জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে উল্লিখিত ‘অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব’, ‘অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড এবং নবােদয়। বিদ্যালয় সম্পর্কে আলােচনা করাে। অথবা, অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড ও নবােদয় বিদ্যালয় সম্পর্কে পর্যালােচনা করাে। Class 12 | Education | 8 Marks
উত্তর:-
অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব, অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড এবং নবােদয় বিদ্যালয় প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতি
ভারতবর্ষের শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে যে বিষয়গুলি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব, অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড এবং নবােদয় বিদ্যালয় বা পেসসেটিং স্কুলানীচে এগুলি সম্পর্কে আলােচনা করা হল।
অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব :
1976 খ্রিস্টাব্দে 42-তম সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে শিক্ষাকে যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ৷ 1986। খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ‘অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব’ বলতে বােঝায় যুগ্ম তালিকায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা কী হবে তার ব্যাখ্যা। জাতীয় শিক্ষানীতিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য, জাতীয় শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলিকে সুদৃঢ় করার জন্য, শিক্ষার গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটানাের জন্য, জনগণের মধ্যে জাতীয় সংহতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এবং মানবসম্পদের যথাযথ বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব সম্পর্কে অর্থাৎ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে কী দায়িত্ব পালন করবে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট অভিমত ব্যক্ত করা হল অংশীদারি ধারণার মূল বক্তব্য।
রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার পারস্পরিক সহযােগিতার ভিত্তিতে যদি অগ্রসর না হয়, তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্রটি ব্যাহত হবে। দেশের অগ্রগতিও পদে পদে বিঘ্নিত হবে।
অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড :
জাতীয় শিক্ষানীতি 1986-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড কর্মপ্রকল্প প্রণয়ন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির দৈন্যদশা দূর করার জন্য এবং সাক্ষরতা প্রসারের কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এখানে ব্ল্যাকবাের্ড’ শব্দটিকে প্রতীক হিসেবে ধরা হয়েছে। ব্ল্যাকবাের্ড’ শব্দটির দ্বারা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাসহায়ক সবরকম উপাদানকে বােঝানাে হয়।
[1] অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড কর্মসূচি গ্রহণের কারণ : সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে এমন অনেক বিদ্যালয় আছে যেখানে ঘর নেই, শিক্ষাদানের জন্য।
উপযুক্ত শিক্ষাসহায়ক অসহায়ক উপকরণ নেই প্রয়ােজনীয় শিক্ষক নেই গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলি শিশুদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে, অধিকাংশ ‘। বিদ্যালয়ে শৌচাগার নেই, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। এইসব কারণে ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসে না। এইসব সমস্যাগুলির কথা মাথায় অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
২। কােন ব্ল্যাকবাের্ড প্রকল্পের কর্মসূচি: অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় তা হল
i. শ্রমিক বিদ্যালয়ে অন্তত দুখানা বড়াে বড়াে ঘর থাকবে, যেগুলি সব ঋতুতেই ব্যবহার করা যাবে।
ii. প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য খেলাভিত্তিক শিক্ষানীতি অনুসরণ করতে হবে।
iii. মানচিত্র, চার্ট, ব্ল্যাকবাের্ড ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় শিক্ষাসহায়ক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে।
iv. অন্তত দুজন শিক্ষক প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে নিযুক্ত হবেন যাঁদের মধ্যে একজন হবেন মহিলা, অন্যজন হবেন পুরুষ৷ ক্রমণ প্রতিটি শ্রেণিতে একজন করে শিক্ষক নিয়ােগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
v. প্রতিটি বিদ্যালয়ে পানীয় জল এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড কর্মসূচির উদ্দেশ্য কেবল বিদ্যালয়গুলিতে ব্ল্যাকবাের্ড বা শিক্ষাসহায়ক উপকরণ সরবরাহ নয়, বরং দেশের বিদ্যালয়গুলির মান উন্নয়ন করে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করা এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা।
নবােদয় বিদ্যালয় :
জাতীয় শিক্ষানীতি 1986-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল নবােদয় বিদ্যালয় (Nabodaya Vidyalaya) বা মডেল স্কুল (Model School) প্রতিষ্ঠা করা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল সামাজিক ন্যায় ও সমতাসহ উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এর জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করে তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানাের যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল, সমৃদ্ধ পাঠক্রম ও উন্নত পাঠদানের কার্যকারিতা প্রদর্শন করা| প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের প্রতিভার বিকাশের জন্য সমস্তরকম সুযােগসুবিধার ব্যবস্থা করাই হল এই বিদ্যালয়ের লক্ষ্য। ভারতের প্রত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি করে নবােদয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনায় ভারতে মােট 432টি জেলায় একটি করে মডেল স্কুল বানবােদয় বিদ্যালয় স্থাপন করার কথা বলা হয়। আরও বলা হয়, এই ধরনের বিদ্যালয়ে 300 জনের বেশি ছাত্র থাকবে না। একটি মডেল বিদ্যালয় স্থাপনে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ হয়।
নবােদয় বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল —
i. নবােদয় বিদ্যালয়গুলি আবাসিক, অবৈতনিক ও সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান। এগুলিতে বিনামূল্যে হােস্টেলে থাকার ব্যবস্থা আছে।
ii. গ্রামাঞ্চল থেকে আসা শিশু এবং বালিকাদের জন্য এখানে 75 শতাংশ। আসন, তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য যথাক্রমে শতকরা 15 এবং 7.5 শতাংশ আসন সংরক্ষিত।
iii. জেলাভিত্তিক জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ভরতি নেওয়া হয়। NCERT এই বিদ্যালয়গুলির প্রশ্ন তৈরি করে এবং সারা দেশে পরীক্ষা পরিচালনা করে।
iv. প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এই বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে একটি আঞ্চলিক ভাষা, হিন্দি এবং ইংরেজি—মােট তিনটি ভাষা শিখতে হয়।
v. এখানে নবম শ্রেণি থেকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি বা হিন্দিকে গ্রহণ করতে হয়।
vi. এই বিদ্যালয়ে সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কাজের মূল্যায়ন করা হয়।
vii. এই ধরনের বিদ্যালয়ে সর্বভারতীয় ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়ােগ করা হয়।
vii. এই ধরনের বিদ্যালয়ে কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে।
ix. এই বিদ্যালয়গুলি কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ডের দ্বারা (CBSE) | পরিচালিত হয়।
x. এই বিদ্যালয়গুলির পাঠক্রম রচনার দায়িত্বে NCERT থাকে।
xi. এখানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশােনার ব্যবস্থা আছে। নবােদয় বিদ্যালয়কে প্রত্যেক জেলার কাছে আদর্শ বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তােলা হয়েছে। অন্যান্য বিদ্যালয়ের কাছে এগুলি পথপ্রদর্শকস্বরূপ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Verry nice