নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা কী? স্বাধীন ভারতে নারীশিক্ষা বিষয়ে রাধাকৃয়ণ কমিশন, মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে। 2 + 6 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা :
[1] শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য মানসিক উৎকর্ষসাধন। এই উৎকর্ষসাধরনের ক্ষেত্রে পুরুষসমাজের পাশাপাশি নারীসমাজের কথাও ব্যাপকভাবে চিন্তা করা দরকার। কেননা যে-কোনাে রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে সে দেশের নারীদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকে।
[2] নারীরা তাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলতে পারে, যারা পরবর্তীকালে দেশকে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সাহায় করে। শিক্ষাবর্জিত নারী কখনও শিশুকে চরিত্রবান করে গড়ে তুলতে পারে না।
[3] শিক্ষিতা নারী নিজের পরিবার ও সমাজকে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে উন্নত করে তুলতে পারে।
[4] নারীর শিক্ষাগুণে পরিবারের শান্তিশৃঙ্খলাও বজায় থাকে।
[5] নারী শিক্ষিত হলে জন্মহার কমাতে উদ্যোগী হবে। এর ফলে দেশের জনসংখ্যার চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
নারীশিক্ষা বিষয়ে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশ (1948-49) : স্বাধীনতার পর 1948 খ্রিস্টাব্দে ডক্টর সর্বপল্লি রাধাকৃষণের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন তথা রাধাকৃষ্ণণ কমিশন গঠিত হয়। ওই কমিশন নারীশিক্ষার বিষয়ে যে সুপারিশ করে, সেগুলি হল—
[1] সমাজে নাগরিক হিসেবে নারীরা যাতে উপযুক্ত মর্যাদা পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
[2] কো-এডুকেশন কলেজে অর্থাৎ যেখানে নারী-পুরুষ একসাথে পড়াশােনা করে সেখানে নারীদের জন্য সব ধরনের সুযােগসুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
[3] নারী ও পুরুষদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য বজায় রাখা হলেও নারীদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
[4] দেশের সর্বত্র নারীশিক্ষার সুযােগ বৃদ্ধি করতে হবে।
[5] পরিবার তথা সমাজকে তুলে ধরার জন্য নারীদের গার্হস্থ্য অর্থনীতি, পরিবার পরিচালনা বা গৃহবিজ্ঞান বিষয়ে পাঠগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
নারীশিক্ষা বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ (1952-53) : 1952 খ্রিস্টাব্দে ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়রের সভাপতিত্বে যে কমিশন গঠিত হয়, তা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়র কমিশন নামে পরিচিত। নারীশিক্ষা বিষয়ে ওই কমিশনের সুপারিশ হল—
[1] নারী-পুরুষের জন্য একই ধরনের পাঠক্রম নির্দিষ্ট হবে। তবে যেখানে মেয়েদের স্কুল অথবা সহশিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে, সেখানে মেয়েদের জন্য গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
[2] প্রয়ােজনবােধে রাজ্য সরকারকে নারীশিক্ষার বিকাশের জন্য পৃথক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
[3] নারীশিক্ষার পাঠক্রমে সংগীত, কলা ইত্যাদি বিষয়কে অনুমােদন করার সুপারিশ করা হয়।
[4] কো-এডুকেশন স্কুলে শিক্ষকদের সঙ্গে উপযুক্তসংখ্যক শিক্ষিকা নিয়ােগের ব্যবস্থা করতে হবে। ওইসব বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটিতে উপযুক্তসংখ্যক নারী প্রতিনিধি থাকবে।
নারীশিক্ষা বিষয়ে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ (1964-66) : 1964 খ্রিস্টাব্দে ডক্টর ডি এস কোঠারির সভাপতিত্বে যে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়, তা কোঠারি কমিশন বা ভারতীয় শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত। ওই কমিশন নারীশিক্ষার বিষয়ে যে সমস্ত সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে, সেগুলি হল—
[1] আগামী কয়েক বছর নারীশিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষাগত পার্থক্য যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।
[2] নারীশিক্ষার বিকাশে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নারীশিক্ষার জন্য আর্থিক সাহায্য দান করতে হবে।
[3] নারীশিক্ষার বিকাশের জন্য মেয়েদের স্কলারশিপ দিতে হবে এবং তাদের জন্য হােস্টেল নির্মাণ করতে হবে।
[4] স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে ‘মহিলা মহাবিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। অবশ্য স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পৃথক ব্যবস্থার দরকার নেই।
[5] নারীশিক্ষার বিষয়ে গবেষণার জন্য দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
[6] কেন্দ্রে এবং রাজ্যে মহিলাদের শিক্ষার ব্যাপারে তত্ত্বাবধান করার জন্য একটি সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। ওই সংগঠনের কাজ হবে নারীশিক্ষার পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।
[7] শিক্ষাগ্রহণের পর মহিলারা যাতে চাকুরির সুযােগ পায়, তারজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
[8] নারীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
[9] মহিলারা যাতে বাড়ির কাজকর্ম সেরে আংশিক সময়ের চাকুরি পায়, তারজন্য সুযােগ বৃদ্ধি করতে হবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।