প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
ভূমিকা: রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় অন্যতম। তবে, শুধু কথাসাহিত্য অর্থাৎ উপন্যাস-ছোটোগল্পই নয়, নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ রচনাতেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে একজন রোমান্টিক লেখক হিসেবে পরিচিত। নিসর্গ প্রকৃতি, ইতিহাস এবং মানবিক সম্পর্ক তাঁর লেখনীতে প্রাধান্য পেয়েছে।
জন্ম ও শৈশব: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (প্রকৃত নাম তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বঙ্গদেশের দিনাজপুর জেলার বালিয়াডিঙিতে (বর্তমান বাংলাদেশে) তাঁর জন্ম হয়। তাঁদের আদি নিবাস ছিল বরিশাল জেলার বাসুদেবপুরের নামচিড়া গ্রাম। নারায়ণের পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় পুলিশের উচ্চপদে চাকরি করতেন বলে তাঁর ছেলেবেলা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাটে।
ছাত্রজীবন: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভরতি হলেও ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁকে শহর ছাড়তে হয়, কলেজের পরীক্ষাও দেওয়া হয় না। পরে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইনটারমিডিয়েট এবং সেখান থেকেই ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ডিস্টিংশন- সহ বিএ পাস করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন এবং ব্রত্নময়ী স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট ডিগ্রি (ডি ফিল) লাভ করেন ওখান থেকেই।
কর্মজীবন: জলপাইগুড়ি কলেজে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ, কলকাতার সিটি কলেজে ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং তারপর থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই আমৃত্যু অধ্যাপনা করেছেন তিনি।
সাহিত্যকীর্তি: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছাত্র-অবস্থা থেকেই সাহিত্য-রচনা শুরু করেন। সমালোচক এবং সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি হল-
উপন্যাস: উপনিবেশ (৩ খণ্ড, ১৯৪৪-১৯৪৭), সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী (১৯৪৪), মন্ত্রমুখর (১৯৪৫), মহানন্দা, স্বর্ণসীতা, নিশিযাপন, শিলালিপি, ট্রফি, লালমাটি, কৃষ্ণপক্ষ, বিদূষক, বৈতালিক, অসিধারা, ভাটিয়ালি, পদস্যার, অমাবস্যার গান, আলোকপর্ণা।
ছোটোগল্পগ্রন্থ: গল্পসংগ্রহ, সাপের মাথায় মণি, শ্রেষ্ঠ গল্প, স্বনির্বাচিত গল্প।
নাটক: আগন্তুক, পরের উপকার করিও না।
প্রবন্ধগ্রন্থ: সাহিত্য ও সাহিত্যিক, সাহিত্যে ছোটোগল্প, কথাকোবিদ রবীন্দ্রনাথ, ছোটোগল্পের সীমারেখা, বাংলা গল্প বিচিত্রা।
কলাম: সুনন্দর জার্নাল (‘সুনন্দ’ ছদ্মনাম সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় লেখা কলাম)।
শিশু-কিশোর সাহিত্য: চারমূর্তি, টেনিদা ও সিন্ধুঘোটক, ঝাউবাংলোর রহস্য, কম্বল নিরুদ্দেশ, চারমূর্তির অভিযান—প্রভৃতি রহস্য-রোমাঞপূর্ণ উপন্যাস লিখেছেন। এর পাশাপাশি তিনি লিখেছেন ভাড়াটে চাই, বারো ভূতে, ভীম বধ প্রভৃতি নাটকও। রামমোহনের জীবনী নিয়ে লিখেছেন- রামমোহন। এ ছাড়াও তিনি লিখেছেন শতাধিক শিশু-কিশোর উপযোগী ছোটোগল্প, লিখেছেন বেশ কিছু শিশুপাঠ্য কবিতাও।
সম্মান ও স্বীকৃতি: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার পান। বসুমতী পত্রিকার পক্ষ থেকে সংবাদ-সাহিত্যের প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁকে (১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ), আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক দেওয়া হয় মরণোত্তর সম্মান রূপে।
মৃত্যু: ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।