মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে কী কী সুপারিশ করে? “পরীক্ষা সংস্কার’ বিষয়ে কমিশন যেসব সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে, তা লেখাে। 4+ 4 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
মুদালিয়র কমিশনের মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক বিষয়ক সুপারিশ :
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক প্রসঙ্গেও মূল্যবান সুপারিশ দান করে। সুপারিশগুলি হল—
[1] পাঠ্যপুস্তক কমিটি গঠন: পাঠ্যপুস্তকের গুণগতমান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাঠ্যপুস্তক কমিটি গঠনের সুপারিশ করে। এই কমিটি একটি স্বাধীন সংস্থারূপে কাজ করবে। এই কমিটিতে সভ্য হিসেবে যারা যােগদান করতে পারবেন, তারা হলেন— i.রাজ্য সরকারের বিচার বিভাগীয় প্রতিনিধি, ii. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য, iii. আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, iv. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুইজন প্রধান শিক্ষক, v. দুইজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, vi. সরকারি শিক্ষা আধিকারিক।
[2] তহবিল গঠন ও আর্থিক সাহায্য দান: কমিশন পাঠ্যপুস্তক বিক্রয় থেকে একটি তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন। ওই তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিদান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ এবং অন্যান্য আর্থিক সাহায্য প্রদানের সুপারিশও করা হয়।
[3] পুস্তক নির্বাচন : কমিশনের প্রতিবেদনে এও বলা হয়, বিদ্যালয় কোনাে শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনাে বিষয়ে একটিমাত্র পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন করবে না | বরং একই মানের একাধিক পুস্তক নির্বাচন করবে।
[4] নিরপেক্ষতা বজায় রাখা : পাঠ্যপুস্তকগুলি কোনাে বিশেষ জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হবে না। এমনকি কোনাে সম্প্রদায়ের বিশ্বাসে আঘাত লাগতে পারে এমন তথ্য এগুলিতে পরিবেশিত হবে না৷ অর্থাৎ, পুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ রাখতে হবে।
[5] পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনের নীতি : কমিশন, বিদ্যালয় স্তরের কোনাে শ্রেণিতে বছর বছর বই পরিবর্তনের, পক্ষপাতী নয়। কমিশনের মতে কোনাে-একটি পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন করা হলে, তা ওই শ্রেণিতে কয়েক বছর পড়ানাে উচিত।
মুদালিয়র কমিশনের পরীক্ষা সংস্কার বিষয়ক সুপারিশ :
পরীক্ষা একটি প্রয়ােজনীয় ক্ষতিকারক প্রক্রিয়া | এটির বিকল্প এখনও পর্যন্ত সঠিকভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক পরীক্ষাব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে কতকগুলি মূল্যবান সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে। সেগুলি নীচে উল্লেখ করা হল —
[1] আধুনিক বিষয়াত্মক পরীক্ষা : মুদালিয়র কমিশন গতানুগতিক পরীক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক বিষয়াত্মক পরীক্ষাব্যবস্থার দ্বারা নির্ভরযােগ করে তােলার ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করে।
[2] সর্বাত্মক পরিচয়পত্র: কমিশন শুধু বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার পরিবর্তে তাদের বিদ্যালয় জীবনের সব ধরনের ঘটনাগুলি সর্বাত্মক পরিচয়পত্র বা কিউমুলেটিভ রেকর্ড কার্ড (Cumulative Record Card)-এ লিপিবদ্ধ করার সুপারিশ করে।
[3] অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা : শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা (যেমন—সাপ্তাহিক, মাসিক, পার্বিক ও ষান্মাষিক পরীক্ষা) এবং বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল, রেকর্ড ইত্যাদি সব ধরনের বিষয় বিবেচনার বিষয়ে সুপারিশ করে।
[4] বহিথ পরীক্ষা : মাধ্যমিক স্তরের শেষে কেবল একটি সাধারণ বহিস্থ পরীক্ষা (Public Examination) গ্রহণের সুপারিশ করে।
[5] গ্রেড প্রদান: মূল্যায়নের সময় নম্বরের’ বা সাংখ্যমানের পরিবর্তে ‘গ্রেড বা ‘আক্ষরিকমান’ প্রদানের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে।
[6] কম্পার্টমেন্টাল পরীক্ষা : সাধারণ বহিস্থ পরীক্ষায় একটি বা দুটি বিষয়ে যারা অকৃতকার্য হবে, তাদের জন্য কম্পার্টমেন্টাল পরীক্ষা প্রচলনের সুপারিশ করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।