অনুন্নত শ্রেণি বলতে কাদের বােঝানাে হয়? অনুন্নত শ্রেণির উন্নতিকল্পে ধেবর-এর সভাপতিত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ কী ছিল?

অনুন্নত শ্রেণি বলতে কাদের বােঝানাে হয়? অনুন্নত শ্রেণির উন্নতিকল্পে ধেবর-এর সভাপতিত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ কী ছিল? 3 + 5     Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

অনুন্নত শ্রেণি :  সমাজে যে সম্প্রদায়ের মানুষেরা সব ধরনের সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত প্রভৃতি সকল দিক থেকেই পিছিয়ে থাকে, তাদের অনুন্নত শ্রেণি বা অনগ্রসর শ্রেণি বলা হয়। এই শ্রেণির মানুষদের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল—চিরাচরিত সামাজিক রীতিনীতি, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, অন্ধ-আনুগত্য, রক্ষণশীলতা, প্রভৃতি। এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা সাধারণত পরিবর্তনবিরােধী। এরা এদের নিজস্ব কথ্যভাষা, আচারআচরণ, ধর্ম-সংস্কৃতির মধ্যেই নিজেদের আবদ্ধ রাখে | স্বাধীনতার পূর্বে ইংরেজ শাসিত ভারতে এদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ ও ভয়াবহ।

বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার, বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়ে এই সম্প্রদায়ের মানুষজন সমাজের মূলস্রোত থেকে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতার পরে এদের তালিকা প্রস্তুত করে, এদের উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হয়। বর্তমানে অনুন্নত শ্রেণি বলতে দুর্বল শ্রেণির প্রধান তিনটি বিভাগকে বােঝানাে হয়। এগুলি হল—তপশিলি উপজাতি, তপশিলি জাতি এবং অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণি। 

ধেবর-এর সভাপতিত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ : ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে জাতিগত বৈষম্য ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। দেখা গেছে, তপশিলি উপজাতি (ST) এবং তপশিলি (SC) সম্প্রদায়ের শিক্ষার হার সাধারণ শ্রেণির (General cast) তুলনায় অনেক কম। আবার, তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষার হার তপশিলি জাতির তুলনায় অনেক কম। কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, আর্থিক অবস্থা, চাকুরি, সংস্কৃতি-চেতনা, বিজ্ঞানমনস্কতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুন্নত শ্রেণির মানুষেরা আজও সমাজে পিছিয়ে রয়েছে। এর ফলে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা, সম্মান ও অধিকার লাভ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এইসব মানুষদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করে, তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে বের (UN Dhebar)-এর সভাপতিত্বে যে কমিটি গঠিত হয়, সেই কমিটির সুপারিশগুলি এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল। 

[1] আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন: তপশিলি জাতি এবং উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে ‘আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

[2] মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান: তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তপশিলি জাতি ও উপজাতিগুলির ভাষায় দক্ষ শিক্ষকরাই ওই বিদ্যালয়ে পাঠ দান করবেন।

[3] মাতৃভাষা থেকে আঞ্চলিক ভাষার উত্তরণ: আশ্রম বিদ্যালয়ে শিশুদের প্রথম দুবছর মাতৃভাষায় পাঠদানের পর তৃতীয় বছর থেকে আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ দান করতে হবে। 

[4] শিক্ষক নিয়ােগ: প্রত্যন্ত অঞ্চলে তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষের মধ্য থেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ােগ করতে হবে। 

[5] পাঠ্যপুস্তক রচনা: তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়গুলির ভাষাতে পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে। 

[6] ছাত্রবৃত্তি: তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য ছাত্রবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া তাদের পরিবারবর্গকেও আর্থিক অনুদান দিতে হবে, তারা যাতে তাদের সন্তানদের পঠনপাঠনে আগ্রহী হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

[7] শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ভাতা প্রদান : উপজাতি অধ্যুষিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ প্রশিক্ষণদানের পাশাপাশি উপযুক্ত ভাতা ও আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ 

[8] বিশেষ পরিবেশ গঠন : উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য গঠিত বিদ্যালয়ে তাদের জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিবেশ রচনা করতে হবে৷ 

[9] কর্মে নিয়ােগের উপযােগী শিক্ষাদান: তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত যুবক-যুবতি যাতে পরবর্তীকালে সুষ্ঠুভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেদিকে নজর দিয়ে তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment