কোঠারি কমিশনের মতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য | প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ

কোঠারি কমিশনের মতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য | প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ
অথবা, কোঠারি কমিশনের মতে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য কী? ওই উদ্দেশ্যগুলি কীভাবে পূরণ করা যায়? 4 + 4 

উত্তর:

কোঠারি কমিশনের মতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য :

1964–1966 খ্রিস্টাব্দে গঠিত কোঠারি কমিশন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার যে উদ্দেশ্যগুলির কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলি হল— 

দৌলত সিং কোঠারি

[1] সু-অভ্যাস গঠন : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর সু-অভ্যাস গড়ে তােলা। কারণ শিশু অবস্থায় সু-অভ্যাস গড়ে উঠলে তা ভবিষ্যৎ জীবনে ব্যক্তির ওপর প্রভাব ফেলে। 

[2] সামাজিক গুণের বিকাশে সহায়তা : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের শিক্ষার অন্য একটি উদ্দেশ্য হল তাদের মধ্যে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে সমাজে টিকে থাকার উপযােগী সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তােলা। 

[3] প্রাক্ষোভিক পরিণয়নে সহায়তাদান : শৈশবে শিশু তার রাগ, ভয়, হিংসা প্রভৃতি আবেগকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়েই শিশুদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষণদান করতে হবে যেন, তারা নিজেদের আবেগ বা প্রক্ষোভকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 

[4] ভাষার বিকাশে সহায়তা করা : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের মধ্যে দ্রুত ভাষার বিকাশ ঘটে। তাই এই পর্যায়ে শিশু যাতে নতুন নতুন শব্দ শিখতে পারে এবং বাক্য গঠন করতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে তাদের ভাষার বিকাশে সহায়তা করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। 

[5] সৌন্দর্যবােধ ও শৃঙ্খলাবােধের বিকাশে সহায়তা করা : প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার অন্য উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে সৌন্দর্যবােধ এবং শৃঙ্খলাবােধের বিকাশে সহায়তা করা। সৌন্দর্যবােধ শিশুর মননে এবং শৃঙ্খলাবােধ শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য খুবই প্রয়ােজনীয়।

[6] আত্মপ্রকাশ ও দৈহিক বিকাশে সহায়তাদান করা : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর স্বাধীন চিন্তা ও সৃজনাত্মক কাজের মাধ্যমে তার আত্মপ্রকাশের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এ ছাড়া এই পর্যায়ে শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের দৈহিক বিকাশে সহায়তা করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ :

কোঠারি কমিশন উল্লিখিত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এই পর্যায়ের পাঠক্রমে যেসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা সংক্ষেপে আলােচনা করা হল —

[1] অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনমূলক কার্যাবলি : প্রাকপ্রাথমিক পর্যায়ের পাঠক্রমে শিশুর শারীরিক বিকাশের প্রতি নজর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনমূলক কার্যাবলি তথা—খেলাধুলা, ব্যায়াম, বাগান তৈরি, নাচ ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

[2] সুস্বাথ্যাভ্যাস গঠনমূলক কার্যাবলি : শিশুদের মধ্যে সুস্বাস্থ্যাভ্যাস গড়ে তােলার উদ্দেশ্যে পাঠক্রমের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রতিবার খাবার পর মুখ ধােয়া ও দাঁত মাজা, যথাস্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা, নিজেদের পােশাক-পরিচ্ছদ যাতে নােংরা না-হয় তার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 

[3] নান্দনিক বিকাশমূলক ও সৃজনাত্মক কার্যাবলি : শিশুদের মধ্যে নান্দনিক বিকাশ ঘটানাের উদ্দেশ্যে এবং তাদের সৃজনাত্মক প্রবণতার উপযুক্ত চর্চার জন্য পাঠক্রমে অঙ্কন, মাটির কাজ, কাগজের কাজ, বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি, ছবি সংগ্রহ ইত্যাদিকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

[4] প্রকৃতি পরিচয়মূলক কার্যাবলি : প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে শিশুর সংযােগসাধন বা মেলবন্ধনের উদ্দেশ্যে গাছপালা, পশুপাখি, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, আকাশ মাটি ইত্যাদি বিষয়গুলির পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

[5] ভাষাবােধ গঠনে সহায়ক কার্যাবলি : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের মধ্যে ভাষাবােধের বিকাশ ত্বরান্বিত করার জন্য অক্ষর পরিচয়, তা লিখতে এবং পড়তে শেখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিশু অবস্থা থেকেই গল্প বলা, গল্প শােনা এবং অভিনয় করার অভ্যাস গড়ে তােলা হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment