মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলি তত্ত্ব এবং আদর্শগত দিক থেকে আকর্ষণীয় হলেও প্রয়ােগের দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ এইরূপ বলার কারণ সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 

মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলি তত্ত্ব এবং আদর্শগত দিক থেকে আকর্ষণীয় হলেও প্রয়ােগের দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ এইরূপ বলার কারণ সংক্ষেপে আলােচনা করাে।     Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশসমূহু আকর্ষনীয় কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ: স্বাধীনতা লাভের পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকাশিত মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন (1952-53) ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল। কমিশনের দৃষ্টিতে মাধ্যমিক শিক্ষা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষার্থীরা চরিত্রগঠন ও যথার্থ গুণবিকাশের সুযােগ পাবে| মাধ্যমিক স্তরে পাঠক্রমের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য অনুযায়ী বিকাশের সুযােগ দেওয়া হবে—এই উদ্দেশ্যে কমিশন বহুমুখী পাঠক্রমের সুপারিশ করেছিল।

তবে তত্ত্ব ও আদর্শগত দিক থেকে কমিশনের সুপারিশগুলি আকর্ষণীয় হলেও, প্রয়ােগের দিক থেকে এর জুটির পরিমাণও নিতান্ত কম নয়। ত্রুটিগুলি এখানে উল্লেখ করা হল— 

[1] পথনির্দেশের ত্রুটি: কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নির্দেশ করেছে। কিন্তু কীভাবে সেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব, তার পথ নির্দেশ করেনি। ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। 

[2] পরিকাঠামােগত ত্রুটি: কমিশন বহুমুখী পাঠক্রম প্রবর্তনের সুপারিশ করেছিল। এর জন্য প্রয়ােজন ছিল অধিক সংখ্যক বহুমুখী বিদ্যালয় স্থাপন। বাস্তব ক্ষেত্রে সমস্ত দশম শ্রেণির বিদ্যালয়কে পরিকাঠামাের অভাবে বহুমুখী বিদ্যালয়ে পরিবর্তিত করা সম্ভব হয়নি।

তা ছাড়া অধিকাংশ বহুমুখী বিদ্যালয়ে সাত ধরনের শিক্ষাপ্রবাহের মধ্যে কেবল কলা ও বিজ্ঞান শাখার ওপর পাঠদানের ব্যবস্থা হয়েছিল।

[3] ব্যক্তিবৈষম্যজনিত ত্রুটি : কমিশন ব্যক্তিবৈষম্যের নীতি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য, প্রবণতা এবং যােগ্যতার ভিত্তিতে বিষয় নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যক্তিবৈষম্য অনুসারে পরামর্শ ও পরিচালনার ব্যবস্থা অবলম্বন করা অধিকাংশ বিদ্যালয়েই সম্ভব হয়নি।

[4] অবৈজ্ঞানিক পাঠপ্রবাহ নির্বাচন: অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাতটি পাঠপ্রবাহ থেকে একটি নির্বাচনের জন্য কমিশন যে সুপারিশ করেছিল, তাও বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে এই বয়সের শিক্ষার্থীরা কখনও ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মপন্থা নির্বাচন করতে পারে না। এক্ষেত্রে তারা বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা বন্ধুবান্ধবের দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধ্য হয়।

[5] অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব: কমিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্দেশনা ও পরামর্শদানের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শদানের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

[6] মূল্যায়নে ত্রুটি: কমিশন পরীক্ষা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরােপ করার কথা বলেছে। কিন্তু এই সংস্কারের সঠিক নির্দেশ না থাকায় মাধ্যমিক স্তরের। মূল্যায়ন আজও পরীক্ষা-শাসনে জর্জরিত। আজও এই স্তরে অপচয় ও অনুত্তীর্ণতার অভিশাপ একইভাবে কাজ করে চলেছে।

ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ গুলির ফলশ্রুতি হিসেবে মাধ্যমিক স্তরে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আগামী দিনে আমাদের দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয় আশাআকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক হয়ে উঠবে। তাই এই কমিশনের সুপারিশগুলি পর্যালােচনা করে বলা যেতে পারে, মুদালিয়র কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশগুলি আমাদের দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সামনে নতুন জগতের দরজা খুলে দিয়েছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment