নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলি কী তা উল্লেখ করাে। Class 12 | Philosophy ( নিরপেক্ষ ন্যায় ) ৮ Marks
উত্তর:-
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মসমূহ
নিরপেক্ষ ন্যায় যাতে যথাযথভাবে সম্পন্ন হতে পারে, তার জন্য তর্কবিদগণ কতকগুলি নিয়মের উল্লেখ করেছেন। এই সমস্ত নিয়মগুলিকেই বলা হয় ন্যায় অনুমানের সাধারণ নিয়ম (general rules of categorical syllogism)।
নিয়মগলির সংখ্যা হল দশাত এবং সেকারণেই এগলিকে বলা হয় ন্যায়। অনুমানের দশটি বিধি বা নিয়ম (ten rules of syllogism)। এই সমস্ত নিয়মগলিকে যথাযথভাবে মেনে চললে ন্যায়-অনুমান বৈধ বা যথার্থ রূপে গণ্য হয়। আর এগুলিকে অনুসরণ করে না চললে ন্যায় অনুমান দোষযুক্ত বা অবৈধ। (fallacious) রূপে গণ্য হয়। নিরপেক্ষ ন্যায়ের এই সমস্ত নিয়মগুলি হল ।
প্রথম নিয়ম: প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ ন্যায় অনুমানে কেবলমাত্র তিনটি বচনই একবে। এই তিনটি বচনের বেশি বা কম বচন থাকবে না। এই তিনটি বচনের বেশি বা কম বচন থাকলে তা দোষযুক্তরূপে গণ্য হবে।
দ্বিতীয় নিয়ম; প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ ন্যায়ে কেবলমাত্র তিনটি পদই থাকবে। তনটি পদের বেশি বা কম থাকবে না। এই তিনটি পদের বেশি বা কম পদ থাকলে তা দোষযুক্তরূপে গণ্য হবে।
তৃতীয় নিয়ম: হেতুপদকে যুক্তিবাক্য দুটির মধ্যে অন্তত একবার ব্যাপ্য হতেই হবে। ন্যায় অনুমানে হেতুপদের প্রয়ােগ হল দুবার। এই দুবারের মধ্যে একবারও যদি তা ব্যাপ্য না হয়, তাহলে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে।
চতুর্থ নিয়ম: যে পদ যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য নয় সে পদ কখনােই সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য। হতে পারে না। নিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তে পক্ষপদের এবং সাধ্যপদের উপস্থিতি থাকে। এই দুটি পদ যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে যদি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তবে তা দোষযুক্ত হয়।
পঞম নিয়ম: দুটি যুক্তিবাক্য যদি নঞর্থক হয়, তবে তা থেকে কোনাে সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ, দুটি নঞর্থক বা নাবাচক যুক্তিবাক্য থেকে যদি কোনাে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে।
ষষ্ঠ নিয়ম : দুটি যুক্তবাক্যের একটি যদি নঞর্থক বা না-বাচক হয় তাহলে সিদ্ধান্তটিও নঞর্থক বা না-বাচক হবে। অর্থাৎ, দুটি যুক্তিবাক্যের একটি নঞর্থক বা নাবাচক হলে সিদ্ধান্তটি কখনােই সদর্থক বা হঁ্যাবাচক রূপে গণ্য হতে পারে না।
সপ্তম নিয়ম: দুটি যুক্তিবাক্যই যদি সদর্থক বা হা-বাচক হয় তাহলে সিদ্ধান্তটিও অবশ্যই সদর্থক বা হা-বাচক হবে। অর্থাৎ নিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি যদি সদর্থক বা হ্যাবাচক হয়, তাহলে যুক্তিবাক্য দুটিই সদর্থক বা হঁ্যাবাচক হতে বাধ্য।
অষ্টম নিয়ম: দুটি যুক্তিবাক্যই যদি বিশেষ হয় তাহলে তা থেকে কোনাে সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ, কোনাে বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ের দুটি যুক্তিবাক্য-ই বিশেষরূপে গণ্য হতে পারে না।
নবম নিয়ম : দুটি যুক্তিবাক্যের একটি যদি বিশেষ বচন হয় তাহলে সিদ্ধান্তটিও বিশেষ বচন হতে বাধ্য। অর্থাৎ, নিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি যদি বিশেষ হয় তাহলে দুটি যুক্তিবাক্যের একটি অবশ্যই বিশেষ বচন হতে হবে।
দশম নিয়ম; প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি বিশেষ বচন এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক বা না-বাচক হয় তাহলে তা থেকে কোনাে সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ বিশেষ সাধ্যবাক্য এবং নর্থক পক্ষবাক্য। কখনােই কোনাে বৈধ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলির প্রকৃতি
নরপেক্ষ ন্যায়ের যে দশটি সাধারণ নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলির। প্রকৃতি বা স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নিয়মগুলিকে মােটামুটিভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-[i] গঠনগত নিয়ম [2] বৈধতা সম্পর্কিত নয়ম এবং [3] অনুসিদ্ধান্তমূলক নিয়ম | দশটি নিয়মের মধ্যে প্রথম দুটিকে
নগত নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তৃতীয় থেকে সপ্তম নিয়ম পর্যন্ত। নয়মগুলিকে বলা হয় অনুমান সংক্রান্ত বা বৈধতাসংক্রান্ত নিয়ম| আর অষ্টম থেকে দশম—এই শেষের তিনটি নিয়মকে অনুসিদ্ধান্তগত নিয়মরূপে উল্লেখ করা হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।