ম্যাসলাে তার প্রেষণাতত্ত্বে ব্যক্তির চাহিদাকে যে পিরামিড আকারে প্রকাশ করেছেন তা চিত্র-সহ বর্ণনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
ম্যাসলাের চাহিদার ক্রমপর্যায় তত্ত্ব :
ম্যাসলাে তার প্রেষণাতত্ত্বে ব্যক্তির চাহিদাকে একটি পিরামিড আকারে প্রকাশ করেছেন। সেই পিরামিডের বিভিন্ন স্তরগুলি হল নিম্নরূপ —
[1] এই পিরামিডের সর্বাপেক্ষা নীচের স্তরে রয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা বা শারীরবৃত্তীয় চাহিদা। শারীরবৃত্তীয় চাহিদার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল খাদ্য, জল, আশ্রয়, ক্ষুধা, তৃষা, নিদ্রা ইত্যাদি।
[2] পিরামিডে নীচ থেকে দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে নিরাপত্তার চাহিদা | এই চাহিদা শারীরিক এবং মানসিক—উভয় প্রকারের হয় ৷ সুরক্ষা, ভয় থেকে মুক্তি, উদবেগহীনতা, অস্তিত্ব ইত্যাদি নিরাপত্তার চাহিদার অন্তর্গত।
[3] পিরামিডে তৃতীয় স্তরে রয়েছে অন্তর্ভুক্তির চাহিদা। এই চাহিদার অন্তর্গত বিষয় হল ভালােবাসা, একাত্মতা সৌহার্দ্য ইত্যাদি।
[4] পিরামিডের চতুর্থ স্তরে রয়েছে আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা। এই চাহিদাটি ক্রমে সীমিত বস্তু থেকে বৃহত্তর লক্ষ্য অভিমুখী হয়। কৈশােরে এই চাহিদাটি সব থেকে বেশি শক্তিশালী হয়। এই চাহিদাটি ব্যক্তির মধ্যে আত্মনির্ভরতা এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি করে যা ব্যক্তিকে ভবিষ্যৎকালে সহায়তা করে।
[5] পিরামিডের পঞ্চম স্তরে রয়েছে জ্ঞানমূলক চাহিদা। এর অন্তর্গত বিষয় হল বােধগম্যতা, অনুসন্ধান ইত্যাদি।
[6] পিরামিডের ষষ্ঠ স্তরে রয়েছে সৌন্দর্য সম্ভোগের চাহিদা। এর অন্তর্গত বিষয়সমূহ হল বিন্যাস-সংগঠন।
[7] পিরামিডের সপ্তম তথা শেষ পর্যায়ে রয়েছে আত্মপ্রকাশের চাহিদা। ম্যাসলাের মতে, প্রত্যেক মানুষ চায় তার মধ্যে যে সমস্ত প্রবণতা, ক্ষমতা এবং সম্ভাবনা সুপ্তাবস্থায় রয়েছে তার বাস্তবায়ন৷ তবে এই চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় পূর্বে ব্যক্তির অপরাপর চাহিদাগুলি সঠিকভাবে পূরণ হওয়া প্রয়ােজন।

ম্যাসলাের প্রেষণা সম্পর্কিত চাহিদার ক্রমপর্যায় তত্বের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :
ম্যাসলাে তার তত্ত্বে যেসব চাহিদার কথা উল্লেখ করেছেন এবং সেইসব চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রেষণাগুলি কীভাবে সৃষ্ট, তা এখানে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল —
[1] অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা বা শারীরবৃত্তীয় চাহিদা: ম্যাসলাের মতে, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কতকগুলি চাহিদা পূরণের প্রয়ােজন হয়। ওই চাহিদাগুলিকে অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা বা শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বলা হয়। ওই চাহিদাগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল খাদ্য, জল, বায়ু, আলাে ইত্যাদি। এই চাহিদাগুলি শিশুর জন্মের সময় থেকেই তার মধ্যে থাকে। ওই চাহিদাগুলি পূরণ না হলে, পরবর্তী চাহিদাপূরণের জন্য প্রেষণা সৃষ্টি হয় না।
[2] নিরাপত্তার চাহিদা: ম্যাসলাের মতে, শারীরবৃত্তীয় চাহিদার মতাে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হল নিরাপত্তার চাহিদা। এই চাহিদার অন্তর্গত বিষয়গুলি হল সুরক্ষা, সংহতি, উদবেগহীনতা, ভয় থেকে মুক্তি, অস্তিত্ব ইত্যাদি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যদি কোনাে শিক্ষক বা শিক্ষিকা দেখলে ভীত হয় অথবা, শ্রেণিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের সহযােগিতা না করেন, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে।
এইসব কারণে শ্রেণিতে শিক্ষক-শিক্ষিকার সহযােগিতামূলক আচরণ। বিশেষভাবে প্রয়ােজন এবং সহপাঠীদের সহমর্মিতা ও সহযােগিতা বিশেষভাবে কাম্য।
[3] অন্তর্ভুক্তির চাহিদা : ভালােবাসা, একাত্মবােধ প্রভৃতি সামাজিক চাহিদাগুলি অন্তর্ভুক্তির চাহিদার মধ্যে পড়ে অন্তর্ভুক্তির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব প্রেষণা জাগ্রত হয়, সেগুলি ব্যক্তিকে সামাজিক আদর্শের নিরিখে আচরণ সম্পাদন করতে সহায়তা করে। বিদ্যালয়স্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তির চাহিদাপূরণের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
[4] আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা : ম্যাসলাের মতে, প্রত্যেক ব্যক্তি চায়, অন্যরা তাকে ব্যক্তি হিসেবে উপযুক্ত গুরুত্ব দিক। এই চাহিদাটি মূলত ব্যক্তির আত্মসচেতনতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে৷ এই চাহিদা থেকেই ব্যক্তির মধ্যে আত্মশ্রদ্ধার প্রেষণার উদ্ভব ঘটে। এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ব হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাতে তাদের নিজ নিজ যােগ্যতা এবং আত্মসম্মানবােধ সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণা গড়ে ওঠে, তার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা |
[5] আত্মপ্রকাশের চাহিদা: ম্যাসলাের মতে, জ্ঞানমূলক চাহিদা, সৌন্দর্য সম্ভোগের চাহিদাপূরণের পর ব্যক্তির মধ্যে সবশেষে যে চাহিদাটি পূরণের দরকার হয়, তা হল আত্মপ্রকাশের চাহিদা। এই চাহিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রেষণাকে আত্মপ্রকাশের প্রেষণা বলে | এই প্রেষণাটি শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই প্রেষণা দ্বারা সৃষ্ট কাজ শিক্ষার্থীকে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত চাহিদাপূরণে সহায়তা করে, অন্যদিকে তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়।
ম্যাসলাের প্রেষণা সম্পর্কিত চাহিদার ক্রমপর্যায় বিশ্লেষণ করে বলা যায়, নীচের স্তর থেকে শুরু করে শীর্ষস্তর পর্যন্ত কোনাে একটি চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা না হলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যাহত হবে। তাই শিক্ষকশিক্ষিকার কর্তব্য হবে শিক্ষার্থীর জন্য এমন শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তােলা, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ক্রমপর্যায়ভিত্তিক চাহিদা পূরণ হয় এবং পরপর প্রতিটি পর্যায়ের প্রেষণাগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।