অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধাগুলি কী?

অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধাগুলি কী? Class 12 | Philosophy (মিলের পরিক্ষণমূলক পদ্ধতি) 8 Marks

উত্তর:-

অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধা

কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধাগুলি নিম্নরূপ। 

[1] পর্যবেক্ষণযােগ্যতার সুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত একটি পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি। সেজন্য দাবি করা যায় যে, এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের সুবিধাগুলিও বর্তমান। অবশ্য এই পদ্ধতিকে পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি বলা হলেও, পরীক্ষণের সাহায্যও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। তবে ব্যাপকভাবে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রয়ােগের জন্য আমরা ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণের ওপরই নির্ভর করি। আরও বলা যায়, যে সমস্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষাকে প্রয়ােগ করা সম্ভব নয়, সেই সমস্ত ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিটিকে প্রয়ােগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, বন্যা, মহামারি, ভূমিকম্প, গ্রহণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করতে গেলে, একমাত্র নির্ভরযােগ্য পদ্ধতিই হল অন্বয়ী পদ্ধতি। 

[2] ব্যাপক প্রয়ােগক্ষেত্রের সুবিধা: পরীক্ষণের তুলনায় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির পরিধি অনেক বেশি বলে এই পদ্ধতির প্রয়ােগক্ষেত্রও অত্যন্ত ব্যাপক। অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়ােগের ফলে আমরা একদিকে যেমন কারণ থেকে কার্যে পৌঁছােতে পারি, তেমনই আবার কার্য থেকে কারণেও পৌঁছােতে পারি। এ ছাড়াও বলা যায় যে, কোনাে ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতিগুলি যেখানে একেবারেই অচল, সেক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের একমাত্র নির্ভরশীল পদ্ধতি হল অন্বয়ী পদ্ধতি৷ এই অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়ােগ করেই আমরা একদিকে যেমন অ্যানােফিলিস মশার কামড়কে ম্যালেরিয়ার কারণ বলতে পারি, তেমনি আবার ম্যালেরিয়াকে অ্যানােফিলিস মশার কামড়ের কার্যরূপেও অভিহিত করতে পারি। এভাবেই অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়ােগক্ষেত্রটি যে অত্যন্ত ব্যাপক, তা বলা যায়। 

[3] বলিষ্ঠ প্রকল্প গঠনের সুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতি কারণ সম্পর্কে বলিষ্ঠ প্রকল্প (hypothesis) গঠন করতে সাহায্য করে এবং কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারের পথটিকে অত্যন্ত প্রশস্ত করে। অনেক সময় আমরা পরপর দুটি ঘটনা একসঙ্গে ঘটলেই তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে বলে মনে করি | কিন্তু দুটি ঘটনা পরপর একসঙ্গে ঘটলেই তাদের মধ্যে যে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে, এমন দাবি নিশ্চিতভাবে করা যায় না। একমাত্র অন্বয়ী পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়ােগের ফলেই পরপর ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা না করা গেলেও, একটি বলিষ্ঠ প্রকল্প অবশ্যই গঠন করা যায়। 

[4] সহজসরল পদ্ধতির সুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়ােগ পদ্ধতিটি হল অত্যন্ত সহজ ও সরল। অন্যান্য পদ্ধতির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দৃষ্টান্তগুলিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে সংগ্রহ করতে হয়। কারণ সংগৃহীত দৃষ্টান্তগুলি যদি ভুল ও হয়, তবে কার্যকারণ সম্পর্কের বিষয়টিও ভুল হয়। কিন্তু অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তগুলিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে সংগ্রহ না করলেও চলে। যদি এক্ষেত্রে অপ্রয়ােজনীয় দৃষ্টান্ত এসে যায়, তাহলে তাকে অপসারণের মাধ্যমে অতি সহজেই বর্জন করা যেতে পারে। অর্থাৎ, অন্যান্য পদ্ধতিগুলির তুলনায় অন্বয়ী পদ্ধতি অবশ্যই সহজ ও সরলরূপে গণ্য। 

[5] আবিষ্কারের পদ্ধতি হিসেবে সুবিধা: তর্কবিদ মিল (Mill) অন্বয়ী পদ্ধতিকে একটি আবিষ্কারের পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করেছেন, প্রমাণের পদ্ধতি হিসেবে নয়। স্বাভাবিকভাবেই এই পদ্ধতি কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রমাণ করতে না পারলেও, অবান্তর বিষয় বা ঘটনাগুলিকে অপসারণ করে একটি সম্ভাব্য কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে সাহায্য করে। 

[6] বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে সাহায্যকারী: বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে সাহায্যকারী হিসেবে অস্থায়ী পদ্ধতির যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তা অস্বীকার করা যায় না। কারণ এরকম পদ্ধতিটি প্রয়ােগ করে আমরা অপ্রয়ােজনীয় বিষয় বা ঘটনাগুলিকে অপসারণ করতে পারি। এর ফলে বৈজ্ঞানিক আলােচনার পথটি আরও সহজ ও মসৃণ হয়ে ওঠে। কারণ বৈজ্ঞানিক আলােচনা অত্যন্ত সহজেই প্রকল্প গঠন করে, তাকে যাচাই করতে পারে এবং কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment