ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি কাকে বলে | ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে কার্ল মার্কস ও মন ওয়েবারের বক্তব্য উল্লেখ কর

ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি কাকে বলে | ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে কার্ল মার্কস ও মন ওয়েবারের বক্তব্য উল্লেখ কর Class 12 | Sociology (ভারতে সমাজতত্ত্ব) 8 Marks

উত্তর:

ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি কোন সমাজের সামাজিক বিষয়াদির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে সংশ্লিষ্ট উপাদানের অতীত উৎস সন্ধান করে থাকে। সমাজের কাঠামাে, বিবর্তন, ইতিবৃত্ত প্রভৃতি যা সমাজবৃত্তকে সম্পূর্ণ করে তা সবই এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আলােচিত হয়।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির মূল উপাদানগুলি হল—সামাজিক শ্রেণী, স্বনির্ভর গ্রাম্য অর্থনীতি, গ্রামভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, ব্রিটিশ পূর্ববর্তী ভারতীয় সমাজ, কৃষক বিদ্রোহ, জাতব্যবস্থা প্রভৃতি।

সামাজিক বিজ্ঞান সমূহকে যে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় তা হল : (১) বিশ্বজনীন বিমূর্ত বিধিপ্রদায়ী (nomothetic) বিজ্ঞান এবং (২) ভাবলেশমূলক (ideographic) বিজ্ঞান। প্রথম ভাগের সামাজিক বিজ্ঞান সাধারণীকরণে সক্রিয়। দ্বিতীয় ভাগের সামাজিক বিজ্ঞান বিশিষ্ট ও পুনরাবৃত্তির অতীত ঘটনাবলী নিয়ে আলােচনা করে। এইদিক থেকে বিচার করলে সমাজতত্ত্বকে “nomothetic” বা বিশ্বজনীন বিধি প্রদায়ী বিজ্ঞান এবং ইতিহাসকে “ideographic” বা অনন্য ও বিশিষ্ট ঘটনাবলীর আলােচনা হিসাবে বিবেচনা করা যায়। আধুনিককালে সমাজতাত্ত্বিকরা ইতিহাসের পরিসংখ্যান ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। অনুরূপভাবে ঐতিহাসিকরা নিজেদের বিষয়বস্তুর আলােচনায় সমাজতাত্ত্বিকদের দ্বারা উদ্ভাবিত তথ্য-পরিসংখ্যান সমূহ ব্যবহার করছেন। | সমাজকে একটি গতিশীল জীবসত্তা হিসাবে প্রতিপন্ন করার প্রয়াসে সমাজবিজ্ঞানীরা সহায়ক বিষয় হিসাবে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্য নেন। কারণ সমাজতত্ত্বের কাঠামাে ও কার্যাবলী প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে ও রূপান্তরিত হচ্ছে। বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী কার্ল মার্কস মানবসমাজ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের জন্য দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক পদ্ধতি প্রয়ােগ করেছেন। সমাজের বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে তিনি প্রয়ােগ করেছিলেন এই দার্শনিক উপায়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সমাজের পরিবর্তনশীল বিবর্তন ও উন্নয়নের মূল কারণ হল সমাজের বস্তুবাদী কাঠামাে। মার্কস একে ইতিহাসে প্রয়ােগ করেছেন এবং সমাজ বিকাশের দ্বন্দ্বমূলক বিন্যাসক্ৰম বা আনুপূর্বিক পারম্পর্য নির্ধারণ করেছেন। সমাজের ক্রমবিকাশের এই অনুক্রম বা আনুপূর্বিকতা হল : আদিম সাম্যবাদী সমাজ- দাস সমাজ-সামন্ততান্ত্রিক সমাজ-পূজিবাদী সমাজ-সমাজতান্ত্রিক সমাজ। সুতরাং সমাজের উন্নয়নের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ একটি সমাজতাত্ত্বিক হাতিয়ারে পরিণত হয়।

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এবং তাঁর অনেক অনুগামীর সমাজতাত্ত্বিক ক্রিয়াকর্ম বা রচনায় আর এক ধরনের ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি সমকালীন মার্কসীয় বক্তব্যের বিরােধিতা করেছেন। ওয়েবার বলেছেন : “The so-called materialist conception of history, as a formula for the causal explanation of historical reality, has to be rejected.” ওয়েবার পুঁজিবাদের উদ্ভব, আধুনিক আমলাতন্ত্রের বিকাশ, এবং বিশ্বের ধর্মসমূহের আর্থনীতিক প্রভাব সম্পর্কে আলােচনা করেছেন, যার মধ্যে তার নিজস্ব ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট সমাজ ও পরিস্থিতিতে তার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে বিস্তারিত ঐতিহাসিক আলােচনা অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সমস্ত আলােচনা-অনুশীলনের পদ্ধতিগত মূল বৈশিষ্ট্য হল যে, সমাজের একার এবং সামাজিক কাঠামাের নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পরিবর্তনসমূহ তদন্ত করা হয় এবং বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রেক্ষিতে অন্যান্য সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এইভাবে সামাজিক ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত হয় কারণমূলক ব্যাখ্যা এবং ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ওয়েবারের বিখ্যাত গ্রন্থ “Protestant Ethic and the spirit of capitalism” বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এই গ্রন্থে তিনি ইউরােপে পুঁজিবাদের বিকাশের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন, যার মধ্যে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।

ঐতিহাসিক তথ্য-পরিসংখ্যানের উৎস:

ঐতিহাসিক তথ্যাদির সুত্র হিসাবে সাধারণত তিনটি মূল বিষয়ের কথা বলা হয় : (ক) ঐতিহাসিকের এক্তিয়ারভুক্ত নথিপত্র ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক উৎসস্থল; (খ) সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং ব্যাখ্যামূলক ইতিহাসের উপাদানসমূহ এবং (গ) প্রামাণিক পর্যবেক্ষক ও সাক্ষীর ব্যক্তিগত সূত্রসমূহ।

ঐতিহাসিক তথ্য-পরিসংখ্যানের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। ইতিহাস প্রণয়নের প্রাক্কালে প্রাপ্ত সময় ও ক্ষেত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিকরা যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করতে পারেন না। আবার অসচেতনভাবে ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব এবং সুপ্ত ব্যাখ্যাসমূহ প্রায়শই ঢুকে পড়ে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment