, আদ্রর্তা ও শুষ্কতা, ক্ষয়, ভূমিধস ইত্যাদি বহুলাংশে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন— 

1. ল্যাটেরাইট ও লােহিত মাটির সৃষ্টি: মেঘালয়, ছােটোনাগপুর মালভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢাল প্রভৃতি অঞ্চলে অত্যধিক মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য ক্ষারকীয় উপাদানগুলি মাটির নীচের স্তরে চলে যায় এবং ওপরের স্তরে লােহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পড়ে থাকে। এর ফলে ওইসব অঞ্চলে ল্যাটেরাইট ও লােহিত মাটির সৃষ্টি হয়েছে। 

2. মরু বা সিরােজেম মাটির সৃষ্টি: অন্যদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল, গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড়ের উত্তরাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম (বার্ষিক 20-40 সেমি)। ফলে ওইসব অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়ার অভাবে খনিজ পদার্থগুলি মাটির ওপরের স্তরে সঞ্চিত হয়ে মরু মাটি বা সিরােজোম মাটি সৃষ্টি করে, যার মধ্যে বালির প্রাধান্য থাকে বেশি।

3. পলিমাটির সৃষ্টি: সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রম্মপুত্র উপত্যকার বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে প্রতি বছর নতুন পলি সঞ্চিত হয় বলে উর্বর পলি মাটি গঠিত হয়।

4. মত্তিকায় ফাটল সৃষ্টি: উত্তর-পশ্চিম ভারতের খরা প্রবণ অঞ্চলগুলিতে খরার সময় আর্দ্রতার প্রভাবে মাটিতে বড়াে বড়াে ফাটল সৃষ্টি হয়। 

5. মৃত্তিকার ক্ষয়: বেশি বৃষ্টিপাতের সময় মৃত্তিকার ক্ষয় বেশি হয়। 

স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমির বায়ুর প্রভাব: ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতি ও বণ্টন সম্পূর্ণভাবে মৌসুমি বৃষ্টিপাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন— 

1. চিরসবুজ বনভূমির সৃষ্টি: ভারতের যেসব অংশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যেমন পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে, আন্দামান-নিকোবরে গভীর চিরসবুজ বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে। 

2. পর্ণমােচী অরণ্য সৃষ্টি: মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ অংশে মাঝারি বৃষ্টি হয় এবং তা ঋতুকালীন বলে ওই সব অঞ্চলে পাতাঝরা  গাছের পর্ণমােচী অরণ্য তৈরি হয়েছে। 

3. কাটা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ সৃষ্টি: গুজরাত, রাজস্থানের স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল ও দক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগের শুষ্ক অঞ্চলে কাটা-জাতীয় ঝােপ ও গুল্ম-জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।

কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : ভারতের কৃষিকাজ প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন— 

1. খরিফ ফসল চাষ: বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার ওপর নির্ভর করেই ধান, পাট, আখ, তুলাে, ভুট্টা প্রভৃতি খরিফ ফসলের চাষ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য পূর্ব ভারতে ধান এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য মধ্য ও উত্তর পশ্চিম ভারতে গম, ডাল ও মিলেট জাতীয় শস্য বেশি চাষ হয়।

2. রবি ফসলের চাষ : মৌসুমি বৃষ্টির জল জলাধারগুলিতে সঞ্চিত করে সেচকার্যের মাধ্যমে উত্তর ভারতে ব্যাপকভাবে রবি ফসলের চাষ করা হয়। 

3. উৎপাদন হ্রাস: মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্য ভারতে খরা ও বন্যা নিত্যসঙ্গী। খরার বছরগুলিতে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট হ্রাস পায়। বন্যার সময়ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। 
4. উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি : তবে বন্যার মাধ্যমে উর্বর পলিমাটি সঞ্চিত হয় বলে পরবর্তী সময়ে সেখানে প্রচুর ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment