নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো
অথবা, প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও
অথবা, বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার যে-কোনাে একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

উত্তর : 

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় – প্রাচীন ভারতের শিক্ষাকেন্দ্র : 

প্রাচীন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে নালন্দাই ছিল সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন। শুধু ভারত নয়, এশিয়া মহাদেশের মধ্যেও এটি ছিল শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র। সঠিক অর্থে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল একটি বৃহৎ আকৃতির বৌদ্ধ মঠ। নীচে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল —

[1] অবস্থান : বিহার রাজ্যের পাটনা শহরের রাজগীরের নিকটবর্তী বড়গাঁও নামক একটি স্থানে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল। 

[2] প্রতিষ্ঠাকাল: ঐতিহাসিকদের মতে আনুমানিক 300 খ্রিস্টাব্দে নাগার্জুন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। 

[3] নামকরণ : নালন্দা নামকরণ বিষয়ে মতভেদ লক্ষ করা যায়। ফা-হিয়েন নালন্দাকে ‘নাল’ নামে অভিহিত করেছেন, ইৎ সিং-এর মতে নাগানন্দ সরােবর থেকে নালন্দা নামের উৎপত্তি ঘটেছে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযােগ্য মত হল, ন + অলম + দ অর্থাৎ ‘অবিশ্রান্ত দাতা’–এই অর্থেই নালন্দা মহাবিহারের নামকরণ করা হয়েছে। 

[4] পরিকাঠামাে : প্রায় সাড়ে তিন বর্গমাইলজুড়ে এই মহাবিহারের অবস্থান ছিল। এর চারদিকে ছিল সুউচ্চ প্রাচীর। এখানে সাত-আটটি বৃহৎ হলঘর এবং প্রায় 300টি শ্রেণিকক্ষ ছিল বলে অনুমান করা হয়। এখানে এক হাজার অধ্যাপকের অধীনে প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী পঠনপাঠন করত। 

[5] আর্থিক সংস্থান : নালন্দার অধীনে প্রায় 200টি গ্রাম ছিল। সেখানকার রােজগার, সাধারণ ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের দান এবং রাজানুকূল্যে মহাবিহারের যাবতীয় খরচ চলত। 

[6] শিক্ষার্থীর ব্যয় : নালন্দা মহাবিহারে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোনাে প্রকার অর্থ বা বেতন গ্রহণ করা হত না। থাকাখাওয়া, এমনকি পােশাক-পরিচ্ছদও বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হত। 

[7] ছাত্র-ভরতি : নালন্দা মহাবিহারে কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব ধরনের শিক্ষার্থীকেই ভরতি নেওয়া হত। এখানে মূলত স্নাতকোত্তর বিশেষ স্তরের শিক্ষা দেওয়া হত। 

[8] পাঠক্রম : নালন্দা মহাবিহারের পাঠক্রমে ব্রাহ্মণ্য-বৌদ্ধ, ধর্মীয়-লৌকিক, দার্শনিক-ব্যাবহারিক, কলা-বিজ্ঞান প্রভৃতি সব ধরনের বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা ছিল। এ ছাড়া পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল চতুর্বেদ, বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আইন প্রভৃতি বিষয়। এগুলি ছাড়া শব্দবিদ্যা, পাণিনি, সাংখ্যতত্ত্ব, সংস্কৃত, ভাষাতত্ত্ব, জাদুবিদ্যা এবং 18টি কলাবিদ্যা পঠনপাঠনের ব্যবস্থা ছিল। 

[9] শিক্ষণ পদ্ধতি : নালন্দা মহাবিহারে মূলত আবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হত। এ ছাড়া বিতর্ক, আলােচনাচক্র প্রভৃতি মৌখিক উপায় অবলম্বন করা হত। সকল শিক্ষার্থীদের। উপাধিদানও করা হত। 

[10] গ্রন্থাগার : নালন্দা মহাবিহারে রত্নসাগর, রত্নদধি এবং রত্নরঞ্জক নামের তিনটি বিশাল গ্রন্থাগার ছিল।

[11] অধ্যাপকমণ্ডলী : শীলভদ্র, নাগার্জুন, ধর্মপাল, চন্দ্রপাল, গুণমতী প্রমুখ খ্যাতনামা অধ্যাপকগণ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। 

[12] নিয়মানুবর্তিতা : নালন্দা মহাবিহারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই কঠোরভাবে শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতে হত। নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট অনুসারেই দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করা হত। তাই নালন্দা মহাবিহারের দীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাসে বিশৃঙ্খলার কোনাে নজির নেই।

[13] খ্যাতির বিস্ততি : নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। চিন, তিব্বত, কোরিয়া, জাভা, সুমাত্রা, সিংহল, যবদ্বীপ প্রভৃতি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভের জন্য নালন্দা এসে জড়াে হত।

[14] ধ্বংসকাল : দ্বাদশ শতাব্দীতে (1193 খ্রিস্টাব্দে) মুসলিম সেনাপতি বখতিয়ার খলজির আক্রমণে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

5 thoughts on “নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো”

Leave a Comment