নারী বিপ্লববাদে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্তর ভূমিকা কী ছিল

উত্তর:
প্রথম অংশ : ভূমিকা : বাংলা তথা ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা শহিদ ছিলেন বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতা চট্টগ্রাম খাস্তগীর স্কুলে তার ছাত্রীজীবন শুরু করেন এবং এই সময়েই তার মনে বিপ্লবী চেতনার উদ্ভব ঘটে। তার শিক্ষিকাদের পাঠদান তার চেতনাকে প্রভাবিত করেছিল তার ভূমিকা হল নিম্নরূপ 

১) দীপালি সংঘের সদস্যা : তিনি ঢাকার নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ ও দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা লীলা নাগের সংস্পর্শে আসেন ও দীপালি সংঘের সদস্য হন।

২) বৈপ্লবিক কাজকর্মের দায়িত্ব : তিনি চট্টগ্রামের সূর্যসেনের সঙ্গে পরিচিত হন এবং মাস্টারদা তাকে কলকাতায় বৈপ্লবিক কাজকর্ম পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন।

3) পাহাড়তলি ক্লাব আক্রমণ : প্রীতিলতা বিপ্লবী কার্যক্রমে ব্যর্থ হলে সূর্যসেন দ্বিতীয়বারের জন্য পাহাড়তলির ইউরােপিয়ান ক্লাব আক্রমণের রণকৌশল নির্ধারণ করে দেন। এই অভিযানে প্রীতিলতাই নেতৃত্ব দেন। প্রীতিলতার অভিযানে (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ, সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিট) ছিলেন মােট ১৫ জন বিপ্লবী এবং তাদের আক্রমণে পাহাড়তলি ক্লাবে উপস্থিত ৪০ জন ইউরােপীয়র মধ্যে ১ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়। 

৪) আত্মত্যাগ : পুলিশের সাথে গুলি বিনিময়ে আহত প্রীতিলতা নিজের বন্দুক অপরের হাতে তুলে দিয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন ও আত্মত্যাগের নজির স্থাপন করেন।

দ্বিতীয় অংশ : বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে একজন বিখ্যাত নারী ছিলেন কল্পনা দত্ত (১৯১২-১৯৯৫ খ্রি.)। কল্পনা দত্তকে তার বিপ্লবী চেতনার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘অগ্নিকন্যা হিসেবে সম্ভাষিত করেন।

পরিচিতি : তিনি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই। চট্টগ্রামের অন্তর্গত শ্রীরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কল্পনার বাবা। বিনােদবিহারী সরকারি কর্মচারী হওয়ায় তার পরিবারে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কোনাে অনুকূল পরিবেশ ছিল না। তার পূর্বসূরী বিপ্লবীদের জীবনী, সমকালীন সাহিত্য তাকে বিপ্লবী মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে।

বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড : কল্পনা দত্ত যেভাবে বিপ্লবী আন্দোলনে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তা হল

১) কাগজপত্র ও অস্ত্রসংরক্ষণ : বেথুন কলেজে পড়ার সময়ে বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তার সূর্যসেনের সঙ্গে যােগাযােগ হয়। প্রথমে তিনি দলের কাগজপত্র ও অস্ত্র গােপনে রাখার দায়িত্ব পান।

২) ডিনামাইট ষড়যন্ত্র : কল্পনা দত্ত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও জালালাবাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক গণেশ ঘােষ ও অনন্ত সিংহকে ইংরেজ জেল থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব পান। তাকে মাটির তলায় রাখা ডিনামাইটের সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংযােগের দায়িত্ব দেওয়া হলেও পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কল্পনা ধরা পড়েন।

মূল্যায়ন : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জেল থেকে মুক্তি লাভ করে কল্পনা দত্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যােগদান করে ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এভাবে তিনি বৈপ্লবিক ও সাম্যবাদী আন্দোলনে হয়ে উঠেছিলেন অনন্য।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment